ঢাকা, রবিবার ২০ জুলাই ২০২৫
৫ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৪ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, রবিবার ২০ জুলাই ২০২৫
৫ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৪ মহররম ১৪৪৭

শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রত্যাহার করুন

  • সংকটে দেশীয় কাগজশিল্প
শেয়ার
শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রত্যাহার করুন

উন্নত-অনুন্নত প্রায় সব দেশই নিজেদের শিল্পভিত্তিকে শক্ত করার চেষ্টা করে। নিজস্ব অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত করা এবং নিজস্ব জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান নিশ্চিত করায় নিজস্ব শিল্প বিকাশের কোনো বিকল্প নেই। নিঃসন্দেহে বাংলাদেশও তা-ই চায়, কিন্তু কখনো কখনো সরকারের কিছু সিদ্ধান্ত ও তার অপপ্রয়োগ সেই ধারাবাহিকতাকে ক্ষুণ্ন করে। তেমনি একটি সিদ্ধান্ত হচ্ছে শুল্কমুক্ত বন্ড সুবিধার আওতায় পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের জন্য কাগজ আমদানি করতে দেওয়া।

যথাযথ দেখভালের অভাবে একটি অসাধু চক্র বিপুল পরিমাণ কাগজ আমদানি করছে এবং শর্ত ভেঙে সেগুলো খোলাবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। এর ফলে দেশীয় কাগজশিল্পের অস্তিত্ব হুমকির মুখে এসে পড়ছে।

দেশে নিবন্ধিত পেপার মিলের সংখ্যা ১২৮। এর মধ্যে ১০৬টি মিলের কাগজ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে বছরে ১৬ লাখ মেট্রিক টন।

কাগজের অভ্যন্তরীণ চাহিদা রয়েছে ৯ লাখ মেট্রিক টন। মিলগুলো অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত কাগজ ৪০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি করছে। এতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। এই খাতে প্রত্যক্ষভাবে ২৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং পরোক্ষভাবে এক কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল।
দেশীয় কাগজশিল্পের উদ্যোক্তারা এই খাতে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। কাগজশিল্পকে কেন্দ্র করে দেশে ৩০০টির বেশি সহায়ক শিল্প গড়ে উঠেছে। এই খাত প্রতিবছর পাঁচ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব দিয়ে আসছে। আমদানি বিকল্প শিল্প হিসেবে বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় করছে।

কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) নির্ধারিত স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী চাহিদার সব কাগজ সরবরাহে সক্ষমতা রয়েছে দেশীয় মিলগুলোর।

২০ বছর ধরে এনসিটিবির সরাসরি কেনা কাগজ দেশীয় মিলগুলো নির্ধারিত গুণগত মান বজায় রেখে এবং এনসিটিবির সব শর্ত পরিপালন করে সরবরাহ করে আসছে। তা সত্ত্বেও কাগজ আমদানির জন্য প্রযোজ্য শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) মওকুফ করা হয়। এর ফলে এনসিটিবির কার্যাদেশ পাওয়া মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দেশীয় মিলের কাগজ না কিনে বিনা শুল্কে ছাপার কাগজ আমদানি করছে এবং শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানির শর্ত ভঙ্গ করে খোলাবাজারে তা বিক্রি করে দিচ্ছে, যা দেশীয় কাগজশিল্পের অস্তিত্বের জন্য বিরাট হুমকিস্বরূপ। সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের কাছে এসব তথ্য তুলে ধরে আমদানিতে শুল্ক সুবিধা প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ পেপার মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমএ)। সংগঠনটির পক্ষে এর আগেও শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে দেওয়া আবেদনে বলা হয়, দেশীয় কাগজকলগুলোর দেশের চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদনক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বিদেশ থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাগজ আমদানি করা হচ্ছে এবং খোলাবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে দেশীয় কাগজশিল্প। এই অবস্থায় ছাপার জন্য কাগজ আমদানিতে শুল্ক মওকুফের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে বিপিএমএ।

