<p>ভঙ্গুর প্রকৃতির এক ধরনের অর্ধধাতু বা উপধাতু হলো আর্সেনিক। প্রকৃৎতিতে এটি যৌগ আকারে দেখা যায়, যা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়; বরং বিভিন্নভাবে কল্যাণকর। যখনই এর মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়, তখনই তা মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে ওঠে।</p> <p>মানুষের সৃষ্টি ও প্রাকৃতিক উভয় কারণে আর্সেনিকের মাত্রা বাড়তে পারে। মানব সৃষ্ট কারণগুলোর মধ্যে—পানিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার, কীটনাশক, বর্জ্য পদার্থ অবক্ষেপণ অন্যতম। আর প্রাকৃতিক কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি—মাটির নিচে আর্সেনিকের খনি। এ খনিজ পদার্থ ভূগর্ভের পানির স্তরের সংস্পর্শে এলে পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা বেড়ে যায়।</p> <p>বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পানিতে আর্সেনিকের সহনীয় মাত্রা প্রতি লিটারে দশমিক শূন্য পাঁচ মিলিগ্রাম। এর বেশি মাত্রার আর্সেনিক মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।</p> <p>বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশে ভূগর্ভস্থ পানিতে উচ্চমাত্রার আর্সেনিক শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ জনসংখ্যার হিসাবে বাংলাদেশ সর্বাধিক দূষণের ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।</p> <p>বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তর ১৯৯৩ সালে নবাবগঞ্জ সদর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) উপজেলার বড়ঘরিয়া মৌজায় কয়েকটি কূপে পরীক্ষা চালিয়ে সর্বপ্রথম ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি লক্ষ করে। বর্তমানে দেশের দক্ষিণ ভাগে আর্সেনিকের উপস্থিতি অনেক বেশি। </p> <p>সাধারণত যেসব নলকূপের পানিতে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি আর্সেনিক পাওয়া যায়, বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ সেসব নলকূপের মুখে লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করে এবং এর পানি পানের অযোগ্য বলে ঘোষণা করে। আর যেসব নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে, সেগুলোতে সবুজ রং দেয়। সবুজ রং দেওয়া নলকূপের পানি পানের যোগ্য।</p> <p>আর্সেনিকের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির লক্ষণ—শরীরে বা হাতের তালুতে বাদামি ছাপ পড়ে; হাত-পায়ের চামড়া পুরু হয়ে যায়, আঙুল বেঁকে যায়। এ ছাড়া পায়ের আঙুলের মাথায় পচন ধরে। শরীরের চামড়া ফেটে অসহনীয় যন্ত্রণার সৃষ্টি হয়।</p> <p>খাওয়ার পানি আর্সেনিকমুক্ত করতে কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন কৌশল উদ্ভাবন করা হয়েছে, যেমন কমিউনিটি-ভিত্তিক আর্সেনিক বিশোধন প্লান্ট, গভীরতর নলকূপ স্থাপন ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ।       </p> <p>আর্সেনিকের বিষক্রিয়া থেকে রক্ষা পেতে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে। আর্সেনিকযুক্ত নলকূপের পানি পান এবং রান্নার কাজে ব্যবহার করা যাবে না। </p>