<p>ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থানের নাম পিলখানা। পিলখানা শব্দের অর্থ হাতির আস্তাবল। ইতিহাসবিদ শরীফ উদ্দিন আহমেদ তাঁর ‘ঢাকা : ইতিহাস ও নগরজীবন (১৮৪০-১৯২১)’ বইয়ে পিলখানা সম্পর্কে ধারণা দেন। তাঁর ভাষ্য মতে, মোগল ও ব্রিটিশ আমলে ‘খেদা’ নামে ঢাকার প্রশাসনের একটি বিশেষ বিভাগ ছিল। এর কাজ ছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বন্য হাতি এনে পোষ মানানো ও প্রশিক্ষণ দেওয়া। হাতি ধরার প্রধান কৌশল ছিল পোষা হস্তিনীকে দিয়ে বন্য হাতিকে খেদিয়ে নিয়ে আসা। পুরুষ হাতিগুলোকে খেদিয়ে যে জায়গায় এনে রাখা হতো, সেটিই পিলখানা নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। ১৮৭০ সালে পিলখানায় হাতি পোষ মানানোর একটি ছবি পাওয়া যায় আরেক ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুনের লেখা ‘ঢাকা : স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী’ বইয়ে। এই হাতিগুলো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের যাতায়াতের বাহন কিংবা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আগমনে প্যারেড ও নানা ধরনের খেলাধুলায় ব্যবহার করা হতো।</p> <p>ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে হাতিগুলোকে রমনা অঞ্চলে চরানোর জন্য নেওয়া হতো; কিন্তু হাতি চলাচলের কারণে রাস্তাঘাটের ক্ষতি ও উপদ্রব সৃষ্টি হতো। জনগণের এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৬৪ সালে মিউনিসিপ্যালিটি প্রতিষ্ঠার পর কর্তৃপক্ষ ঢাকার উত্তরাঞ্চলের প্রান্তিক এলাকা দিয়ে রমনায় যাওয়ার জন্য একটি আলাদা রাস্তা তৈরি করে। নিউ মার্কেট থেকে রমনা পর্যন্ত সেই এলিফ্যান্ট রোড আজও বিদ্যমান।</p> <p>১৯০৯ সালে ব্রিটিশ সরকার এই পিলখানায় মিলিটারি পুলিশের জন্য ব্যারাক নির্মাণ করে। পাকিস্তান আমলে জায়গাটি ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের (সীমান্তরক্ষী) সদর দপ্তর হয়ে ওঠে। বর্তমানে এটি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) প্রধান কার্যালয়। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআরের একটি গ্রুপ বিদ্রোহ করে এখানেই বিডিআরের মহাপরিচালক শাকিল আহমেদসহ ৫৬ জন সেনা কর্মকর্তা ও ১৭ জন বেসামরিক লোককে হত্যা করে। এই বিদ্রোহের পরই সংস্থাটির নাম বিজিবি করা হয়।</p>