আমরা মনে করি, দেশীয় কাগজশিল্পের স্বার্থে শুল্ক সুবিধায় কাগজ আমদানির অনুমতি প্রত্যাহার করা অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি যারা এই সুবিধার অপব্যবহার করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ক্ষতিকর প্রবণতা রোধ করুন

    শিশুদের মোবাইল আসক্তি
শেয়ার
ক্ষতিকর প্রবণতা রোধ করুন

অনেক মা-বাবা শিশুদের শান্ত রাখতে বা খুশি রাখতে শিশুদের হাতে স্মার্ট মোবাইল ফোন, ট্যাব বা ল্যাপটপ তুলে দেন। শিশুরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা এসব নিয়ে বসে থাকে বা মোবাইলের পর্দায় ডুবে থাকে। অনেক সময় তারা এমন সব কনটেন্ট দেখে, যেগুলো দেখা উচিত নয়। এতে তারা শারীরিক-মানসিক নানা ধরনের ক্ষতির শিকার হয়।

অনেকে ক্রমে নেশা ও অপরাধজগতের দিকে পা বাড়ায়।

কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশে সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু-কিশোররা। গত পাঁচ-ছয় বছরে দেশে সাইবার অপরাধের শিকার শিশুর সংখ্যা বেড়েছে দেড় গুণেরও বেশি। ২০২৩ সালের মে মাসে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিক্যাফ) প্রকাশিত বাংলাদেশে সাইবার অপরাধপ্রবণতা ২০২৩ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে সাইবার অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৪.৮২ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের কম। মূলত ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছে শিশু।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে প্রায় ৭২ শতাংশ শিশু দিনে তিন ঘণ্টার বেশি সময় মোবাইল ফোন বা ট্যাবের ভার্চুয়াল দুনিয়ায় ডুবে থাকে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব কমিউনিটি মেডিসিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ পত্রিকায় ভারতের কেরালার থিরুভান্থাপুরাম সরকারি মেডিক্যাল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগ পরিচালিত জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়।

এতে দেখা যায়, পাঁচ থেকে ১২ বছর বয়সের প্রায় অর্ধেক শিশুই মোবাইল ফোনে আসক্ত। এই শিশুদের মধ্যে দৃষ্টিশক্তির সমস্যা প্রকট। এ ছাড়া মাথা ব্যথা, মনোযোগের অভাব এবং ঘুমের সমস্যাও অনেক বেশি। শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি নানা ধরনের শারীরিক জটিলতাও এই শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, অভিভাবকের অগোচরে বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা প্রযুক্তির অপব্যবহারে পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়ছে।

প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সাইবার অপরাধ ও ফেসবুকে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে অনেক শিশু-কিশোর। এসবের জেরে উঠতি বয়সী শিশু-কিশোরদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। এভাবে প্রযুক্তির নেতিবাচক ব্যবহারের ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে সমাজে।

নানা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তির একটি বড় কারণ হচ্ছে লাইক, কমেন্ট ও ফলোয়ার পাওয়া, যা তাদের সাময়িক আনন্দ দেয়। আর তা করতে গিয়েই তারা আরো বেশি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে। এ ছাড়া অনেক সময় ফেসবুক ভুয়া খবর, আজেবাজে ছবি, ভিডিও, পোস্টএসব নানা জঞ্জালে ভরা থাকে। এগুলো শিশুদের মনে অনেক সময় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই আসক্তি প্রতিরোধে অভিভাবকদের আরো সচেতন হতে হবে। শরীরচর্চা, খেলাধুলাসহ শিশুদের ভারসাম্যপূর্ণ জীবনের দিকে আগ্রহী করে তুলতে হবে। এ থেকে উত্তরণে সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদেরও যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। ক্ষতিকর ও অনুপযোগী কিছু কনটেন্টে ফিল্টার করা জরুরি।

