<p>শীতের শেষে গ্রীষ্মের আগমনে এখন ঘটছে আবহাওয়ার পরিবর্তন। এই সময়টাতে অনেকেই ভুগছেন ঠাণ্ডা-সর্দি-কাশি-জ্বরে। সাধারণভাবে যে কেউ সাধারণ ঠাণ্ডাকে ফ্লুর সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেন। কিন্তু সাধারণ সর্দি-জ্বর আর ফ্লু এক নয়। ফ্লু হলে সুস্থ হতে কয়েক সপ্তাহও লেগে যেতে পারে।</p> <p> </p> <p><strong>সাধারণ ঠাণ্ডা বা সর্দির লক্ষণ</strong></p> <p>♦ প্রথমে গলা ব্যথা দিয়ে শুরু হয়; দু-এক দিন পর চলে যায়। চতুর্থ ও পঞ্চম দিন পর্যন্ত কাশিসহ অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেয়।</p> <p>♦ নাক দিয়ে পানি পড়ে। ধীরে ধীরে শ্লেষ্মা গাঢ় হতে থাকে; নাক বন্ধও হয়ে যেতে পারে।</p> <p>♦ প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে সাধারণত জ্বর হয় না। অনেক সময় সামান্য জ্বর দেখা দিতে পারে।</p> <p>♦ শিশুদের ক্ষেত্রে ঠাণ্ডা লাগার সঙ্গে সঙ্গে জ্বর আসতে পারে।</p> <p>♦ হালকা মাথা ব্যথা।</p> <p>♦ হাঁচি, কাশি ইত্যাদি।</p> <p> </p> <p><strong>করণীয়</strong></p> <p>♦ অ্যান্টিহিস্টামিনজাতীয় ওষুধ খেতে পারেন। জ্বর থাকলে সঙ্গে প্যারাসিটামল দিন। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক নয়।</p> <p>♦ প্রথম তিন দিনের মধ্যে যদি সর্দির লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়, তাহলে ঘরেই থাকুন। নয়তো অন্যের মধ্যে ছড়াতে পারে।</p> <p>♦ সাধারণত সাত দিনের মধ্যে সর্দি-জ্বর ভালো হয়ে যায়। এক সপ্তাহ পরেও লক্ষণগুলোর উন্নতি না হলে তা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে প্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করুন।</p> <p> </p> <p><strong>ফ্লুর লক্ষণ </strong></p> <p>♦ ফ্লুর লক্ষণগুলো সাধারণ ঠাণ্ডা বা সর্দির চেয়ে দ্রুত দেখা দেয়। প্রচণ্ড গলা ব্যথা ও জ্বর হয়।</p> <p>♦ মাথা ব্যথা।</p> <p>♦ ঘন ঘন শ্লেষ্মা বের হওয়া।</p> <p>♦ পেশিতে ব্যথা।</p> <p>♦ শারীরিক দুর্বলতা।</p> <p>♦ বমি।</p> <p>♦ কারোর ডায়রিয়াও দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে শিশুদের।</p> <p>♦ কাশি হয়, কফ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।</p> <p> </p> <p><strong>জটিলতা</strong></p> <p>বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ফ্লুতে আক্রান্ত ব্যক্তি দুই সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে যায়। তবে কারো কারো মারাত্মক ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে (যেমন—নিউমোনিয়া)। সাইনাস ও কানে সংক্রমণ ফ্লুর মাঝারি জটিলতার উদাহরণ। শ্বাসনালিতে ফ্লু ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে তীব্র প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে। হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ফ্লু ভাইরাসে সংক্রমণ খুবই বিপজ্জনক।</p> <p> </p> <p><strong>প্রতিকার</strong></p> <p>♦ কুসুম গরম পানিতে অল্প সময়ে (৫-১০ মিনিট) গোসল শেষ করুন। অতিরিক্ত সময় নিয়ে গোসল করা থেকে বিরত থাকুন।</p> <p>♦ সব সময় সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোন।</p> <p>♦ সুষম খাবার খান। খাবারে দুধ, তাজা ফল ও শাক-সবজি রাখুন।</p> <p>♦ হালকা ব্যায়াম ও হাঁটাহাঁটি করুন।</p> <p>♦ ত্বকের প্রকৃতি অনুসারে সাবান, ডিটারজেন্ট, ক্লিনজার্স, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।</p> <p>♦ অ্যালার্জিজনিত সমস্যা থাকলে ধুলাবালি এড়িয়ে চলুন।</p> <p>♦ হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু ব্যবহার করুন।</p> <p>♦ ব্যবহার্য জিনিসপত্র নিয়মিত পরিষ্কার করুন এবং জীবাণুমুক্ত রাখুন।</p> <p> </p> <p><strong>কিছু ঘরোয়া টিপস</strong></p> <p>♦ গরম পানিতে লবণ দিয়ে গারগল করলে গলা ব্যথা প্রশমিত হয়। এটি শ্লেষ্মা পরিষ্কার করতেও সহায়তা করে। গলায় লবণ মিশ্রিত গরম পানি নিয়ে ১০ থেকে ৩০ সেকেন্ড ধরে তিনবার গারগল করুন। এটি দিনে দুই থেকে চারবার করতে পারেন।</p> <p>♦ ভেষজ চায়ে অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে, যা ফ্লু ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করতে সাহায্য করে। নিয়মিত ভেষজ চা পান করুন।</p> <p>♦ গরম বাষ্পের ভাপ নিতে পারেন, যা নাকের শ্লেষ্মাকে তরল করে ফেলবে।</p> <p>♦ জিংকসমৃদ্ধ খাবার ও ফলমূল বেশি পরিমাণে খান।</p> <p>♦ বেশি সমস্যা মনে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।</p> <p> </p> <p><strong>খুসখুসে কাশি কমাতে </strong></p> <p>♦ একটি পাত্রে পরিমাণমতো আদা, কাঁচা হলুদ, গোলমরিচ, তেজপাতা, লবঙ্গ আর মেথি একসঙ্গে ভালো করে ফুটিয়ে নিন।</p> <p>♦ পানি ফুটে অর্ধেক হয়ে গেলে নামিয়ে নিন।</p> <p>♦ এরপর মিনিটখানেক রেখে দিন।</p> <p>♦ তীব্র গরম ভাবটা যখন কমে যাবে, তখন অর্ধেক পাতিলেবুর রস মিশিয়ে চায়ের মতো পান করুন।</p> <p> </p> <p>এই পানীয় পান করলে খুসখুসে কাশি কমবে, সেই সঙ্গে দূর হবে ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ। আর প্রদাহ কমে ভেতর থেকে দেহ ঠাণ্ডা হলে দ্রুত আরোগ্যের পথও মিলবে।</p>