ঢাকা, বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫
৭ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৭ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫
৭ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৭ মহররম ১৪৪৭

অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হোক

  • এগিয়ে আসছে জাতীয় নির্বাচন
অন্যান্য
অন্যান্য
শেয়ার
অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হোক

জাতীয় সংসদের পরবর্তী নির্বাচন ক্রমেই নিকটবর্তী হচ্ছে। নির্বাচন সম্পর্কিত নানা বিষয়ে আলাপ-আলোচনা ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি নেতারা এর মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে। অন্যথায় তাঁরা সেই নির্বাচনে অংশ নেবেন না।

বিএনপির এই ঘোষণার সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন আরো কিছু রাজনৈতিক দলের নেতারা। এদিকে নির্বাচন কমিশন গঠনে সংবিধান অনুযায়ী দ্রুত আইন প্রণয়নের দাবিও উঠেছে। এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতে একটি রিটও করা হয়েছে। এদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী।
কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রশ্নই ওঠে না। এমন অবস্থায় নির্বাচন যত নিকটবর্তী হবে, তত বেশি সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। অতীতের অনেক নির্বাচনেই এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে। তখন জাতিসংঘসহ অনেক দেশের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের প্রধান পক্ষগুলোর মধ্যে সমঝোতা সৃষ্টির লক্ষ্যে আলাপ-আলোচনা করেছে।
এমন এক প্রেক্ষাপটে ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বলেছেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন কেমন হওয়া উচিত তা বিদেশিরা বলে দেবে না। বাংলাদেশের নির্বাচন পরিচালিত হবে দেশের সংবিধান, প্রচলিত বিধি-বিধান ও অংশীজনদের মতামতের ভিত্তিতে। গত বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের সংগঠন ডিকাব আয়োজিত ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

নির্বাচন নিয়ে দেশের মানুষ অতীতের সংঘাতময় পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না। আবার কিছু দলের বিদেশিদের কাছে ধরনা দেওয়া এবং সংঘাত থামাতে বিদেশিদের ঝাঁপিয়ে পড়াকেও অনেকেই কাঙ্ক্ষিত মনে করেন না।

সে ক্ষেত্রে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের বক্তব্য যথার্থ। তিনি বলেছেন, সংবিধানের মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটে এমনভাবে নিজস্ব প্রক্রিয়ায় নির্বাচন করার মতো অনেক দক্ষতা ও প্রতিভা বাংলাদেশের আছে। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সবার অবাধ অংশগ্রহণ জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাজ্য আগামী নির্বাচন আয়োজনে যথাসম্ভব সমর্থন দিয়ে যাবে। আমরা মনে করি, নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার প্রাথমিক শর্তগুলো সরকারকেই পূরণ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে উচ্চ আদালত কী পর্যবেক্ষণ দেন তা দেখে সেই অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিএনপিসহ যেসব দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলেছে, তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। ক্ষমতাসীন বা বিরোধী দল সবাইকেই সংবিধান ও প্রচলিত বিধি-বিধানকে সম্মান জানাতে হবে। একই সঙ্গে অনড় অবস্থানে না থেকে সমঝোতার ভিত্তিতে এগিয়ে আসতে হবে।

আমরা আশা করি, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন একটি মাইলফলক নির্বাচন হিসেবে চিহ্নিত হবে। এই নির্বাচনে সব দল ও মতের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকবে, এমনটাই আমরা প্রত্যাশা করি। অতীতের ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে এবং নির্বাচনী বিধি-বিধান কঠোরভাবে পালন করবে। সেই নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আমরা অবশ্যই বিদেশিদের স্বাগত জানাব।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

পরিস্থিতি মোকাবেলায় উদ্যোগ নিন

    ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নামার আশঙ্কা
শেয়ার
পরিস্থিতি মোকাবেলায় উদ্যোগ নিন

বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা এখন রীতিমতো আতঙ্কগ্রস্ত। আগামী ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর নতুন ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের বিষয়টি কার্যকর হবে। কিন্তু শুল্ক কমানোর ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। গত রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক : কোন পথে বাংলাদেশ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে দেশের অন্যতম রপ্তানিকারক ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে আজাদ বলেন, ৪০ বছরের ব্যাবসায়িক জীবনে তিনি রপ্তানি খাতে এমন সংকট কখনো দেখেননি।