মন্তব্য

সাঁড়াশি অভিযান চালাতে হবে

    পলাতক বন্দিরা হুমকির কারণ
শেয়ার
সাঁড়াশি অভিযান চালাতে হবে

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময়ে গত বছর জুলাই-আগস্ট মাসে দেশের ১৭টি কারাগারে বাইরে থেকে হামলা হয়। একই সময়ে কারাগারের ভেতরেও বন্দিদের বিদ্রোহের নজিরবিহীন ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় অনেক দুর্ধর্ষ জঙ্গি, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিসহ অনেক বন্দি পালিয়ে যান। অনেক আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট হয়।

জানা যায়, কেবল নরসিংদী কারাগার থেকেই ৯ জঙ্গিসহ ৮২৬ জন বন্দি পালিয়ে যান এবং লুট করা হয় ৮৫টি অস্ত্র ও প্রচুর গুলি। এখনো ৭০০ জন বন্দি পলাতক রয়েছেন বলে গতকাল শুক্রবার কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজনস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ মোতাহের হোসেন।

দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে খুবই নাজুক। ডাকাতি, ছিনতাইসহ তুচ্ছ ঘটনায়ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে।

শুধু জেলখানা নয়, সে সময় থানা, পুলিশ ফাঁড়ি থেকেও অনেক আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়েছে। লুট হওয়া অনেক আগ্নেয়াস্ত্র এখনো উদ্ধার করা যায়নি। ধারণা করা হয়, তার একটি বড় অংশই অপরাধীদের হাতে রয়েছে। আর বর্তমানে দেশে সক্রিয় অপরাধীদের সঙ্গে জেল পলাতক অপরাধীরাও রয়েছে।
কারা সূত্র জানায়, আন্দোলনের সময় হামলা ও বিক্ষোভের ঘটনায় আক্রান্ত ১৭টি কারাগারের মধ্যে আটটি কারাগার যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয় আর পাঁচটি কারাগার থেকেই দুই হাজারের বেশি বন্দি পালিয়ে যান। পালিয়ে যাওয়া বন্দিদের মধ্যে জঙ্গি ও মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ৯৮ জন বন্দি রয়েছেন। বন্দিরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে কারারক্ষীরা গুলিও চালিয়েছিলেন। এতে গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি ও জামালপুর কারাগারে ১৩ জন বন্দি নিহত হন। কিন্তু তবু পলাতক বন্দিদের আটকানো যায়নি।
অনেক কারাগারে অগ্নিসংযোগ করা হয়। শুধু নরসিংদী কারাগারেই পুড়ে যায় ২৯ হাজার নথিপত্র। নানা ধরনের অস্ত্র নিয়েও হামলা চালানো হয়। কারাগারগুলোর নিরাপত্তা ভেঙে পড়ে। এ সময় ১৭টি কারাগারে ২৮২ জন কারারক্ষী আহত হন।

প্রতিনিয়ত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। প্রতিদিনই ঘটছে বহু খুনের ঘটনা। সেই সঙ্গে বেড়েছে ছিনতাই, চুরি-ডাকাতি, এমনকি ঘটছে অনেক নৃশংস ঘটনা। বেড়েছে হুমকি-ধমকি ও চাঁদাবাজির ঘটনা। পথেঘাটে মানুষ যেমন নিরাপত্তাহীন, তেমনি নিরাপত্তাহীন নিজের বাসার ভেতরেও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দফায় দফায় বৈঠক করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। চলছে যৌথ অভিযান। নেওয়া হচ্ছে নানামুখী পদক্ষেপ, কিন্তু পরিস্থিতি সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে নির্বিচারে মানুষ হত্যা ও বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনা বেড়ে যাওয়ার অর্থ সমাজে চরম বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। তাঁদের মতে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোর ব্যর্থতার কারণেই মূলত এসব ঘটছে। এটি নিয়ন্ত্রণ করে জনমনে শান্তি ফেরাতে হবে।

