ঢাকা, শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫
৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৩ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫
৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৩ মহররম ১৪৪৭

মশা নিধনে ক্রাশ প্রগ্রাম চালান

  • ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রকোপ
অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার
মশা নিধনে ক্রাশ প্রগ্রাম চালান

ডেঙ্গুর প্রকোপ সাধারণত বর্ষাকালেই বেশি হয়। কিন্তু এ বছর অক্টোবরের মাঝামাঝি এসেও ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ পর্যায়ে রয়ে গেছে। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, গত ১১ অক্টোবর মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরো ৬৭৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এতে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি থাকা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৪৯৩।

অথচ গত বছর একই দিনে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ২০৭ জন এবং হাসপাতালে ভর্তি ছিল ৯৩৫ জন। সেই হিসাবে এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এবং হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা গত বছরের তুলনায় প্রায় তিন গুণ। মঙ্গলবার ডেঙ্গুতে মারা গেছে চারজন। এ নিয়ে এ বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৭৪।
এর মধ্যে শুধু রাজধানীতেই মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের।

ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী মশা দুই প্রজাতির—এডিস ইজিপ্টি ও এডিস আলবোপিকটাস। ইজিপ্টিকে নগরের মশাও বলা হয়। এটিই ৯৫ শতাংশ ডেঙ্গুর জন্য দায়ী।

বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি যেখানে-সেখানে জমে থাকে এবং খুব সামান্য পানিতেই এই মশা বংশ বিস্তার করতে পারে। নাগরিক সচেতনতার অভাব থাকায় মানুষ যত্রতত্র পলিথিনের ব্যাগ, ডাবের খোসা, বোতল, ক্যান, পরিত্যক্ত টায়ার বা বিভিন্ন ধরনের পাত্র ফেলে রাখে। সেগুলোতে জমা বৃষ্টির পানিতে এডিস মশা অনায়াসে বংশ বিস্তার করতে পারে। এ ছাড়া অনেক বাড়ির ছাদে, বারান্দায় ফুলের টব রাখা হয় এবং সেগুলোতে পানি জমে থাকে। অনেকের ঘরেও ছোটখাটো পাত্রে পানি জমে থাকে।
নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে তো রীতিমতো মশার চাষ করা হয়। আর দুই বাড়ির মধ্যখানে সরু জায়গায় রীতিমতো আবর্জনার স্তূপ জমে থাকে। অনেক বাড়ির সানসেটেও আবর্জনা জমে থাকতে দেখা যায়। এসব জায়গায় এডিস মশার বংশ বিস্তার দ্রুততর হয়। ফলে বর্ষায় দ্রুত এডিস মশার ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়।

এ বছরের শুরুতেই বৃষ্টির ধরন এবং ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখে কীটতত্ত্ববিদরা সাবধান করেছিলেন যে মশা নিধনে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। বাস্তবে হয়েছেও তাই। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারেনি। বেশি সংক্রমণের এলাকাগুলোতে যে ধরনের ক্রাশ প্রগ্রাম চালানো প্রয়োজন ছিল, তা দেখা যায়নি। মশার ওষুধের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন রয়ে গেছে।

আমাদের মনে রাখতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও পৃথিবীব্যাপী মশাবাহিত রোগব্যাধি দ্রুত বাড়ছে। তাই যথাসময়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতেই হবে। আমরা আশা করি, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মশা নিধনে দ্রুত ক্রাশ প্রগ্রাম চালানো হবে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোরও বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

জননিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

    আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি
শেয়ার
জননিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ভয়াবহ পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, রাহাজানি, খুনখারাবি ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে। বাড়ছে কিশোর গ্যাং নামে জীবন অতিষ্ঠকারী অপরাধচক্রের সংখ্যা। মানুষ এখন নিজের ঘরবাড়িতেও নিরাপদ নয়।

গত দুদিনে কালের কণ্ঠে এ রকম বেশ কিছু খবর প্রকাশিত হয়েছে। বগুড়া সদরের হরিগাড়ী ইসলামপুর এলাকায় বুধবার রাতে কিছু সন্ত্রাসী বাড়িতে ঢুকে লাইলী খাতুন (৭০) ও হাবিবা বেগম (২২) নামের একই পরিবারের দুই নারীকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হত্যা করেছে। মঙ্গলবার রাতে কুমিল্লার দেবীদ্বার পৌর এলাকার সাইলচর গ্রামে ঘরে ঢুকে এক ঘুমন্ত নারীকে মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় এক ছাত্রদলকর্মীকে হত্যা করা হয়।
বুধবার দিনাজপুরে ভ্যানচালকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। দুর্বৃত্তরা তাঁর ভ্যানটিও নিয়ে গেছে। রাজশাহীর পুঠিয়ায় পাওয়া গেছে ছয় বছরের এক শিশুর লাশ। ভোলা, মাদারীপুরের রাজৈর, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
তাদের হত্যা করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া রয়েছে আরো অনেক হত্যা বা লাশ উদ্ধারের খবর। এই অবস্থায় কি শহর, কি গ্রাম কোথাও মানুষ স্বস্তিতে নেই।

কালের কণ্ঠে প্রকাশিত অপর এক খবরে দেখা যায়, রাজধানীতে কিশোর গ্যাং সদস্যরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সর্বশেষ গত বুধবার এক ঘণ্টার ব্যবধানে মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকায় দুজনকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশ ঘটনার সঙ্গে কিশোর গ্যাং সদস্যদের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে। ডিএমপি সদর দপ্তর সূত্র বলছে, রাজধানীর প্রতিটি এলাকায় কিশোর গ্যাং সদস্য রয়েছে। ঢাকার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ৪০ শতাংশ করে কিশোর গ্যাং সদস্যরা। বর্তমানে প্রতিটি এলাকায় পাঁচ শতাধিক কিশোর গ্যাং সদস্য রয়েছে। সব মিলে রাজধানীতে অন্তত ২০ হাজার কিশোর গ্যাং সদস্য রয়েছে। তাদের হাতে এখন পিস্তলসহ আধুনিক ধারালো অস্ত্র রয়েছে। এসব অস্ত্রের মধ্যে চাপাতি, বেকি, বার্মিজ চাকু ও কিরিচ রয়েছে। পুলিশের এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ঢাকার মধ্যে মোহাম্মদপুর ও আদাবরে কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া রাজধানীর ৫০ থানা এলাকায় কিশোর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড আগের চেয়ে বেড়েছে।

জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। মানুষ একবেলা কম খেয়ে হলেও নিরাপদে ও মানসম্মান নিয়ে জীবনযাপন করতে চায়। আমরা আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেবে।

মন্তব্য

পুনরাবৃত্তি যেন না হয়

    গোপালগঞ্জে সহিংসতা
শেয়ার
পুনরাবৃত্তি যেন না হয়

গোপালগঞ্জ শহরে এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রা ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত বুধবারের হামলা-সংঘর্ষের পর থেকে কিছু সময়ের বিরতি দিয়ে কারফিউ চলছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত গোপালগঞ্জে কারফিউ চলমান থাকবে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে যৌথ বাহিনী গতকাল রাত পর্যন্ত অন্তত ২৫ জনকে আটক করেছে।

হামলায় জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় রাজনৈতিক দলসহ নানা মহল থেকে নিন্দা ও প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্ত ও সমর্থকদের হামলায় হতাহতের ঘটনায় গভীর নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। পাশাপাশি এই ঘটনাসহ সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার সঙ্গে আসন্ন নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র কাজ করছে বলেও মনে করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুধীমহল।

বিএনপির উচ্চ মহলের সন্দেহ, হামলা-সংঘর্ষের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো, বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নিয়ে কটূক্তি এবং দলের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার নির্বাচন ঠেকানোর লক্ষ্যে পরিচালিত একটি নীলনকশার অংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, নির্বাচন ঠেকানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কারা এই ষড়যন্ত্রকারী তা তাঁরা জানেন। কিন্তু পরিস্থিতি জটিল করে তুলতে চাইছেন না বলে কারো নাম উল্লেখ করছেন না।
দলটির অন্তত তিনজন জ্যেষ্ঠ নেতা মনে করেন, কয়েকটি রাজনৈতিক দল দেশে এক ধরনের অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে, এটা পরিষ্কার। গত বুধবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও নেতারা বলেন, পরিকল্পিতভাবেই একটি মহল দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচন ঠেকানো। কারণ নির্বাচন ছাড়াই যারা ক্ষমতার স্বাদ পাচ্ছে, নির্বাচনের পর তাদের সেই ক্ষমতা নাও থাকতে পারে।

