<p style="text-align: center;"><strong>সৃজনশীল প্রশ্ন</strong></p> <p style="text-align: center;"><strong>বই পড়া : প্রমথ চৌধুরী</strong></p> <p><strong>উদ্দীপক :</strong> নীলা ও মিলা উভয়ে সহপাঠী এবং ভালো বন্ধু। দুজনই লেখাপড়ায় খুব মনোযোগী। পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান দুজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত পড়াগুলো দুজনে আলোচনা করে পড়ে। মোট কথা, পড়াশোনার বাইরে তারা কিছুই বোঝে না। পরীক্ষায় ভালো ফল করাটাই তাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। অবসর সময়েও তারা শখ করে অন্য কোনো বই পড়ে না।</p> <p>ক) ‘বই পড়া’ প্রবন্ধটি লেখকের কোন গ্রন্থ থেকে নির্বাচন করা হয়েছে?</p> <p><strong>উত্তর :</strong> ‘বই পড়া’ প্রবন্ধটি লেখকের ‘প্রবন্ধ সংগ্রহ’ গ্রন্থ থেকে নির্বাচন করা হয়েছে।</p> <p>খ) ‘দেহের মৃত্যুর রেজিস্টারি রাখা হয়, আত্মার হয় না’—লেখক কেন এ কথা বলেছেন ? ব্যাখ্যা করো।</p> <p>উত্তর : ‘দেহের মৃত্যুর রেজিস্টারি রাখা হয়, আত্মার হয় না’—শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটির কারণে লেখক কথাটি বলেছেন। প্রমথ চৌধুরী তাঁর ‘বই পড়া’ প্রবন্ধে বলেছেন যে আমাদের স্কুল-কলেজের শিক্ষার পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের বিদ্যা গেলানো হয়, তারা তা জীর্ণ করতে পারুক আর না-ই পারুক। এই উল্টো শিক্ষাপদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক মন্দাগ্নিতে জীর্ণশীর্ণ হয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে আসে। আমাদের সমাজের মায়েরাও তেমনি গরুর দুধ উপকারী বলে শিশুকে জোর করে খাওয়াতে চান। কারণ তারা বিশ্বাস করেন ওই বস্তু পেটে গেলেই উপকার হবে। প্রকৃতপক্ষে তাঁরা সন্তানের মরা মুখ দেখার আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলেন। স্কুল-কলেজের শিক্ষাপদ্ধতি সেই একই কাজ করছে বলে অনেক সুস্থ শিক্ষার্থীর মন ইনফ্যান্টাইল লিভারে গতাসু হচ্ছে—অর্থাৎ মরে যাচ্ছে, যার সংখ্যা নির্ধারণ করা কঠিন। কারণ দেহের মতো আত্মার মৃত্যুর কোনো রেজিস্টারি রাখা হয় না।</p> <p>গ) উদ্দীপকের নীলা ও মিলার মানসিকতা ‘বই পড়া’ প্রবন্ধের কোন দিককে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।</p> <p>উত্তর : উদ্দীপকের নীলা ও মিলার মানসিকতা ‘বই পড়া’ প্রবন্ধের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার দিককে নির্দেশ করে। ‘বই পড়া’ প্রবন্ধের লেখক বলেছেন যে বই পড়ার শখটা মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ শখ হলেও তিনি কাউকে শখ হিসেবে বই পড়তে পরামর্শ দিতে চান না অনেকেই তা কুপরামর্শ মনে করবে বলে। কারণ আমরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ফল লাভের জন্য সবাই উদ্বাহু। এ শিক্ষা আমাদের গায়ের জ্বালা ও চোখের জল দুই-ই দূর করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। তাই ডেমোক্রেসির শিষ্যরা অর্থের সার্থকতা বুঝে সবাই বড় মাপের মানুষ হতে চায়। ইংরেজি সভ্যতার সংস্পর্শে এসে আমরা ডেমোক্রেসির গুণগুলো আয়ত্ত করতে না পারলেও দোষগুলো আত্মসাৎ করেছি; স্বাস্থ্য নয়, ব্যাধিই সংক্রামক বলে। আমাদের শিক্ষিতসমাজের লোলুপ দৃষ্টি আজ অর্থের ওপরই পড়ে রয়েছে। তাই যাঁরা হাজারখানা ল-রিপোর্ট কেনেন, তাঁরা একখানা কাব্যগ্রন্থ কিনতেও প্রস্তুত নন, তাতে ব্যবসার কোনো সুসার নেই বলে। উদ্দীপকের নীলা ও মিলাও পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত বইগুলোর বাইরে আর কিছুই পড়ে না। নীলা ও মিলার এই মানসিকতা ‘বই পড়া’ প্রবন্ধের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার উপর্যুক্ত বক্তব্যকে নির্দেশ করে।</p> <p>ঘ) নির্দেশিত দিকটি কি ‘বই পড়া’ প্রবন্ধের মূল বক্তব্যকে সমর্থন করে? তোমার মন্তব্যের পক্ষে যুক্তি দাও।</p> <p><strong>উত্তর :</strong> প্রগতিশীল জাতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য সাহিত্যচর্চার যে আবশ্যকতার কথা ‘বই পড়া’ প্রবন্ধে বর্ণিত হয়েছে, উদ্দীপকে তা নেই।</p> <p>‘বই পড়া’ প্রবন্ধের লেখক মনে করেন যে আমাদের পাঠচর্চার অনভ্যাস শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটির জন্যই ঘটছে। আর্থিক অনটনের কারণে অর্থকরী নয় এমন সব কিছুই এ দেশে অনর্থক বলে বিবেচনা করা হয়। সে জন্য বই পড়ার প্রতি লোকের অনীহা দেখা যায়। কিন্তু লেখক মনে করেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে লব্ধ শিক্ষা পূর্ণাঙ্গ নয় বলে ব্যাপকভাবে বই পড়া দরকার। কারণ সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত। যথার্থ শিক্ষিত হতে মনের প্রসার দরকার। তার জন্য বই পড়ার অভ্যাস বাড়াতে হবে। আজকের দিনে মানুষের মনকে সরল, সচল, সরাগ ও সমৃদ্ধ করার ভার সাহিত্যের ওপর ন্যস্ত হয়েছে। সুতরাং সাহিত্যচর্চার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হওয়ার অর্থ হচ্ছে, জাতির জীবনীশক্তি হ্রাস করা। তাই জাতির জীবনীশক্তি বাড়ানোর জন্য বই পড়তে হবে, আর এর জন্য লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। লাইব্রেরিতে লোকে নিজের পছন্দ অনুযায়ী বই পড়ে যথার্থ শিক্ষিত হয়ে উঠতে পারে। কেননা বই পড়া ছাড়া সাহিত্যচর্চার উপায়ান্তর নেই।</p> <p>উদ্দীপকের নীলা ও মিলা পরীক্ষায় ভালো ফল করার জন্য পাঠ্যপুস্তকের বাইরে অন্য কোনো বই পড়ার কথা ভাবতেই পারে না।</p> <p>উপর্যুক্ত বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাই বলা যায়, সাহিত্যচর্চার যে আবশ্যকতার কথা ‘বই পড়া’ প্রবন্ধে বলা হয়েছে, তা উদ্দীপকে নেই বলে মূল বক্তব্য ধারণে সক্ষম হয়নি।</p>