অভিযোগটি একেবারেই নতুন নয়। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রয়োজন নেই এমন অনেক খাত দেখিয়ে অতিরিক্ত ফি আদায় করা হয়। মহামারির কারণে গত মার্চ মাস থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। কিন্তু এর পরও এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নিয়মিত বেতন যেমন আদায় করা হয়েছে, তেমনি এমন অনেক ফি আদায় করা হয়েছে, যেগুলোর তেমন কোনো প্রাসঙ্গিকতা এখন নেই। কালের কণ্ঠে গতকাল প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ১৮ নভেম্বর মাউশি অধিদপ্তর এক নির্দেশনায় জানায়, বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো (এমপিওভুক্ত ও এমপিওবিহীন) শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শুধু টিউশন ফি নিতে পারবে। অ্যাসাইনমেন্ট, টিফিন, পুনঃ ভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন ও উন্নয়ন বাবদ কোনো ফি নেবে না। আর নেওয়া হলেও তা ফেরত দেবে অথবা তা টিউশন ফির সঙ্গে সমন্বয় করবে। অন্য কোনো ফি অব্যয়িত থাকলে একইভাবে তা-ও ফেরত দেবে বা টিউশন ফির সঙ্গে সমন্বয় করবে। গত বছর যেহেতু সরাসরি ক্লাস হয়নি, তাই যেসব ফি অত্যাবশ্যকীয় নয় বা যা কোনো কাজে আসেনি, সেগুলো টিউশন ফির সঙ্গে সমন্বয় করতে বলেছিল মাউশি অধিদপ্তর। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তা করেছে বলে শোনা যায়নি। উল্টো গত বছরের বেতন বকেয়া থাকলে তা পরিশোধে নানাভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে।
গত শিক্ষাবর্ষে আমরা অর্ধেক বছরের টিউশন ফি মওকুফের দাবি তুলেছিলাম, তা মানা হয়নি। আবার চলতি শিক্ষাবর্ষে নানা ধরনের ফির সঙ্গে অগ্রিম বেতনও নেওয়া হচ্ছে, যা অমানবিক। অভিভাবকরাও স্কুল যা চাচ্ছে, তা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। কথা হচ্ছে, সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা তাঁদের বেতন-ভাতা যেমন নিয়মিত পাচ্ছেন, তেমনি বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা তাঁদের বেতন-ভাতাদি পাচ্ছেন। তাহলে এ ধরনের চাপ দেওয়া কেন। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামে এ ধরনের অভিযোগ আছে যে এসব প্রতিষ্ঠান শুধু তাদের নামের ওপর ভর করে শিক্ষার নামে এক ধরনের ব্যবসা করে থাকে। মহামারির সময় অভিভাবকদের বাড়তি টাকার জন্য চাপ দেওয়া তো এক অর্থে বাণিজ্য করারই শামিল।
যেহেতু সরকারের একটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, সরকারের প্রতিষ্ঠানও রয়েছে বিষয়টি দেখভাল করার জন্য, কাজেই বিষয়টি তাদের দেখা দরকার। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ফি আদায়ের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি তাদের খতিয়ে দেখা দরকার। যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিলে আরো অনেক প্রতিষ্ঠান এ ধরনের কাজ করবে। আমরা আশা করব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মাউশির নির্দেশনা মেনে চলবে। কোনো বাড়তি ফি আদায় করবে না। যেসব প্রতিষ্ঠান নির্দেশনা মানবে না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এটাও আমাদের প্রত্যাশা।
মন্তব্য