গোপালগঞ্জের এই ঘটনায় অন্যান্য বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে সেনাবাহিনী অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে কার্যকর যে ভূমিকা নিয়েছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হওয়ায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও স্থানীয় পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে হস্তক্ষেপ করে এবং প্রাথমিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। তবে প্রশ্ন উঠেছে গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়ে। গোয়েন্দারা কেন আগে থেকে কিছুই জানতে পারল না? আগেই কেন তা প্রতিরোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হলো না? বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, গোয়েন্দা তথ্য ছিল। তবে এত পরিমাণ যে হবে ওই তথ্য হয়তো ছিল না। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, এটা কোনো পরিকল্পিত হামলা ছিল না। আমাদের কাছে সব ধরনের তথ্য ছিল এবং আমাদের প্রস্তুতিও ছিল। তবে এ ঘটনায় কারো গাফিলতি থাকলে খতিয়ে দেখা হবে এবং ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী যুবদল আয়োজিত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, এখন গণ-অভ্যুত্থানের শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করার সাহস দেখানো হচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে ইস্যু সৃষ্টি করে দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ঐতিহ্যবাহী দল বিএনপিকে কলঙ্কিত করার অপচেষ্টা দেখতে পাচ্ছি। তিনি দুঃখ করে বলেন, আমরা জুলাই ছাত্র-অভ্যুত্থান সংগঠিত করেছিলাম ডেমোক্রেসির জন্য। এখন দেখতে পাচ্ছি সারা দেশে ডেমোক্রেসির পরিবর্তে মবক্রেসির রাজত্ব চলছে।

আমরা চাই গোপালগঞ্জে হামলার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। পাশাপাশি এই ঘটনার সঙ্গে ষড়যন্ত্র ও ইন্ধনের যেসব অভিযোগ উঠছে, সেগুলো জাতির সামনে স্পষ্ট করা হোক। এমন সহিংসতার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, সে জন্য গোয়েন্দা ব্যর্থতার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে হবে।

মন্তব্য

বৈষম্য কাম্য নয়

    নারী শহীদদের পরিবারে হাহাকার
শেয়ার
বৈষম্য কাম্য নয়

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা স্বৈরশাসনের পতন হয়েছিল। আর এই অভ্যুত্থানের সাফল্যের পেছনে আছে অনেক করুণ কাহিনি। অনেক রক্ত ঝরেছে। অনেক মা তাঁর সন্তান হারিয়েছেন, ভাই বোন হারিয়েছে, সন্তান মা-বাবা হারিয়েছে।

গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জুলাই আন্দোলনে নিহত হওয়া ১১ জন নারীর কথা। তাঁদের মধ্যে ১০ জনের পরিচয় মিললেও একজনের পরিচয় এখনো জানা যায়নি। তাঁর মরদেহ পড়ে আছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে। বছর ঘুরে এলেও হাহাকার থামেনি তাঁদের পরিবার কিংবা স্বজনদের।
ভুলতে পারেননি শিক্ষক কিংবা সহপাঠীরা।

প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজধানীর মিরপুর দুয়ারীপাড়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন রিতা আক্তার (১৮)। বাবা রিকশা চালিয়ে আর মা বাসাবাড়িতে কাজ করে মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। গত বছর ৫ আগস্ট তিনি যোগ দিয়েছিলেন লং মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচিতে।

কিন্তু মিরপুর এলাকায় পুলিশের গুলি ঝাঁঝরা করে দেয় তাঁকে। মিরপুরের হজরত শাহ আলী মহিলা কলেজে ম্যানেজমেন্ট বিভাগে অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন মেহেরুন নেছা তানহা। ৫ আগস্ট আনন্দ মিছিল শেষে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে জানালা দিয়ে আসা গুলিতে প্রাণ হারান তানহা। ছয় বছরের শিশু রিয়া গোপ ১৯ জুলাই নিজ বাসার ছাদে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল নাইমা সুলতানা।
১৯ জুলাই বিকেলে নিজ বাসার বারান্দায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায় নাইমা। সাভার এলাকার এইচএসসি পরীক্ষার্থী নাফিসা হোসেনও পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায়। রাজধানীর শান্তিনগরে ১৪ তলা ভবনের সাততলায় গৃহকর্মীর কাজ করতেন ১৮ বছর বয়সী লিজা। ১৮ জুলাই বারান্দায় দাঁড়িয়ে আন্দোলন দেখতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। ২২ জুলাই হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। ২০ জুলাই বিকেলে চিটাগাং রোডে নিজের বাসার পাশে হৈচৈ শুনে বারান্দায় গিয়ে উঁকি দেন সুমাইয়া আক্তার। গ্রিলের ভেতর দিয়ে গুলি এসে তাঁর প্রাণপ্রদীপ নিভিয়ে দেয়। তিনি ছিলেন আড়াই বছর বয়সী এক শিশুসন্তানের জননী। ১৯ জুলাই রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় বাসার ছাদে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান নাছিমা আক্তার (২৪)। শনির আখড়ায় বসবাসকারী শাহিনূর বেগম (৫৭) ২২ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় ২০ জুলাই শহীদ হন মায়া ইসলাম (৬০)।

অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব নিয়ে এখন এক ধরনের কাড়াকাড়ি চলছে। কিন্তু আসল কৃতিত্ব যাঁদের, যাঁরা জীবন দিয়েছেন, তাঁদের পরিবারগুলো কেমন আছে সেই খোঁজ কজন রাখেন? যে বৈষম্য বিলোপে এত আত্মত্যাগ, আমরা চাই না শহীদদের পরিবারগুলো সেই বৈষম্যের শিকার হোক।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করুন

    গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলা
শেয়ার
জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করুন

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পূর্বনির্ধারিত পদযাত্রা ও সমাবেশে হামলার ঘটনা আবারও প্রমাণ করেছে পতিত হলেও স্বৈরাচারের চরিত্র পাল্টায়নি। তাদের হামলায় বুধবার গোপালগঞ্জ শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলা হামলা-সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন।

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ এবং তাদের সমর্থকরা দফায় দফায় এই হামলা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে গোপালগঞ্জে এক পর্যায়ে কারফিউ জারি করতে হয়।

গোপালগঞ্জে এনসিপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বুধবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানো হয় এবং হামলাকারীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেওয়া হয়।

ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল। হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, পতিত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের সন্ত্রাসীরা এই ন্যক্কারজনক হামলা চালিয়েছে। বুধবার এক বিবৃতিতে হামলাকারী দুষ্কৃতকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আহবানও জানান তিনি। এনসিপির মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের গাড়িবহর গোপালগঞ্জে পৌঁছার আগেই সকাল সাড়ে ৯টায় সদর উপজেলার উলপুর-দুর্গাপুর সড়কের খাটিয়াগড় চরপাড়ায় ছাত্রলীগের কর্মীরা পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তখন তিন পুলিশ সদস্য হামলার শিকার হন। সকাল ১১টায় টেকেরহাট সড়কের কংশুরে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িতেও হামলা চালালে গাড়িচালক মো. মইন আহত হন। কেন্দ্রীয় নেতারা দুপুর ২টার পর সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন এবং সমাবেশ শুরু হয়। বিকেল পৌনে ৩টায় সমাবেশ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কিছু সশস্ত্র ব্যক্তি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার চেষ্টা চালায়।

চারদিক থেকে এনসিপির নেতাকর্মী ও পুলিশের গাড়ি আটকে দেয় তারা। ওই সময় সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। দফায় দফায় হামলা ও সংঘর্ষে অবরুদ্ধ এনসিপির শীর্ষ নেতারা বিকেল ৫টার পর সেনাবাহিনী-র‌্যাব-পুলিশের সহায়তায় শহর থেকে বের হয়ে খুলনায় যান। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গুলিবিদ্ধ হয়ে চারজন প্রাণ হারিয়েছে এবং ৯ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

গোপালগঞ্জের ঘটনায় আবারও প্রমাণ হলো দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি কতটা জরুরি। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে সেনাবাহিনী গোপালগঞ্জের সহিংসতাকে যেভাবে মোকাবেলা করেছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তাদের সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে এনসিপির নেতাকর্মীরা রক্ষা পেয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ও পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেছে।

নিকট অতীতে দেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। মতপ্রকাশের অধিকার নিষ্ঠুরভাবে দমন করা হয়েছিল। দেশের সম্পদ লুটপাট করা হয়েছিল। আর এসব কারণে গত বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে দেশের মানুষ একযোগে প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিল। দেড় দশকের স্বৈরশাসনের অবসান হয়েছিল। তারা আবারও নানাভাবে মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে। দেশে অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। এসব অপচেষ্টা প্রতিরোধে দল-মত-নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