<p>অনেক কারণে মানুষের স্মৃতিশক্তি কমে যেতে পারে। যাকে বলে ডিমেনশিয়া। এটা একক কোনো রোগের কারণে না-ও হতে পারে। মূলত মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি ও চিন্তা-চেতনা কমে যাওয়ার লক্ষণগুলোকেই সামগ্রিকভাবে ডিমেনশিয়া বলে। এটা হলো মস্তিষ্কের সমস্যা, যার প্রভাব পড়ে ব্যক্তির স্মৃতিশক্তি, মন-মেজাজ ও আচরণে। মস্তিষ্কের মধ্যে ঘটে যাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে আচরণের সম্পর্ক থাকে এবং রোগীর আচরণ বদলে যায়। অন্যদিকে আচরণ পরিবর্তনের কারণ হিসেবে কাজ করতে পারে বসবাসের পরিবেশ, ব্যক্তিজীবনের পরিস্থিতি, স্বাস্থ্য সমস্যা, ওষুধের প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি।</p> <p> </p> <p><strong>লক্ষণ</strong></p> <p>কিছু কারণে মস্তিষ্ক কোষের মৃত্যু ঘটতে পারে, ফলে ডিমেনশিয়া হয়। এই রোগের অনেক লক্ষণ বা উপসর্গ আছে, যা প্রাথমিক পর্যায়ে প্রকাশ পায় না। ডিমেনশিয়ায় বেশি আক্রান্ত হন বৃদ্ধরা; কিন্তু প্রত্যেক বৃদ্ধেরই আবার এ রোগ হয় না। বৃদ্ধ না হলেও কিন্তু ডিমেনশিয়া রোগ হতে পারে। এর কিছু উপসর্গ হলো :</p> <p>♦ রোগীর মন খারাপ থাকে। এ অবস্থা রোগীকে দিনের পর দিন হতাশার দিকে নিয়ে যায়। কোনো কিছু করতে ভালো লাগে না। সারাক্ষণ মন খারাপ নিয়ে ঘরে চুপচাপ বসে থাকার প্রবণতা দেখা দেয়।</p> <p>♦ বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয় এবং মাঝেমধ্যে আত্মগ্লানি বোধ হতে পারে। ফলে রোগী অপরাধবোধে ভোগে, নিজেকে অতীতের নানা কাজের জন্য দোষী ভাবতে শুরু করে।</p> <p>♦ ওজন কমতে পারে। কারণ বেশির ভাগ রোগী ঠিকমতো খেতে পারে না। কিছু রোগীর আবার ওজন বাড়তেও পারে। কারণ তারা ঘরে বসে থাকে আর একটু পর পর এটা-সেটা খেতে থাকে।</p> <p>♦ রোগীরা ভুলোমনা হয়ে যায়। অর্থাৎ অনেক জিনিসই মনে রাখতে পারে না।</p> <p>♦ অনেক সময় শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। অসাবধানতাবশত গরম পানিতে হাত দেয়, আগুনে হাত দেয়, বিভ্রান্তি ও হ্যালুসিনেশনে ভোগে, এলোমেলো আচরণ করে অন্যের বিরক্তির কারণ হয়।</p> <p> </p> <p><strong>রোগ নির্ণয়</strong></p> <p>ডিমেনশিয়া যেকোনো বয়সেই হতে পারে। তবে সাধারণত দেখা যায় ৬৫ বছরের পর। এ ছাড়া ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সী লোকরাও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।</p> <p>এমন কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা নেই, যার মাধ্যমে আগেভাগে বলা যাবে যে কারোর ডিমেনশিয়া হবে। তবে রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর রোগ নির্ণয় করা যায়। ডিমেনশিয়া নির্ণয় করা ততটা সহজ নয়। কারণ রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে রোগী বা তার আশপাশের লোকরা তা বুঝতে পারে না।</p> <p>তবে রোগীর সঙ্গে থাকা লোকজন যদি সচেতন হয়, ভালো করে রোগীর আগের আচরণ ও স্বভাবের সঙ্গে পরিবর্তিত আচরণ ও স্বভাবের বিশ্লেষণ করতে পারেন, তাহলে তাঁরা রোগটি সম্পর্কে ধারণা করতে পারেন এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।