<p>পেনসিল হচ্ছে লেখা ও আঁকার একটি উপকরণ, যা দেখতে সরু, লম্বাটে এবং মাঝের খোলকে কঠিন রঞ্জক পদার্থ থাকে। কাগজ বা অন্য কোনো মসৃণ বস্তুর সঙ্গে কঠিন রঞ্জক পদার্থের ঘর্ষণের মাধ্যমে চিহ্ন এঁকে এর সাহায্যে লেখা ও আঁকা যায়। এ দেশে বেশির ভাগ শিশুর হাতেখড়ি হয় পেনসিলের সাহায্যে। স্কুলে প্রথম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পেনসিলে লেখা বাধ্যতামূলক।</p> <p>ইংরেজি ‘পেনসিল’ শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ‘পেনিসিলাস’ থেকে এসেছে, যার আক্ষরিক অর্থ ‘ছোট লেজ’। আদি লিখন পদ্ধতিতে লেখার ব্রাশ হিসেবে উটের চুল বা লেজের অংশের ব্যবহার ছিল। সেই লিখন পদ্ধতিকেই স্মরণ করে পেনসিল নামকরণ হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। পেনসিলের ওপরের অংশকে বলে কেস। কেস হিসেবে সবচেয়ে বেশি পরিচিত কাঠ। সরু কাঠকে ষড়ভুজাকারে বা বেলনাকারে কেটে তার মাঝ বরাবর শিষ বা মূল অংশটি ভরে স্থায়ীভাবে আটকে দেওয়া হয়। কাঠের পরিবর্তে এখন প্লাস্টিক বা কাগজও ব্যবহৃত হচ্ছে। পেনসিল ব্যবহারের আগে কাঠ খোদাই করে শিষ বের করে তারপর লিখতে বা ছবি আঁকতে হয়।</p> <p>প্রাচীন রোমানরা সর্বপ্রথম পেনসিল ব্যবহার করেন। সে সময় এটি ‘স্টাইলাস’ নামে পরিচিত ছিল। এই স্টাইলাস ছিল লেডের তৈরি। ১৫৬৪ সালে ইংল্যান্ডের বোরোডেল অঞ্চলে একটি বিশাল গ্রাফাইটের খনি আবিষ্কৃত হয়। লেডের চেয়েও গাঢ় ও স্থায়ী দাগ কাটতে পারে বলে তখন থেকে লেখালেখির জন্য গ্রাফাইট ব্যবহার করা শুরু হয়। তবে তখন কোনো কাঠের বা অন্য পদার্থের তৈরি কেসে গ্রাফাইট দণ্ড রাখা হতো না, বরং সরাসরি হাতে ধরে বা সুতা পেঁচিয়ে ব্যবহৃত হতো। ১৫৬০ দশকে সিমোনিও ও লিন্ডিয়ানা নামক ইতালিয়ান দম্পতি সর্বপ্রথম কাঠের কেসে গ্রাফাইট রেখে আধুনিক পেনসিল তৈরির নীলনকশা বানান। ১৮৫৮ সালে হাইমেন লিপম্যান সর্বপ্রথম পেনসিলের নিচে এক টুকরো রাবার জুড়ে দেন।</p> <p>প্রয়োজন, ব্যবহার ও ভোক্তা আকর্ষণের কথা মাথায় রেখে এখন বানানো হচ্ছে নানা প্রকারের পেনসিল। যেমন—গ্রাফাইট পেনসিল, কেসবিহীন পেনসিল, কাঠকয়লা পেনসিল, কার্বন পেনসিল, মোমের তৈরি রং পেনসিল, জলরং পেনসিল, কাঠমিস্ত্রির পেনসিল, প্লাস্টিক পেনসিল প্রভৃতি। আবার পেনসিলের কালির ঘনত্বের ওপর ভিত্তি করে HB, 2B, 4B, 6B, 8B প্রভৃতি বিভিন্ন মাত্রার পেনসিলও আছে। বাংলাদেশে Staedtler, Faber-Castell, Nataraj প্রভৃতি কম্পানির পেনসিল বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। </p> <p><strong>ইন্দ্রজিৎ</strong> <strong>মণ্ডল</strong></p>