ভূতের খোঁজে
কয়েক দিনের অনুসন্ধানে কলকাতা এমএলএ হোস্টেলে ভূতের সন্ধান পাওয়া গেছে। গভীর রাতে ভূত ট্যাপের পানি ছেড়ে দেয়। হ্যাফপ্যান্ট পরে বারান্দা দিয়ে হেঁটে যায়। দরজা খুলে আবার বন্ধ করে।
ভূতের খোঁজে
কয়েক দিনের অনুসন্ধানে কলকাতা এমএলএ হোস্টেলে ভূতের সন্ধান পাওয়া গেছে। গভীর রাতে ভূত ট্যাপের পানি ছেড়ে দেয়। হ্যাফপ্যান্ট পরে বারান্দা দিয়ে হেঁটে যায়। দরজা খুলে আবার বন্ধ করে।
কলকাতা শহরের কিড স্ট্রিটে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের এমএলএ হোস্টেল রয়েছে। ছয়তলা দুটি ভবনে স্থানীয় বিধায়কদের (এমএলএ) পাশাপাশি তাঁদের অতিথিরা থাকেন।
ঘাড়ের কাছে শ্বাস
ভূত বই পড়ে। ইংরেজি বই পড়তে বেশি ভালোবাসে। কারণ কলকাতার সুপ্রাচীন ও বৃহত্তম ন্যাশনাল লাইব্রেরিতেই ভূতের আনাগোনা। পাঠক যখন একমনে এখানে বই পড়ে, তখন নাকি ভূত এসে ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলে। পেছনে তাকালে কাউকে দেখা যায় না। দুষ্ট ভূতেরা তাকের বইও এলোমেলো করে রাখে। কর্মচারীরাও ওদের ওপর বিরক্ত। রাতে চেয়ার এক জায়গায় রাখলে সকালে সেই চেয়ার আরেক জায়গায় মেলে। লাইব্রেরি ভবনটি গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের জন্য তৈরি করা হয়। ব্রিটিশ জেনারেল এখানেই থাকতেন। ১৮৩৬ সালে এই ভবনে লাইব্রেরির কার্যক্রম শুরু হয়। বেশ কয়েক বছর আগে ভবনের সংস্কার কাজ করতে গিয়ে ১২ জন শ্রমিক মারা যায়। এ ঘটনার পর ভূতের আনাগোনা যায় বেড়ে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে ভূতের ভয়েই নাকি অনেকে পড়া শেষ না করেই কেটে পড়ে।
দিনেশ, বাদলরা ঘুরে বেড়ায়
রাইটার্স বিল্ডিংয়ে ভূতরা খুব সাহসী। এদের মধ্যে বিল্পবী চেতনা রয়েছে। এরা চেয়ার-টেবিল ওলটপালট করে দেয়, সজোরে দরজা বন্ধ করে আতঙ্ক তৈরি করে।
রাইটার্স বিল্ডিংয়ের বাংলা নাম মহাকরণ। এখন এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সচিবালয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানি ১৭৭৬ সালে কেরানিদের (রাইটার্স) জন্য এটি তৈরি করেছিল। এখানে এক অত্যাচারী জেলার বসতেন। তার নাম ছিল সিমসং। ১৯৩০ সালে সাহসী তিন যুবক—বিনয়, বাদল, দিনেশ অত্যাচারী এই জেলারকে হত্যা করেছিল। এ সময় পুলিশের ক্রসফায়ারে মারা গিয়েছিল বিনয়, আটক এড়াতে আত্মহত্যা করেছিল বাদল আর দিনেশকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। এর পর থেকেই এই তিন যুবকের প্রেতাত্মা এসে ঘোরাফেরা করে। চেয়ার-টেবিল উল্টে রাগ দেখায়।
রাতে জেগে ওঠে মমি
ভারতের সবচেয়ে বড় জাদুঘর ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম। কলকাতার জওয়াহেরলাল নেহরু রোডে ১৮১৪ সালে এর যাত্রা শুরু। তিনতলা এ মিউজিয়ামের দোতলায় রয়েছে চার হাজার বছর আগের একটি মমি। এই মমি নাকি রাতে ঘুরে বেড়ায়। একজন নর্তকী সারা রাত নাচে।
কয়েক বছর আগে এখানে আলমারিচাপা পড়ে এক শ্রমিক মারা যায়। জাদুঘরের দর্শনার্থীরা চলে গেলে সেই শ্রমিক নাকি সাদা কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে অজানা স্থান থেকে বের হয়ে আসে।
কলকাতার আরো কয়েকটি প্রাচীনতম ভবনে ভূতের আনাগোনার খবর পাওয়া যায় প্রায়ই। এমনকি এখানকার অনেকেই রীতিমতো ভূতে বিশ্বাসী। জাতীয় পত্রিকাগুলোর পৃষ্ঠাজুড়ে ভুত-প্রেত ও জাদুটোনার বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে। অলৌকিক এসব বিষয় নিয়ে চায়ের আড্ডাও বেশ জমে।
এ ব্যাপারে কথা হয় এখানকার অ্যাপোলো হাসপাতালের সিনিয়র চিকিত্সক অনুপম চক্রপানির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কলকাতার ভূতের কথা শুনেছি। আমার এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য নেই।’ এস নিউজের সম্পাদক পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘ভূত নিয়ে গল্প হয়েছে। সিনেমা হয়েছে। মজার গল্পও আছে। কিন্তু এসব গল্পের সত্যতা নেই।’ বিজ্ঞান মঞ্চের কর্মী বিমল সাহা বললেন, ‘একবিংশ শতাব্দীতে ভূতের গল্প বিশ্বাসযোগ্য নয়। আমরা ভূতের সন্ধানে গিয়ে প্রমাণ পেয়েছি, মানুষই ভূত সেজে নানা ঘটনা ঘটাচ্ছে।’ বিধায়ক শফিউল আলম খান বললেন, ‘ভূত বলে কিছু নেই। আমি এমএলএ হোস্টেলেও কোনো দিন ভূতের আলামত দেখিনি। আসলে মানুষই ভূত।’