</p> <p> </p> <p><strong>রোগীর আচরণ</strong></p> <p>ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত কিছু কিছু রোগী সামান্য সমালোচনাও সহ্য করতে পারে না। তাদের নিয়ে কেউ কোনো রকম সমালোচনা করলেই তারা বাড়াবাড়ি রকমের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে। এ সময় তারা চিৎকার করে, প্রচণ্ড রেগে যায়, উগ্র আচরণ করে বা কান্নাকাটি করতে থাকে। কেউ কেউ আবার উচ্চ শব্দে হাসতে থাকে। রোগীর এই অতিমাত্রায় প্রতিক্রিয়া প্রকাশ রোগের একটি অংশ এবং একে বলা হয় ক্যাটাসট্রোফিক রি-অ্যাকশন। মাঝেমধ্যে ক্যাটাসট্রোফিক রি-অ্যাকশনই রোগের প্রথম দিককার উপসর্গ হিসেবে দেখা যায়। রোগের মাত্রা বাড়তে থাকলে এ ধরনের আচরণ অনেক সময় চলে যায় অথবা ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত অবস্থায়ও কিছু সময়ের জন্য চলতে থাকে।</p> <p>ক্যাটাসট্রোফিক আচরণের আরো কিছু ধরন সম্পর্কে জানা থাকা দরকার। যেমন—এ ধরনের প্রতিক্রিয়া হঠাৎ করেই রোগী দেখাতে শুরু করে। অনেকে ঘরের জিনিসপত্র ভেঙে ফেলে, নিজের ক্ষতি করতে চায়, হুমকি দেয়, অন্যকে শত্রু মনে করে ইত্যাদি।</p> <p> </p> <p><strong>কিছু পরিবর্তন</strong></p> <p>রোগীর আচরণ পরিবর্তন হওয়াই ডিমেনশিয়ার একটি সাধারণ বিষয়। কিন্তু এ ধরনের পরিবর্তন পরিবার ও সেবাদানকারীদের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। এ জন্য করণীয় হলো :</p> <p>♦ রোগী একাকিত্ব অনুভব করতে থাকে, তার মনে এক ধরনের ক্ষোভ জন্ম নেয় আর সেটা একসময় রোগী প্রকাশ করতে থাকে।</p> <p>♦ রোগী মনে করে, সবাই তাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও অবহেলা করছে। তখন সে প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করে।</p> <p>♦ বর্তমানের কোনো ঘটনা অতীতের কোনো স্মৃতিকে উসকে দিতে পারে। এ থেকেও রোগীর ক্যাটাসট্রোফিক আচরণ প্রকাশ পেতে পারে।</p> <p>♦ ডিমেনশিয়া রোগী ক্রমেই তার জীবনের অনেক কিছু হারাতে থাকে। যেমন—বন্ধুবান্ধব কমে যায়, পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হয়, স্ত্রী-কন্যা-স্বামীর স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয়।</p> <p> </p> <p><strong>চিকিৎসা</strong></p> <p>ব্যক্তির আচরণের পরিবর্তন দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তখন পরীক্ষা করে দেখতে হবে রোগীর কোনো শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতা আছে কি না। যদি থাকে তখন প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন। আর যদি কোনো মানসিক কারণে এমনটি হয়ে থাকে, তাহলে সে বিষয়েও পরামর্শ দেবেন।</p> <p> </p> <p><strong>আক্রান্ত হলে করণীয়</strong></p> <p>পরিবর্তিত আচরণের সঙ্গে মানিয়ে চলা রোগীর পরিবার ও সেবাদানকারীদের জন্য কঠিন হতে পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, রোগীর এ ধরনের আচরণ ইচ্ছাকৃত নয়। এ আচরণের কারণে রোগীর প্রতি রাগও করা উচিত নয়। বরং তাকে আরো বেশি সময় দিতে হবে, তার সঙ্গে ভালো আচরণ করতে হবে, তাকে নিয়মিত ডাক্তারের কাছে নিতে হবে, প্রয়োজনে মানসিক রোগের বিশেষজ্ঞ দেখাতে হবে, রোগী যেন একাকিত্ব বোধ করতে না পারে, সে জন্য তার বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে, রোগীকে সম্ভব হলে তার রোগ ও চিকিৎসা সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে।</p>