<p>শিশুর জন্মগত হৃদরোগ বা হার্টের সমস্যার কথা আমরা কমবেশি সবাই শুনে থাকি। বর্তমান চিকিৎসাবিজ্ঞানের বদৌলতে মায়ের গর্ভেই শিশুর জন্মগত হৃদরোগ বা হার্টের ত্রুটি নির্ণয় করার সুযোগ আছে। বিশেষ ধরনের আল্ট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে মায়ের গর্ভেই বাচ্চার হার্টের সমস্যা নির্ণয়ের এই পদ্ধতিকে ফিটাল ইকোকার্ডিওগ্রাফি বলে। প্রতি ১০০ জন গর্ভবতী মায়ের গর্ভে অন্তত একজন শিশুর জন্মগত হৃদরোগ থাকতে পারে।</p> <p> </p> <p><strong>কখন করা হয়? </strong></p> <p>গর্ভাবস্থায় সাধারণত ২০-২৪ সপ্তাহে এই পরীক্ষা করা হয়। তবে কখনো কখনো প্রয়োজনে ১৪-১৬ সপ্তাহেও ফিটাল ইকোকার্ডিওগ্রাফি করা হয়।</p> <p>যেকোনো গর্ভবতী মা চাইলেই তাঁর অনাগত সন্তানের হার্টের সুস্থতা এই পরীক্ষার মাধ্যমে জানতে পারেন। অন্যদিকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভবতী মায়েদের ফিটাল ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষার উপদেশ দেওয়া হয়। যেমন :</p> <p>♦ পূর্বে জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুর জন্ম হলে।</p> <p>♦ পরিবারে কোনো শিশুর জন্মগত হৃদরোগ থাকলে।</p> <p>♦ সংসারে নবজাতকের মৃত্যুর ইতিহাস থাকলে।</p> <p>♦ ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বিয়েশাদি হলে।</p> <p>♦ গর্ভবতী মায়ের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে।</p> <p>♦ বারবার গর্ভপাত বা গর্ভে সন্তানের মৃত্যুর ইতিহাস থাকলে।</p> <p>♦ গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকারক ওষুধ সেবন করে থাকলে।</p> <p>♦ বিকলাঙ্গ শিশু জন্মদানের ইতিহাস থাকলে।</p> <p>♦ আল্টাসনোগ্রাফি পরীক্ষায় বাচ্চার জন্মগত হৃদরোগ সন্দেহ হলে।</p> <p>♦ গর্ভে একাধিক সন্তান থাকলে।</p> <p>♦ গর্ভে সন্তানের ডিএনএ ঘটিত ত্রুটি সন্দেহ হলে।</p> <p>♦ টেস্ট টিউব বেবি বা চিকিৎসার মাধ্যমে গর্ভধারণ করলে।</p> <p>♦ গর্ভাবস্থায় রুবেলাজাতীয় ভাইরাস ইনফেকশন হলে।</p> <p> </p> <p><strong>কোথায় করা হয়?</strong></p> <p>অত্যাধুনিক আল্ট্রাসাউন্ড মেশিন আছে এমন সেন্টারে ফিটাল ইকোকার্ডিওগ্রাফি করা হয়। একজন শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ বা বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ফিটাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সাধারণত ফিটাল ইকোকার্ডিওগ্রাফি করে থাকেন।</p> <p> </p> <p><strong>পূর্বপ্রস্তুতি</strong></p> <p>ফিটাল ইকোকার্ডিওগ্রাফির জন্য আলাদা কোনো প্রস্তুতির প্রয়োজন নেই। এটি আল্ট্রাসনোগ্রাফির মতোই পরীক্ষা। খালি পেটে বা ভরা পেটে আসা-না আসার কোনো ব্যাপার নেই। পরীক্ষাটি করতে প্রায় ৩০ মিনিট সময় লাগে। এই পরীক্ষার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।</p> <p> </p> <p><strong>যেসব তথ্য পাওয়া যায়</strong></p> <p>ফিটাল ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষা করার পর চিকিৎসক নিম্নলিখিত তথ্য ও পরামর্শ দিতে পারেন।</p> <p>♦ গর্ভস্থ বাচ্চার কোনো হৃদরোগ ধরা পড়েনি। রিপোর্ট স্বাভাবিক বা নরমাল এবং পরবর্তী সময়ে আর পরীক্ষার প্রয়োজন নেই বলে মতামত দিতে পারেন।</p> <p>♦ আপাতদৃষ্টিতে স্বাভাবিক মনে হলেও কয়েক সপ্তাহ পর বা জন্মের পর আবার পরীক্ষা করে সামান্য সন্দেহ দূর করার পরামর্শ দিতে পারেন।</p> <p>♦ নির্দিষ্ট প্রকার জন্মগত হৃদরোগ নির্ণয় করতে পারেন। এ অবস্থায় নবজাতকের নিবিড় পরিচর্যা আছে এমন হাসপাতালে সন্তান প্রসবের পরামর্শ এবং শিশু জন্মের পর চিকিৎসাপদ্ধতি ও সফলতা সম্পর্কে মতামত দিতে পারেন।</p> <p>♦ এমন কোনো মারাত্মক জন্মগত হৃদরোগ নির্ণয় হতে পারে, যা জন্মের পর চিকিৎসাযোগ্য নয় বা চিকিৎসায় সফলতার হার খুবই কম। সে ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থা চালিয়ে যাওয়া-না যাওয়ার ব্যাপারে গর্ভবতী মাকে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করতে পারেন।</p> <p> </p> <p><strong>পরীক্ষার সীমাবদ্ধতা</strong></p> <p>মাতৃগর্ভে বাচ্চার অবস্থান, গর্ভবতী মায়ের অধিক ওজন ইত্যাদি কারণে অতি সূক্ষ্ম হার্টের সমস্যা ফিটাল ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষায় না-ও ধরা পড়তে পারে। তা ছাড়া হার্টের কিছু সমস্যা গর্ভাবস্থার শেষের দিকেও দেখা দিতে পারে।</p> <p>বর্তমান চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাতৃজঠরেই বাচ্চার হার্টের জন্মগত রোগ নির্ণয় করা যাচ্ছে। ফলে নিবিড় পরিচর্যা আছে এমন হাসপাতালে এসব মাকে সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা করে নবজাতকের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু রোধ করা যাচ্ছে; অন্যদিকে ফিটাল ইকোকার্ডিওগ্রাফি পরীক্ষার রিপোর্ট স্বাভাবিক এলে চিকিৎসক ও গর্ভবতী মায়ের অনেক দুশ্চিন্তাও দূর হয়। আসুন সচেতন হই, উন্নত স্বাস্থ্য-প্রযুক্তির সেবা গ্রহণ করি।</p>