জনগণের দোরগোড়ায় উন্নত মানের স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে গড়ে উঠেছিল কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক। কিন্তু যথাযথ পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অভাবে এসব ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা থেকে। গতকালের কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলার ৪৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক ভবনের মধ্যে ৪৩টিই বেহাল।
বিজ্ঞাপন
দেশের বেশির ভাগ মানুষ গ্রামাঞ্চলে বাস করে। তাদের বেশির ভাগের পক্ষেই বেসরকারি ক্লিনিকের ব্যয়বহুল স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। সেই বিবেচনা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন শুরু হয়। এটি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকারও ছিল। ১৯৯৯ সালে এই ক্লিনিক স্থাপন কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। অব্যবহৃত পড়ে থাকায় ভবনগুলোও ধীরে ধীরে নষ্ট হতে থাকে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে ক্লিনিকগুলো আবার চালু করা হয়। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নেই বললেই চলে। বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলায় সরকারিভাবে মোট ৪৪টি ক্লিনিক স্থাপিত হয়। আর ২০২১ সালে আমতলীতে ব্যক্তি অনুদানে আরো দুটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মিত হয়। ফলে মোট ক্লিনিকের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৬। এর মধ্যে ৪৩টি ক্লিনিক ভবনই বেহাল। অনেক স্বাস্থ্যকর্মী স্থানীয় বিদ্যালয় বা অন্য কোনো স্থানে বসে রোগী দেখছেন।
দেশের বেশির ভাগ মানুষ এখনো সরকারি স্বাস্থ্যসেবার ওপর নির্ভরশীল। অথচ এই খাতটির অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। শুধু ইউনিয়নভিত্তিক কমিউনিটি ক্লিনিক নয়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রদত্ত চিকিৎসাসেবা নিয়েও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। অর্ধেকের বেশি চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকেন। বাকিদেরও অনেকে হাসপাতালে এসে সই করে চলে যান। সরকারের বিনা মূল্যে বিতরণের ওষুধ রোগীরা পায় না। হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স, রোগ নির্ণয় যন্ত্র বা চিকিৎসা সরঞ্জাম অকেজো হয়ে থাকে। ইচ্ছাকৃতভাবে অকেজো করে রাখার অভিযোগও কম নয়। দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকের অনুসন্ধানেও উঠে এসেছে দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র। রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থার চিত্র এমন হলে দরিদ্র সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?
আমরা চাই, বরগুনার দুটি উপজেলার ৪৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক যথাযথভাবে চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হোক। সারা দেশে কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সমস্যাগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করা হোক এবং সেসব সমস্যা সমাধানে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হোক। আমাদের মনে রাখতে হবে, দেশে যে অগ্রযাত্রার সূচনা হয়েছে, জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন ছাড়া সেই অগ্রযাত্রা টেকসই হবে না। আর জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের চাবিকাঠি হচ্ছে গ্রাম পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা।