আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। সারা বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে দিবসটি। এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের স্লোগান হচ্ছে—Women in leadership : Achieving an equal future in a COVID-19 world. অর্থাৎ ‘কভিড বিশ্বে সমতার ভবিষ্যৎ অর্জনে নারী নেতৃত্ব’। নারী দিবসের এই প্রতিপাদ্য বাংলাদেশে তো প্রতিষ্ঠিত। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও মিলেছে তার। কমনওয়েলথভুক্ত ৫৪টি দেশের সরকারপ্রধানদের মধ্যে শীর্ষ তিনজনের অন্যতম নেতা হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রেসিয়া স্কটল্যান্ড কিউসির ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২১’ উপলক্ষে দেওয়া এক বিশেষ ঘোষণায় বলা হয়েছে, এই তিন ব্যক্তিত্ব বিশ্বের আরো অনেক নারীর পাশাপাশি আমাকে এমন একটি বিশ্ব গড়ে তোলার ব্যাপারে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন, যেখানে নারী-পুরুষ-নির্বিশেষে সবার সম্মিলিত সুন্দর ভবিষ্যৎ ও কল্যাণ সুনিশ্চিত ও সুরক্ষিত থাকবে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রাক্কালে এই স্বীকৃতি সারা দেশের জন্যই এক বড় সম্মান বয়ে এনেছে।
এ কথা তো অনস্বীকার্য, বাংলাদেশের উন্নয়নে নারীর ভূমিকা ও অবদান অনেক বেশি। দেশের সর্বত্র নারীর গুরুত্ব আজ স্বীকৃত। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন অনেকটাই বেড়েছে। সার্বিক উন্নয়নে বাংলাদেশের যে বিস্ময়কর উত্থান, তার নেপথ্যে নারীর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। সামাজিক কিংবা অর্থনৈতিক সূচকে যে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে, তাতেও নারীর অবদান রয়েছে। তার পরও স্বীকার করতে হবে, বৈষম্য একেবারে দূর করা যায়নি। শুধু তা-ই নয়, সমাজে অনেক ক্ষেত্রে নারীকে এখনো অবজ্ঞার চোখে দেখা হয়। নিরাপত্তাহীনতা এখনো নারীর এগিয়ে চলার পথে এক বড় বাধা। পথে-ঘাটে চলাচলে বাংলাদেশের বেশির ভাগ নারী নানা ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হন। নারীর প্রতি অবমাননাকর আচরণ বন্ধে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। ইতিবাচক ব্যবহারও নারীর প্রতি আচরণে পরিবর্তন আনতে পারে।
সামাজিক ও অর্থনৈতিক—সব সূচকে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশে এখনো এমন অনেক পরিবার আছে, যেখানে নারী উপেক্ষিত। অনেক চেষ্টার পরও সামাজিকভাবে নারীর অবস্থান সেভাবে তৈরি করা সম্ভব হয়নি। অথচ একটু পেছনে ফিরে তাকালে আমরা দেখতে পাই, এ দেশে ডাকসুর ভিপি ছিলেন একজন নারী। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ তো বটেই, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনেও বাঙালি নারী পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছেন, শহীদ হয়েছেন। বাংলাদেশের একজন নারী আন্তর্জাতিক দাবায় গ্রান্ড মাস্টার খেতাব পেয়েছেন। এভারেস্টের চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়েছেন বাংলাদেশের নারী। রাজনীতি থেকে প্রশাসন—সব ক্ষেত্রেই নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। কর্মজীবী নারীর সংখ্যা বেড়েছে। এর পরও নারী উপেক্ষার শিকার হচ্ছে। বেতন বৈষম্য থেকে নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। আর এসব কারণেই এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্যটি বিশেষ বিবেচনার দাবি রাখে।
সমাজে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় পুরুষকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। শিক্ষা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে হবে। সিডও সনদ অনুমোদনকারী রাষ্ট্রসমূহের একটি বাংলাদেশ। সে অনুযায়ী নারীর প্রতি বিদ্যমান সব ধরনের বৈষম্যমূলক কর্মকাণ্ড, রীতি-নীতি, প্রথা ও চর্চা এ দেশে নিষিদ্ধ করতে হবে। পরিবার থেকে সমাজ ও রাষ্ট্র—সর্বত্র নারীকে যোগ্য সম্মান দিতে হবে।
মন্তব্য