আলোচনায় অনেক বক্তাই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দর-কষাকষির ব্যর্থতাকে অত্যন্ত হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৯০ শতাংশই তৈরি পোশাক। আর তার প্রধান গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ৮৬৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ১৮ শতাংশের কিছু বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যের ৮৫ শতাংশের বেশি ছিল তৈরি পোশাক। এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে রীতিমতো বিপর্যয় নেমে আসবে। উদ্যোক্তারা অভিযোগ করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনাকারী বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলটি আমলানির্ভর। সেখানে ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা না থাকায় আলোচনায় ইতিবাচক ফল আসেনি।
অন্যদিকে বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভিয়েতনামে প্রথমে ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়া হলেও সমঝোতার মাধ্যমে তাদের শুল্ক করা হয়েছে ২০ শতাংশ। ফলে বাংলাদেশকে ভিয়েতনামের চেয়ে অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। এটি বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অনেক কমিয়ে দেবে এবং রপ্তানি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো এরই মধ্যে আরোপিত শুল্কের আংশিক বহনের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। কিন্তু আমাদের লভ্যাংশ এত কম যে শুল্ক শেয়ার করার মতো সক্ষমতাই নেই।

বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান জানান, তাঁদের সংগঠনের এক হাজার ৩২২টি কারখানার একটি বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর। মার্জিন মাত্র ১.২ থেকে ১.৫ শতাংশ। শুধু পোশাকই নয়, অন্যান্য রপ্তানিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের এক নম্বর বাজার। জুতা রপ্তানিতে বছরে ৪০০ মিলিয়ন ডলার আসে। এটি কিভাবে এক দিনে নতুন বাজার দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যাবে?

আমরা মনে করি, বাংলাদেশের অর্থনীতির স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্রুত একটি সমাধানে আসতে হবে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে পরিস্থিতি মোকাবেলায় করণীয় নির্ধারণ করতে হবে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

গণতান্ত্রিক উত্তরণে ঐক্য জরুরি

    রাজনীতি অঙ্গনে বিভক্তি বাড়ছে
শেয়ার
গণতান্ত্রিক উত্তরণে ঐক্য জরুরি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। সেই সরকারের এক বছর অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু যে গণতান্ত্রিক, দুর্নীতিমুক্ত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে মানুষ বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়েছিল, সেই স্বপ্ন এখনো অধরাই রয়ে গেছে।

জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির মধ্যেও বিভেদ ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। সংঘাত-সংঘর্ষের পথে এগোচ্ছে। তাই জুলাই অভ্যুত্থানের অর্জন বা প্রাপ্তি নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনা এবং রাজনীতিকে শুদ্ধ করার লক্ষ্য নিয়ে শুরু করে নানামুখী সংস্কার, কিন্তু সেখানেও রয়েছে বিস্তর মতপার্থক্য।

প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে, কিন্তু সেখানেও রয়েছে দ্বিধাবিভক্তি। বাড়ছে বিভাজন। স্পষ্ট হচ্ছে নতুন নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণও। জামায়াতে ইসলামীসহ জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী ডান ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের ইস্যুতে এক হলেও ভিন্নমত পোষণ করে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো।
গত শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশে এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী ডান ও ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু আমন্ত্রণ পায়নি বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো। জামায়াতের পক্ষ থেকে কারণ হিসেবে বলা হয়, বিএনপি পিআর পদ্ধতির পক্ষে না থাকায় তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। গত ২৮ জুন একই স্থানে ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশেও জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, গণ অধিকার পরিষদ, এবি পার্টি, নেজামে ইসলাম পার্টি, খেলাফত মজলিসের শীর্ষ সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো আমন্ত্রণ পায়নি।

সার্বিক এই পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবাই একমত হবেএই ভ্রান্ত ধারণা থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং এই সংস্কারপ্রক্রিয়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি স্পষ্ট করে তুলেছে।