সামনে নির্বাচন আসছে। এখনই যদি আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, সামনে তা আরো ভয়ংকর রূপ নিতে পারে। তাই সারা দেশে পুলিশি কর্মকাণ্ড আরো জোরদার করতে হবে। গোয়েন্দা নেটওয়ার্ককে আরো কার্যকর করতে হবে। অস্ত্র উদ্ধারে সাঁড়াশি অভিযান চালাতে হবে। জেল পলাতক সব আসামিকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি লুট হওয়া প্রতিটি অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। সোজা কথা, যেকোনো মূল্যে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

জননিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

    আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি
শেয়ার
জননিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ভয়াবহ পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, রাহাজানি, খুনখারাবি ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে। বাড়ছে কিশোর গ্যাং নামে জীবন অতিষ্ঠকারী অপরাধচক্রের সংখ্যা। মানুষ এখন নিজের ঘরবাড়িতেও নিরাপদ নয়।

গত দুদিনে কালের কণ্ঠে এ রকম বেশ কিছু খবর প্রকাশিত হয়েছে। বগুড়া সদরের হরিগাড়ী ইসলামপুর এলাকায় বুধবার রাতে কিছু সন্ত্রাসী বাড়িতে ঢুকে লাইলী খাতুন (৭০) ও হাবিবা বেগম (২২) নামের একই পরিবারের দুই নারীকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হত্যা করেছে। মঙ্গলবার রাতে কুমিল্লার দেবীদ্বার পৌর এলাকার সাইলচর গ্রামে ঘরে ঢুকে এক ঘুমন্ত নারীকে মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় এক ছাত্রদলকর্মীকে হত্যা করা হয়।
বুধবার দিনাজপুরে ভ্যানচালকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। দুর্বৃত্তরা তাঁর ভ্যানটিও নিয়ে গেছে। রাজশাহীর পুঠিয়ায় পাওয়া গেছে ছয় বছরের এক শিশুর লাশ। ভোলা, মাদারীপুরের রাজৈর, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
তাদের হত্যা করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া রয়েছে আরো অনেক হত্যা বা লাশ উদ্ধারের খবর। এই অবস্থায় কি শহর, কি গ্রাম কোথাও মানুষ স্বস্তিতে নেই।

কালের কণ্ঠে প্রকাশিত অপর এক খবরে দেখা যায়, রাজধানীতে কিশোর গ্যাং সদস্যরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সর্বশেষ গত বুধবার এক ঘণ্টার ব্যবধানে মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকায় দুজনকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশ ঘটনার সঙ্গে কিশোর গ্যাং সদস্যদের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে। ডিএমপি সদর দপ্তর সূত্র বলছে, রাজধানীর প্রতিটি এলাকায় কিশোর গ্যাং সদস্য রয়েছে। ঢাকার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ৪০ শতাংশ করে কিশোর গ্যাং সদস্যরা। বর্তমানে প্রতিটি এলাকায় পাঁচ শতাধিক কিশোর গ্যাং সদস্য রয়েছে। সব মিলে রাজধানীতে অন্তত ২০ হাজার কিশোর গ্যাং সদস্য রয়েছে। তাদের হাতে এখন পিস্তলসহ আধুনিক ধারালো অস্ত্র রয়েছে। এসব অস্ত্রের মধ্যে চাপাতি, বেকি, বার্মিজ চাকু ও কিরিচ রয়েছে। পুলিশের এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ঢাকার মধ্যে মোহাম্মদপুর ও আদাবরে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া রাজধানীর ৫০ থানা এলাকায় কিশোর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড আগের চেয়ে বেড়েছে।

জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। মানুষ একবেলা কম খেয়ে হলেও নিরাপদে ও মানসম্মান নিয়ে জীবনযাপন করতে চায়। আমরা আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেবে।

