<p><strong>অতিথির স্মৃতি</strong></p> <p>প্রশ্ন : গাড়িটা থামতেই লোকটা ছুটে এলো। যেন এক্ষুনি কেঁদে ফেলবে—এমন একটা ভাব। ছুটে এসে কেমন করুণ গলায় বলল, আপনাদের কাছে স্যার রক্ত বন্ধ করার কোনো ওষুধ আছে? রীতিমতো অবাক হওয়ার পালা। মেজদা জিজ্ঞেস করলেন, কেন, কী দরকার? স্যার একটা খরগোশ, মানে একটা খরগোশ খুব আঘাত পেয়েছে। খুব রক্ত পড়ছে ওটার পা থেকে। আমি খরগোশটাকে ওখানে রেখে এসেছি, স্যার। ওষুধ লাগাতে পারলে হয়তো বাঁচাতে পারতাম।</p> <p>ক. ‘কুঞ্জ’ শব্দের অর্থ কী?</p> <p>উত্তর : ‘কুঞ্জ’ শব্দের অর্থ উপবন।</p> <p>খ.  লেখকের ঘুম কিভাবে ভেঙে যায়? ব্যাখ্যা করো।</p> <p>উত্তর :  ভজনের একঘেয়ে সুরে লেখকের ঘুম ভেঙে যায়।</p> <p>‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় চিকিৎসকের আদেশে দেওঘরে বায়ু পরিবর্তনের জন্য গিয়েছিলেন। প্রাচীরঘেরা বাগানের মধ্যে একটা বড় বাড়িতে তিনি থাকতেন। সেখানে রাত ৩টা থেকে কাছে কোথাও একজন গলাভাঙা একঘেয়ে সুরে ভজন শুরু করে। আর সেই ভজনের সুরে লেখকের ঘুম ভেঙে যায়।</p> <p>গ.  উদ্দীপকের লোকটির আকুতি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কার অনুভূতির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।</p> <p>উত্তর : উদ্দীপকের লোকটির আকুতি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের অনুভূতির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।</p> <p>‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক দেওঘরে যাওয়ার পর পথে হাঁটতে গিয়ে যে কুকুরটির দেখা পান, তাকে অতিথির মর্যাদা দিয়ে তাঁর বাড়িতে থাকতে দেন। বামুন ঠাকুরকে ডেকে ওকে পেট ভরে খেতে দিতে বলেন। মালিবউ বাড়তি খাবার নিজে খেয়ে নিত বলে কুকুরটিকে মেরে ধরে তাড়িয়ে দেয়। লেখক কুকুরটির ভিজে ভিজে চোখ দেখে চাকরদের ডেকে প্রকৃত ঘটনা জানতে পারেন। তিনি অতিথি কুকুরটির প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে আবার তার খাবারের ব্যবস্থা করেন। কুকুরটির প্রতি লেখকের এই সহানুভূতি এতটাই প্রবল ছিল যে শরীর না সারলেও তিনি নানা ছলে আরো দুদিন দেওঘরে থেকে যান।</p> <p>উদ্দীপকের আহত খরগোশের রক্ত বন্ধ করার জন্য লোকটির ওষুধের সন্ধান করার মধ্যে যে আকুতি প্রকাশ পেয়েছে তা ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের অতিথি কুকুরটির প্রতি উপর্যুক্ত সহানুভূতিসম্পন্ন আচরণের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।</p> <p>ঘ. প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মূল সুরই উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে—মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার করো।</p> <p>উত্তর : পেক্ষাপট ভিন্ন হলেও ইতর প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা পরিহার ও মমত্ববোধের দিক থেকে উদ্দীপকটি ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মূল ভাবকে ধারণ করেছে।</p> <p>‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক দেওঘরে বায়ু পরিবর্তনের জন্য গিয়ে পথের একটা কুকুরকে তাঁর সঙ্গী হিসেবে পান। তিনি তাকে অতিথির মর্যাদা দিয়ে বাড়িতে আশ্রয় দেন। মালিবউ বাড়তি খাবারের লোভে তার প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করলে লেখক আবার তার খাবারের ব্যবস্থা করেন। এরপর লেখক যত দিন দেওঘরে ছিলেন তত দিন পর্যন্ত কুকুরটি তার ভ্রমণের সঙ্গী ছিল। বাড়ি ফেরার দিনও কুকুরটি কুলিদের সঙ্গে ক্রমাগত ছোটাছুটি করে খবরদারি করেছে, কোথাও যেন লেখকের কিছু খোয়া না যায়। এমনকি ট্রেন না ছাড়া পর্যন্ত সে স্টেশনের ফটকের বাইরে বসে এক দৃষ্টিতে লেখকের যাত্রাপথের দিকে তাকিয়ে ছিল, যা লেখকের বাড়ি ফেরার আগ্রহে বাধা সৃষ্টি করে। লেখকের এই ভেবে কষ্ট হয়েছে যে অতিথি কুকুরটি পথে দাঁড়িয়ে দিন দুই তাঁর জন্য অপেক্ষা করবে, হয়তো সুযোগ পেলে কোনো ফাঁকে লুকিয়ে তাঁর ঘরটা খুঁজে দেখবে।</p> <p>উদ্দীপকের লোকটিরও আহত খরগোশটির জন্য তীব্র মনঃকষ্ট হচ্ছিল। তাই সে খরগোশটির রক্ত বন্ধ করার জন্য ওষুধের খোঁজ করছিল।