নির্বাচনের সময় যত এগিয়ে আসবেএই বিভাজন আরো বাড়বে। রাজনীতিতে ভিন্নমত স্বাভাবিক, কিন্তু কোনো পক্ষের পূরণযোগ্য নয় এমন দাবি পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলতে পারে। গত শনিবার রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ মিলনায়তনে জুলাই আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী আয়োজিত আলোচনাসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই প্রশ্ন তোলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো একটি অংশের সহায়তায় দেশে কেউ উদ্দেশ্যমূলক বা বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে কি না।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক মনে করেন, একটি ভ্রান্ত ধারণা থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং এই সংস্কারপ্রক্রিয়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি স্পষ্ট করে তুলেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক কে এম মহিউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন একটি নিরপেক্ষ সরকার। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। এনসিপি, জামায়াতকে নানাভাবে এই সরকার পৃষ্ঠপোষকতা করছে বলে অনেকে মনে করেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অর্জনকে ধরে রাখতে হবে। লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে যেতে হবে। এ জন্য অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির ঐক্য অত্যন্ত জরুরি। আমরা মনে করি, জনপ্রত্যাশা বিবেচনায় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে এগিয়ে যাবে।

মন্তব্য

দ্রুত নিবন্ধন ও নীতিমালা করুন

    সড়কের বিভীষিকা ইজি বাইক
শেয়ার
দ্রুত নিবন্ধন ও নীতিমালা করুন

সড়কে প্রাণহানি বাড়ছে প্রতিদিন। প্রধান কারণ নছিমন, করিমন, আলমসাধু ও ভটভটির মতো দেশীয়ভাবে তৈরি যানবাহন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ব্যাটারিচালিত ইজি বাইক ও রিকশা। মৃত্যুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এসব তিন চাকার যানবাহন।

নিবন্ধনহীন এসব যানবাহনের চালকদের নেই কোনো প্রশিক্ষণ, জানে না সড়কের নিয়ম-কানুন। ফলে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। সাধারণত এজাতীয় যানবাহনগুলো কারিগরিভাবে ব্যস্ত সড়কে চলাচলের উপযোগী নয়। এগুলোর ব্রেক, স্টিয়ারিং ও সাসপেনশন মানসম্মত না হওয়ায় দ্রুতগতির যানবাহনের সঙ্গে সড়কে চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে।
মারা যাচ্ছে যাত্রী ও চালকের পাশাপাশি পথচারীরা। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে ২০২৩ সালে ২৮ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে ইজি বাইক নামে পরিচিত বাহনের কারণে। কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় হু হু করে বাড়ছে এজাতীয় বাহনও।

বুয়েটের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবাধে এ ধরনের বাহন বেড়ে যাওয়ায় প্রাণহানিও বাড়ছে।

নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না রাখায় ইজি বাইকের অবাধ আমদানির পাশাপাশি দেশেও প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হচ্ছে। অতীতে বারবার দাবি জানানোর পরও সরকার তা সড়ক ও মহাসড়ক থেকে উচ্ছেদ করতে পারেনি। কারণ এরই মধ্যে এ ধরনের বাহন ও তার ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী অনেক বেড়ে গেছে। বন্ধ করতে গেলে শুরু হয় সড়ক অবরোধসহ নানা আন্দোলন। কিন্তু এভাবে অবাধ প্রাণহানির লাগাম টানাও প্রয়োজন।

২০১৫ সালের ১ আগস্ট থেকে ২২টি জাতীয় মহাসড়কে অটোরিকশাসহ তিন চাকার সব বাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। হাইকোর্ট শ্যালো মেশিনের ইঞ্জিনে নির্মিত এসব যানবাহন বন্ধে ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি আদেশ দিলেও এগুলো বন্ধ করা যায়নি। মহাসড়কে চলা এসব বাহনকে নিবন্ধন দেওয়ার জন্য ২০২১ সালের নভেম্বরে খসড়া নীতিমালা করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এতে বলা হয়েছিল, কারিগরি মানোন্নয়নের শর্তে এলাকা ও সড়ক ভেদে এ ধরনের নির্দিষ্টসংখ্যক যানবাহন চলতে পারবে। তবে এগুলোর নিবন্ধন এখনো দেওয়া শুরু করেনি সরকার।

