কোনো দেশ বা জাতিগোষ্ঠী কতটা সভ্য, রুচিশীল ও উন্নত তার একটা প্রধান মাপকাঠি হচ্ছে তার ঐতিহ্যপ্রীতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের সফল উদ্যোগ। সভ্য মানুষ নিজেদের ঐতিহ্য নিয়ে গর্ব অনুভব করে। নিজেদের এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণার পাথেয় খুঁজে পায় নিজস্ব ঐতিহ্যের মধ্যে। কিন্তু আমরা যেন সভ্যতার সেই চিরায়ত ধারা থেকে অনেক দূরে।
বিজ্ঞাপন
অথচ উন্নত দেশ ও জাতিগুলো নিজেদের ঐতিহ্য বা প্রাচীন নিদর্শনগুলো আগলে রাখে। নিজেদের সম্ভ্রান্ত পরিচয়কে শাণিত করে। গর্বের সঙ্গে সেগুলো তুলে ধরে। তারা যে একটি প্রাচীন সভ্য জাতিসত্তার উত্তরাধিকারী, সেটি তারা অহংকারের সঙ্গে বলে বেড়ায়। কিন্তু আমরা একের পর এক আমাদের সমৃদ্ধ অতীতকে অস্বীকার করছি। আমাদের ঐতিহাসিক নিদর্শন ও পুরাকীর্তিগুলো ধ্বংস করে চলেছি। গতকাল কালের কণ্ঠে এমনই এক ঐতিহ্যবিনাশী কর্মকাণ্ডের খবর প্রকাশিত হয়েছে। খবরটি এ দেশের সচেতন মানুষের মনোবেদনার অন্যতম কারণ।
খুলনা মহানগরীর মহেশ্বরপাশা স্কুল অব আর্ট ভবনটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠান ১৯০৪ সালে শিল্পী শশীভূষণ পাল প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর জমিতেই গড়ে তোলা এই প্রতিষ্ঠানটি পূর্ববঙ্গের প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক চারুকলা শিক্ষার কেন্দ্র। চলতি বছরের শুরুতে ভবনটি ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলে খুলনার নাগরিক সমাজ ঐতিহ্যবাহী এই ভবন রক্ষা করে নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানায়। একই সঙ্গে তারা ভবনটিকে আর্ট গ্যালারি হিসেবে গড়ে তোলারও দাবি জানায়। ভবনটির পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে একটি কারিগরি কমিটিও গঠন করা হয়। কিভাবে ভবনটি রক্ষা করা যায় সে বিষয়ে কমিটির পরামর্শ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ভবনটি ভেঙে পড়েছে দাবি করে ভবনটির চিহ্ন মুছে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আমরা আশা করি, সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা হবে।