<p>কভিড-১৯ বাংলাদেশের শিক্ষা খাতকে নতুন এক চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এই ঘাতক ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর গত মার্চের মধ্যভাগ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এই ছুটি আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বাস্তবতা মেনেই বন্ধ রাখতে হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে শিক্ষার্থীদের যে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশেষ করে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। উচ্চ মাধ্যমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো করে লেখাপড়া চালিয়ে নিতে পারলেও প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা তা পারে না। ফলে নিয়মিত ক্লাস করতে না পারায় অনেক শিক্ষার্থীই পিছিয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ বছর কেন্দ্রীয়ভাবে পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না। জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষাও এ বছর কেন্দ্রীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হবে না। এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত হয়নি।</p> <p>শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও করোনাকালে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু সেসব দেশে পড়ালেখা থেমে নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই অনলাইন ক্লাসে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রায় সব অভিভাবকেরই অনলাইন ডিভাইস ও ইন্টারনেট সুবিধা রয়েছে। ফলে সরাসরি ক্লাসের মতো না হলেও পড়ালেখা চালিয়ে যেতে তাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না। অন্যদিকে বাংলাদেশের বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৯ সালের তথ্যানুযায়ী দেশের সাড়ে তিন কোটি পরিবারের মধ্যে ৫০.৬ শতাংশ পরিবারের বাড়িতে টেলিভিশন রয়েছে। তবে সংসদ টেলিভিশনে ক্লাস প্রচার করা হচ্ছে বলে টিভি থাকলেও যাদের বাড়িতে কেবল সংযোগ নেই, তারা এই ক্লাস দেখতে পারছে না। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক জরিপে জানা গেছে, ৫৬ শতাংশ শিক্ষার্থী টেলিভিশনে প্রচারিত ক্লাস দেখছে। অন্যদিকে রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় ও জেলা সদরের বড় বড় স্কুলে অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে। সেখানেও সর্বোচ্চ দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী অংশ নেয় বলে খবরে প্রকাশ। মফস্বলের শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ক্লাসের কোনো ব্যবস্থা নেই। আবার গ্রামের বেশির ভাগ পরিবারেই স্মার্টফোন নেই, ইন্টারনেটের ধীরগতি ও উচ্চমূল্যের কারণে ওই সব পরিবারের শিক্ষার্থীদের পক্ষে অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণও সম্ভব নয়। ফলে শহর-গ্রাম ও ধনী-দরিদ্রের মধ্যে শিক্ষার বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে। অন্যদিকে টেলিভিশন ও রেডিওতে সম্প্রচারিত প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ক্লাসে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ নিয়েও প্রশ্ন আছে। স্বাভাবিকভাবেই অনেক শিক্ষার্থী পড়ালেখার বাইরে আছে।</p> <p>আমাদের কভিড-পরবর্তী ‘নতুন স্বাভাবিক’ জীবন ব্যবস্থায় ফিরতে হবে। সে জন্য আগামী দিনের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে ভাবতে হবে। তবে এর আগে বর্তমানের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অবশ্যই সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।</p>