২০১৫ সালে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে এসব গাড়ি আমদানি বন্ধের প্রস্তাব করা হয়। তবে কর্মসংস্থান রক্ষার যুক্তিতে জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীদের বিরোধিতায় তা অনুমোদন করা যায়নি। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে বিআরটিএর দুর্ঘটনা হ্রাসকল্পে ছোট গাড়ি নিয়ন্ত্রণে সুপারিশ প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে জানা যায়, সারা দেশে অটোরিকশাসহ কমপক্ষে ১৫ লাখ ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যানবাহন চলছে। এতে অন্তত ২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তাই আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা বিবেচনায় এসব যানবাহনকে অনুমতি দিয়ে চালকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষা করা যেমন জরুরি, একইভাবে নিরাপদ সড়কও জরুরি। মৃত্যুর মিছিল ক্রমাগত বেড়ে চলাটাও কাম্য নয়। যানজট কমানো এবং সড়কে যানবাহনের গতি রক্ষাও জরুরি। ইজি বাইক নামক যানবাহনগুলোর নিরাপত্তার মানোন্নয়ন ও চালকদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি এগুলোকে নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হবে।

মন্তব্য

সংকট কাটাতে উদ্যোগ নিন

    ব্যবসা-বাণিজ্যে অচলাবস্থা
শেয়ার
সংকট কাটাতে উদ্যোগ নিন

দেশের শিল্পোদ্যোক্তারা চরম শঙ্কা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্যের সংকটজনক অবস্থায় তাঁরা কোনো আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না। দেশের অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও মূল্যস্ফীতি, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট, ঋণের উচ্চ সুদহার, টাকার অবমূল্যায়ন, ডলার সংকট এবং দ্রব্যমূল্যের লাগামছাড়া ঊর্ধ্বগতি ব্যবসার খরচ ক্রমেই বাড়িয়ে চলেছে। আর রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বিনিয়োগ করতেও সাহস পাচ্ছেন না।

আইন-শৃঙ্খলার অবনতিও দুর্ভাবনার কারণ হচ্ছে। চলমান অস্থিরতায় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের বিক্রিতে ধস নেমেছে। লোকসানের মুখে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অনেকগুলো বন্ধ হওয়ার পথে।
ফলে চাকরি হারাচ্ছেন কর্মীরা।

চলমান সংকটে নতুন মাত্রা যোগ করেছে মার্কিন শুল্কনীতি। আগামী ১ আগস্ট থেকে মার্কিন বাজারে পণ্য রপ্তানিতে ৩৫ শতাংশ (রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ) শুল্ক আরোপিত হবে। এর ফলে রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানাগুলোকে নিশ্চিতভাবেই বড় ধরনের বিপর্যয় মোকাবেলা করতে হবে।

পোশাক খাতের সংগঠন বিজিএমইএর নেতাদের মতে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। একের পর এক কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে। ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে মন্দা ও চাহিদা হ্রাস বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ট্রেড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক আশিকুর রহমান তুহিন কালের কণ্ঠকে বলেন, আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে এমনিতেই তৈরি পোশাকের বিশ্ববাজারে মন্দা থাকে। এ সময় মার্কিন ৩৫ শতাংশ শুল্কে দেশটির বাজারের ক্রেতাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
ফলে কোনো কোনো ক্রেতা কার্যাদেশ স্থগিত বা বিলম্বিত করছেন। ক্রেতাদের এমন আচরণে স্থানীয় রপ্তানিকারকরা শঙ্কায় পড়েছেন।

ব্যবসায় মন্দা এবং বিনিয়োগ স্থবিরতার কারণে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানিও বহুলাংশে কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য বা ব্যালান্স অব পেমেন্টের (বিওপি) হালনাগাদ পরিসংখ্যানে জানা যায়, বিগত অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) দেশে মূলধনী যন্ত্রের আমদানি কমেছে ১৯.৬ শতাংশ। এতে হয়তো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা বাড়তে পারে, কিন্তু দেশের ব্যবসা ও বিনিয়োগে যে ধস নামছে, তা সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যও এক অশনিসংকেত। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন শিল্প ও বণিক সমিতির ফেডারেশন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু কালের কণ্ঠকে বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত না হওয়ায় দেশের বিনিয়োগে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। এ সময় কলকারখানা বন্ধ হয়েছে; বেকার হয়েছে কয়েক লাখ শ্রমিক। তিনি আরো বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীল সরকার না হলে ব্যবসা ও বিনিয়োগে স্থিতিশীলতা আসবে না।

শিল্প ও বিনিয়োগের এমন দুরবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে তা দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে দেবে। বেকারত্ব বড় ধরনের সামাজিক সমস্যার কারণ হবে। অর্থনীতির এই পতন ঠেকাতে হবে। আর এ জন্য শিল্প সুরক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে, অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