মন্তব্য

পুনরাবৃত্তি যেন না হয়

    গোপালগঞ্জে সহিংসতা
শেয়ার
পুনরাবৃত্তি যেন না হয়

গোপালগঞ্জ শহরে এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রা ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত বুধবারের হামলা-সংঘর্ষের পর থেকে কিছু সময়ের বিরতি দিয়ে কারফিউ চলছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত গোপালগঞ্জে কারফিউ চলমান থাকবে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে যৌথ বাহিনী গতকাল রাত পর্যন্ত অন্তত ২৫ জনকে আটক করেছে।

হামলায় জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় রাজনৈতিক দলসহ নানা মহল থেকে নিন্দা ও প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্ত ও সমর্থকদের হামলায় হতাহতের ঘটনায় গভীর নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি এই ঘটনাসহ সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার সঙ্গে আসন্ন নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র কাজ করছে বলেও মনে করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুধীমহল।

বিএনপির উচ্চ মহলের সন্দেহ, হামলা-সংঘর্ষের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো, বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নিয়ে কটূক্তি এবং দলের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার নির্বাচন ঠেকানোর লক্ষ্যে পরিচালিত একটি নীলনকশার অংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, নির্বাচন ঠেকানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কারা এই ষড়যন্ত্রকারী তা তাঁরা জানেন। কিন্তু পরিস্থিতি জটিল করে তুলতে চাইছেন না বলে কারো নাম উল্লেখ করছেন না।
দলটির অন্তত তিনজন জ্যেষ্ঠ নেতা মনে করেন, কয়েকটি রাজনৈতিক দল দেশে এক ধরনের অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে, এটা পরিষ্কার। গত বুধবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও নেতারা বলেন, পরিকল্পিতভাবেই একটি মহল দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচন ঠেকানো। কারণ নির্বাচন ছাড়াই যারা ক্ষমতার স্বাদ পাচ্ছে, নির্বাচনের পর তাদের সেই ক্ষমতা নাও থাকতে পারে।

গোপালগঞ্জের এই ঘটনায় অন্যান্য বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে সেনাবাহিনী অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে কার্যকর যে ভূমিকা নিয়েছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হওয়ায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও স্থানীয় পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে হস্তক্ষেপ করে এবং প্রাথমিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। তবে প্রশ্ন উঠেছে গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়ে। গোয়েন্দারা কেন আগে থেকে কিছুই জানতে পারল না? আগেই কেন তা প্রতিরোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হলো না? বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, গোয়েন্দা তথ্য ছিল। তবে এত পরিমাণ যে হবে ওই তথ্য হয়তো ছিল না। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, এটা কোনো পরিকল্পিত হামলা ছিল না। আমাদের কাছে সব ধরনের তথ্য ছিল এবং আমাদের প্রস্তুতিও ছিল। তবে এ ঘটনায় কারো গাফিলতি থাকলে খতিয়ে দেখা হবে এবং ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী যুবদল আয়োজিত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, এখন গণ-অভ্যুত্থানের শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করার সাহস দেখানো হচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে ইস্যু সৃষ্টি করে দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ঐতিহ্যবাহী দল বিএনপিকে কলঙ্কিত করার অপচেষ্টা দেখতে পাচ্ছি। তিনি দুঃখ করে বলেন, আমরা জুলাই ছাত্র-অভ্যুত্থান সংগঠিত করেছিলাম ডেমোক্রেসির জন্য। এখন দেখতে পাচ্ছি সারা দেশে ডেমোক্রেসির পরিবর্তে মবক্রেসির রাজত্ব চলছে।

আমরা চাই গোপালগঞ্জে হামলার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। পাশাপাশি এই ঘটনার সঙ্গে ষড়যন্ত্র ও ইন্ধনের যেসব অভিযোগ উঠছে, সেগুলো জাতির সামনে স্পষ্ট করা হোক। এমন সহিংসতার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, সে জন্য গোয়েন্দা ব্যর্থতার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে হবে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