<p>প্রাচীনকালে তাঁত বুনন প্রক্রিয়ায় কার্পাশ তুলার সুতা দিয়ে মসলিন নামে সূক্ষ্ম বস্ত্র তৈরি হতো এবং মসলিনের ওপর যে জ্যামিতিক নকশাদার বা বুটিদার বস্ত্র বোনা হতো, তারই নাম জামদানি। জামদানি বলতে সাধারণত শাড়ি বোঝানো হলেও প্রকৃতপক্ষে ঐতিহ্যবাহী নকশায় সমৃদ্ধ ওড়না, কুর্তা, পাগড়ি, ঘাগরা, রুমাল, পর্দা, টেবিল ক্লথ—সবই জামদানির আওতায় পড়ে। মোগল আমলের শেষের দিকে নেপালে ব্যবহৃত আঞ্চলিক পোশাক রাঙার জন্য বিশেষ ধরনের জামদানি কাপড় তৈরি হতো।</p> <p>বিভিন্ন ঐতিহাসিক গ্রন্থ, লোকমুখে প্রচলিত কাহিনি, শ্লোক, বিবরণ থেকে মনে হয় যে খ্রিস্টপূর্ব প্রথম দশক থেকেই বাংলায় সূক্ষ্ম মিহিবস্ত্রের কদর। বাংলার কার্পাশ বস্ত্রের বিকাশ ঘটেছে অনেক বিবর্তনের মাধ্যমে। দুকূল নামের বস্ত্রের ক্রমবিবর্তনই মসলিন। ষোড়শ শতাব্দীর শেষ দিকে ইংরেজ পরিব্রাজক র‌্যালফ ফিচ এবং ঐতিহাসিক আবুল ফজল সোনারগাঁয়ে প্রস্তুতকৃত মসলিনের প্রশংসা করেছেন। জামদানি শিল্পকর্ম পরিপূর্ণতা লাভ করে মোগল আমলে। ঢাকা জেলার প্রতিটি গ্রামেই কমবেশি তাঁতের কাজ হতো। উৎকৃষ্ট ধরনের জামদানি ও মসলিন তৈরির জন্য ঢাকা, সোনারগাঁ, ধামরাই, তিতাবাড়ি, জঙ্গলবাড়ি, বাজিতপুর প্রসিদ্ধ ছিল।</p> <p>বর্তমান বাজারে জামদানির উচ্চমূল্য ও বিপুল চাহিদার কারণে বাংলাদেশের এই শিল্পে নতুন গতি সঞ্চার হয়েছে। জামদানির পুনরুজ্জীবনের পথে প্রধান অন্তরায় হলো দক্ষ ও আগ্রহী তাঁতশিল্পীর অভাব। এই শ্রম নিবিড় হস্তশিল্পে উপযুক্ত মজুরি নিশ্চিত না করা গেলে তাঁতিরা আগ্রহী হবে না। জামদানি শাড়ির আগের সব বিখ্যাত ও অবিস্মরণীয় নকশা ও বুননের অনেকগুলোই বর্তমানে বিলুপ্ত। নবীন কারিগররা বেশির ভাগ নকশা সম্পর্কে অবহিত নয়। আদি জামদানির নকশা ও বুননকৌশল নতুন প্রজন্মের কাছে স্থানান্তর একটি চ্যালেঞ্জ।                    </p> <p> </p> <p> </p>