রবিবার । ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯। ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪২৬। ১০ রবিউস সানি ১৪৪১
বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে নেতিবাচক মেরুকরণ হয়েছিল, তা থেকে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল থেকেই শুরু হয়েছে শুদ্ধি অভািযান, যা সর্বস্তরের মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছে। অবশ্য কাজটি অত্যন্ত কঠিন। দীর্ঘদিনের সামরিক শাসন দেশের রাজনীতিকে যে পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল, সেখান থেকে বেরিয়ে আসার কাজটি সহজ নয়। সামরিক শাসনের শুরু থেকেই লক্ষ করা গেছে, পদ ও টাকার লোভ দেখিয়ে রাজনীতিকদের কেনা-বেচা হয়েছে। একপর্যায়ে দেশের রাজনীতিতে অসুস্থ সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটে। যার ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিকে এক চরম দুঃসময় পার করতে হয়েছে। রাজনীতিতে অর্থ আর পেশিশক্তির প্রভাব দৃশ্যমান হতে দেখা গেছে। আদর্শ, জনকল্যাণ, আত্মত্যাগ ও নৈতিকতা ক্রমেই দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়েছে। একসময় দেখা গেছে রাজনীতি হয়ে উঠেছে বিত্তবৈভব অর্জনের হাতিয়ার। সমষ্টির কল্যাণের চেয়ে ব্যক্তির উদরপূর্তিই রাজনৈতিক ধারা হয়ে ওঠে। ফলে টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, লুটপাট, খুনখারাবিসহ হেন অপকর্ম নেই যা রাজনীতির অনুষঙ্গ হয়ে ওঠেনি। আমাদের রাজনীতিতে আজ জনদরদি রাজনীতিকের অভাব ক্রমেই তীব্র হতে শুরু করে। সত্যিকারের জনদরদি, ত্যাগী রাজনৈতিক নেতারা দল থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করেন। এর সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক দলে, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলে ব্যাপক অনুপ্রবেশের ঘটনাও ঘটে। আদর্শ নয়, বিত্তবৈভবের লোভে অনেককেই ক্ষমতাসীন দলে নাম লেখাতে দেখা যায়। অতীতে যেমনটি দেখা গেছে সামরিক শাসনামলে।
বিষয়টি সঠিকভাবেই উপলব্ধি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি শুদ্ধি অভিযান শুরু করেন তাঁর নিজ দল থেকেই। দলের সব সহযোগী সংগঠনে শুদ্ধি অভিযানের পাশাপাশি এসব সংগঠনের কাউন্সিলে নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। ঢাকার দুই মহানগর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলেও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য এসেছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে। তিনি বলেছেন, ‘আসলে টাকা বানানো একটা রোগ। এটাও একটা ব্যারাম, একটা অসুস্থতা। একবার যে টাকা বানাতে থাকে, তার শুধু টাকা বানাতেই ইচ্ছা করে। অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনকারীরা মুখে হয়তো একটু বাহবা পায়; কিন্তু পেছনে মানুষ ঠিকই গালি দেয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘আজকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছি। এটা অব্যাহত থাকবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান আমরা অব্যাহত রেখেছি। এটাও অব্যাহত থাকবে। কারণ জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ জনগণের কল্যাণে ব্যয় হবে। কারো ভোগবিলাসের জন্য নয়। কেউ অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে বিলাসবহুল জীবনযাপন করবে আর কেউ সত্ভাবে জীবনযাপন করবে, সাদাসিধা জীবনযাপন করবে তার জীবনটাকে নিয়ে সে কষ্ট পাবে, এটা তো হতে পারে না।’
প্রধানমন্ত্রীর এই উপলব্ধি সব রাজনৈতিক দলের জন্য উদাহরণ হতে পারে। রাজনীতি দেশের কল্যাণে নিজস্ব ধারায় চলুক। পরিশুদ্ধ হোক দেশের রাজনীতি—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
মন্তব্য