<p><strong>[নবম-দশম শ্রেণির রসায়ন বইয়ের চতুর্থ অধ্যায়ে ‘পর্যায় সারণি’ সম্পর্কে আলোচনা আছে]</strong></p> <p>মানুষ প্রাচীনকাল থেকে বিক্ষিপ্তভাবে পদার্থ এবং তাদের ধর্ম সম্পর্কে যেসব ধারণা অর্জন করেছিল, পর্যায় সারণি হচ্ছে তার একটি পদ্ধতিগত রূপ। পর্যায় সারণি একজন বিজ্ঞানীর এক দিনের পরিশ্রমের ফলে তৈরি হয়নি। অনেক বিজ্ঞানীর অনেক দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আজকের এই আধুনিক পর্যায় সারণি তৈরি হয়েছে। ১৭৮৯ সালে ল্যাভয়সিয়ে অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন, ফসফরাস, মার্কারি, জিংক এবং সালফার ইত্যাদি মৌলিক পদার্থকে ধাতু ও অধাতু—এই দুই ভাগে ভাগ করেন। ল্যাভয়সিয়ের সময় থেকেই মৌলগুলোকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করার চিন্তাভাবনা শুরু হয়, যেন একই ধরনের মৌলিক পদার্থগুলো একটি নির্দিষ্ট ভাগে থাকে।</p> <p>১৮৬৯ সালে রাশিয়ান বিজ্ঞানী মেন্ডেলিফ সব মৌলের ধর্ম পর্যালোচনা করে একটি পর্যায়সূত্র প্রদান করেন। সূত্রটি হলো—‘মৌলগুলোর ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলি তাদের পারমাণবিক ভর বৃদ্ধির সঙ্গে পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয়।’ এ সূত্র অনুসারে তিনি তখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত ৬৩টি মৌলকে ১২টি আনুভূমিক সারি আর আটটি খাড়া কলামের একটি ছকে পারমাণবিক ভর বৃদ্ধি অনুসারে সাজিয়েছিলেন। এই ছকের নাম দেওয়া হয় পর্যায় সারণি। মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণির আরেকটি সাফল্য হচ্ছে, কিছু মৌলিক পদার্থের অস্তিত্ব সম্পর্কে সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী। সে সময় মাত্র ৬৩টি মৌল আবিষ্কৃত হওয়ার কারণে পর্যায় সারণির কিছু ঘর ফাঁকা থেকে যায়। মেন্ডেলিফ এই ফাঁকা ঘরগুলোর জন্য যে মৌলের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, পরবর্তী সময়ে সেগুলো সত্য প্রমাণিত হয়। ১৯১৩ সালে হেনরি মোসলে পারমাণবিক ভরের পরিবর্তে পারমাণবিক সংখ্যা অনুযায়ী মৌলগুলোকে পর্যায় সারণিতে সাজানোর প্রস্তাব দেন।</p> <p>ল্যাভয়সিয়ে মাত্র ৩৩টি মৌল নিয়ে ছক তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন। মেন্ডেলিফ ৬৩টি আবিষ্কৃত মৌল ও চারটি অনাবিষ্কৃত মৌল নিয়ে পর্যায় সারণি নামে যে ছকটি তৈরি করেছিলেন, বর্তমানে সেটি ১১৮টি মৌলের আধুনিক পর্যায় সারণি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।</p>