দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে একসময় প্রধান বাধা ছিল অবকাঠামো। সাম্প্রতিক সময়ে অবকাঠামো উন্নয়নে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অনেক উদ্যোগ চলমান রয়েছে। ফলে অবকাঠামোর দুর্বলতা অনেকটাই কমেছে।
বিজ্ঞাপন
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের পক্ষে সিপিডি প্রতিবছর বাংলাদেশে জরিপটি পরিচালনা করে। জরিপে ১০টি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে অবকাঠামো, প্রতিষ্ঠান, নিরাপত্তা, আর্থিক বিষয়াদি, ব্যবসায় বিনিয়োগ, প্রতিযোগিতা, ব্যবসা পরিচালনায় সুশাসন, মানবসম্পদ গড়ে তোলা, কাজের পরিবেশ ও কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও ঝুঁকি। করোনার নতুন ঢেউ ব্যাপকতা পাওয়ায় বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম এ বছর ‘বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা রিপোর্ট ২০২১-২২’ প্রকাশ করছে না। তাই সংস্থাটির সম্মতি নিয়ে সিপিডি এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বলে জানানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্নীতির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ছোট ব্যবসায়ীরা। করোনা মহামারির কারণে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বড় ব্যবসায়ীরা তা অনেকটা কাটিয়ে উঠলেও ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা অনেকটাই পিছিয়ে আছেন। তাঁদের এভাবে পিছিয়ে থাকার জন্যও প্রধানত দায়ী দুর্নীতি। কারণ দুর্নীতি বড় ব্যবসায়ীদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ছোট ব্যবসায়ীদের বেশি ক্ষতি করছে। তাঁদের মতামতে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের শতভাগই মনে করেন দুর্নীতি তাঁদের ব্যবসার প্রধান বাধা।
বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ অনুকূল না হওয়ায় দেশি-বিদেশি কোনো বিনিয়োগই কাঙ্ক্ষিত গতি পাচ্ছে না। সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানিসহ অবকাঠামোর অনেক উন্নয়ন হওয়ার পরও বিনিয়োগে গতি না আসাটা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিশ্বব্যাংক ২০১৯ সালে ১৯০টি দেশের মধ্যে ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ নামে যে তালিকাক্রম বা সূচক প্রকাশ করে তাতে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৭৬তম, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন। এমনকি বাংলাদেশ আফগানিস্তানেরও (১৬৭তম) নিচে ছিল। বাংলাদেশের এমন পিছিয়ে থাকার কারণ যে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দুর্নীতি তা আগেও অনেক জরিপ ও গবেষণায় উঠে এসেছে। ব্যবসায়ের পরিবেশ উন্নয়নে অতীতে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের প্রচলনসহ সূচক উন্নয়নে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু পরিস্থিতির যে খুব একটা উন্নতি হয়নি তা সিপিডির সর্বশেষ জরিপেও সেই সত্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে তা কিভাবে সম্ভব হবে। আমরা আশা করি, আমলাতন্ত্রের দক্ষতা বাড়াতে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হবে। এটির সঙ্গে দুর্নীতির মূলোৎপাটনে আরো কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।