<p>গ্রামবাংলার আনন্দ-বিনোদনের অন্যতম খোরাক কবিগান। এটি বাংলা লোকসংগীতের একটি বিশেষ ধারা। তাৎক্ষণিকভাবে সুরের সঙ্গে কথা বেঁধে মঞ্চেই এ গান পরিবেশিত হয়। এই গানের আসরে দুটি দল থাকে। প্রতিটি দলে থাকেন একজন করে প্রধান কবিয়াল বা সরকার। অন্যদের দোহার বলে। পাল্টাপাল্টি যুক্তি-তর্ক আর গানে গানে দুই কবিয়ালের লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে কবিগান শুরু হয়। এ গানের আসরে বাদ্যযন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয় হারমোনিয়াম, ঢোল, বাঁশি, কাঁসা ও বেহালা। যাঁরা বাদ্যযন্ত্র বাজান তাঁদের মধ্যে ঢুলিই মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। দুটি দলই পালাক্রমে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এই গান পরিবেশন করে। এ গানের গায়ককে কবি হতে হয়। তিনি মুখে মুখে পদ রচনা করেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে সুরারোপ করে গেয়ে থাকেন। দোহাররা তাঁদের নেতার কথাগুলোই পুনরাবৃত্তি করেন। কবিগান শুরু হয় ‘বন্দনা’ বা ‘গুরুদেবের গীত’-এর মাধ্যমে। ‘বন্দনা’ অংশটি সরস্বতী, গণেশ, জনতা ও শ্রোতাদের উদ্দেশে নিবেদিত হয়। কবিগানের আসরে প্রতিযোগিতামূলক অংশটিকে ‘কবির লড়াই’ বলা হয়। এই অংশে একজন গায়ক মুখে মুখে গান বেঁধে অন্য গীতিকার-সুরকারকে আক্রমণ করেন এবং তিনিও গানের মাধ্যমে সেই আক্রমণের প্রত্যুত্তর দেন। বাংলায় বহু জনপ্রিয় ও খ্যাতিমান কবিয়াল ছিলেন। অষ্টাদশ থেকে বিংশ শতাব্দীর মধ্যবর্তীকালে শুধু বীরভূম জেলায়ই ছিল তিন শ খ্যাতনামা কবিয়াল। তাঁদের মধ্যে গোঁজলা গুঁইকে কবিগানের আদি কবিয়াল বলা হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় কবিয়াল ছিলেন ভোলা ময়রা। তাঁর একটি জনপ্রিয় কবিগান হলো—</p> <p>‘ময়মনসিংহের মুগ ভালো, খুলনার ভালো কই</p> <p>ঢাকার ভালো পাতাক্ষীর, বাঁকুড়ার ভালো দই।’</p> <p>বাংলাদেশের প্রথম প্রতিভাধর কবিয়াল ছিলেন  তারকচন্দ্র সরকার। এ ছাড়া বিশ শতকের জনপ্রিয় কয়েকজন কবিয়াল হলেন—হরিচরণ আচার্য, রমেশ শীল, রাজেন্দ্রনাথ সরকার, মানিকগঞ্জের রাধাবল্লভ সরকার, উপেন্দ্র সরকার প্রমুখ।</p>