</p> <p>উপর্যুক্ত বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাই বলা যায়—পেক্ষাপট ভিন্ন হলেও ‘ইতর প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতা পরিহার করে মমত্ববোধের প্রকাশ ঘটানোর দিক থেকে উদ্দীপকটিতে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মূল সুর প্রতিফলিত হয়েছে।</p> <p><strong>মানবধর্ম</strong></p> <p>প্রশ্ন : মাদার তেরেসা একজন মহীয়সী নারী। তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন। জাতধর্মের ভেদাভেদ ভুল মানবপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে একনিষ্ঠভাবে অসহায় মানুষের সেবা করে যান। গভীর মমতা ও অকুণ্ঠ ভালোবাসা দিয়ে আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে যান। কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন, মানুষের স্থান সবার ওপরে।</p> <p>ক. লালন শাহের গানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য কী?</p> <p>উত্তর : লালন শাহের গানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো অধ্যাত্মভাব ও মরমি রস ব্যঞ্জনা।</p> <p>খ. ‘যাওয়া কিংবা আসার বেলায়’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? ব্যাখ্যা করো।</p> <p>উত্তর : ‘যাওয়া কিংবা আসার বেলায়’ বলতে কবি মৃত্যু কিংবা জন্মের সময়কে বুঝিয়েছেন।</p> <p>‘মানব ধর্ম’ কবিতার কবি লালন শাহ বলেছেন যে জন্ম ও মৃত্যু মানুষের জীবনের এক অনিবার্য সত্য। মানুষ জাত-ধর্মের আপাত পার্থক্য নির্ণয়ে তসবি বা জপমালা গলায় ধারণ করলেও জন্ম বা মৃত্যুর সময় কোনো চিহ্নই শরীরে থাকে না। সে সময় তো সবাই সমান। তাই উপর্যুক্ত মন্তব্যটি করা হয়েছে।</p> <p>গ.   উদ্দীপকের সঙ্গে ‘মানবধর্ম’ কবিতার সাদৃশ্য ব্যাখ্যা করো।</p> <p>উত্তর : উদ্দীপকের সঙ্গে ‘মানবধর্ম’ কবিতার সাদৃশ্য হলো অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও মানবতাবোধ।</p> <p>‘মানবধর্ম’ কবিতার কবি লালন শাহের জাত পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হলেও তিনি জাতকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না। তাঁর দৃষ্টিতে তিনি জাতের রূপ নির্ণয় করতে পারেননি। মানুষ জাতের পার্থক্য নির্ণয়ের জন্য জপমালা বা তসবি গলায় ধারণ করে থাকে যা জন্ম বা মৃত্যুকালে দেহে থাকে না। তাঁর মতে, যে জল গর্তে পড়ে, তা কূপ জল হয়, আবার গঙ্গায় পড়লে তা-ই গঙ্গা জল নাম ধারণ করে, যা মূলত একই; শুধু পাত্র অনুসারে ভিন্ন নাম ধারণ করে। তাই তিনি জাত-ধর্মের ঊর্ধ্বে মানবধর্মে বিশ্বাসী, যা অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে নির্দেশ করে।</p> <p>উদ্দীপকের মাদার তেরেসাও জাতধর্মের ভেদাভেদ ভুলে মানবপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে অসহায় মানুষের সেবা করে গেছেন, যা ‘মানবধর্ম’ কবিতার কবির উপর্যুক্ত বক্তব্যের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।</p> <p>ঘ. উদ্দীপক ও ‘মানবধর্ম’ কবিতার মূল সুর এক—উক্তিটি উদ্দীপক ও ‘মানবধর্ম’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ করো।</p> <p>উত্তর : উদ্দীপক ও ‘মানবধর্ম’ কবিতার মূল সুর এক, আর তা হলো—ধর্ম বা সম্প্রদায়গত পরিচিতির চেয়ে মানুষ হিসেবে পরিচয়টাই বড়।</p> <p>‘মানবধর্ম’ কবিতার কবি লালন শাহ জাতকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না। তাই নিজের জাত-পরিচয় নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন থাকলেও তিনি জাতের কোনো রূপ খুঁজে পাননি। এ জগৎ সংসারে যদিও মানুষ জপমালা ও তসিবর মতো বাহ্যিক চিহ্ন শরীরে ধারণ করে যা জন্ম-মৃত্যুকালে থাকে না। তাই লোকে জাত-ধর্ম নিয়ে গৌরব করলেও লালন তা সাত বাজারে বিকিয়ে দিয়েছেন।</p> <p>উদ্দীপকের মাদার তেরেসাও লালন শাহের মতো মানধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন বলে আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে গেছেন জাত-ধর্মের ভেদাভেদ না করে।</p> <p>উপর্যুক্ত বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাই বলা যায়। মাদার তেরসা ও লালন শাহ উভয়েই মানবতাবাদী ও অসাম্প্রদায়িক মনোভাবসম্পন্ন বলে উদ্দীপকও ‘মানবধর্ম’ কবিতার মূল সুর এক—বলা হয়েছে।</p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2019/04 April/03-04-2019/news/kalerkantho-6-a2019-04-03--.jpg" style="height:160px; width:367px" /></p> <p> </p> <p> </p>