<h3 style="color:#aaa;font-style:italic;"><strong>মাতৃত্বকালীন কার্ডিওমায়োপ্যাথিকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলে ‘পেরিপার্টাম কার্ডিওমায়োপ্যাথি’। গর্ভাবস্থার শেষ মাস এবং সন্তান প্রসবের পরবর্তী পাঁচ মাস পর্যন্ত এই রোগ থাকতে পারে। লিখেছেন ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতালের সিসিইউ ইনচার্জ ডা. মাহবুবর রহমান</strong></h3> <p>কার্ডিওমায়োপ্যাথিতে হার্টের মাংসপেশি আক্রান্ত হয়। মাংসপেশি তখন দুর্বল হয়ে পাম্পিং ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফলে রক্তচাপ কমে যায়। রোগী সহজে হাঁপিয়ে ওঠে, কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়, শ্বাসকষ্ট হয়, স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হয়। সঠিক সময়ে যথাযথ চিকিৎসা না হলে রোগীর জীবনহানির আশঙ্কা তৈরি হয়।</p> <p> </p> <p>কারণ</p> <p>পরিপার্টাম কার্ডিওমায়োপ্যাথির সঠিক কারণটি আমরা এখনো জানি না। তবে বিতর্কিত নানা তত্ত্ব ও মতামত আছে। কোনো কোনো তত্ত্ব অনুযায়ী সন্তান গর্ভাশয়ে থাকাকালীন সন্তানের দেহের বিরুদ্ধে মায়ের রক্তে এক ধরনের বিষাক্ত কেমিক্যাল বা অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। এই কেমিক্যাল সন্তানের শরীরে প্রবেশ করতে পারে না এবং তার কোনো ক্ষতিও করে না। কিন্তু তা মায়ের হার্টকে টার্গেট করে এবং হার্টের মাংসপেশির প্রদাহ সৃষ্টি করে মাংসপেশিকে দুর্বল করে দেয়। এই তত্ত্বের সঙ্গে বাতজ্বর থেকে হার্টের ভালভ নষ্ট হওয়ার বৈজ্ঞানিক বাস্তবতারও মিল রয়েছে।</p> <p> </p> <p>চিকিৎসা</p> <p>হৃপিণ্ডের মাংসপেশি দুর্বল হওয়ার আরো কারণ রয়েছে। যেমন—হার্টের নিজস্ব রক্তনালিতে চর্বি জমে বা ব্লক হয়ে মাংসপেশি ধ্বংস হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ওষুধ প্রয়োগ, রিং বসানো অথবা বাইপাস সার্জারির মাধ্যমে ব্লক অপসারণ করে চিকিৎসা দিলে হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আবার হার্টের ভালভ নষ্ট হয়েও হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। সে ক্ষেত্রে বেলুন করে বা অপারেশনের মাধ্যমে ভালভ প্রতিস্থাপন করে চিকিৎসা করালে পাম্পিং ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া বিভিন্ন জীবাণুর আক্রমণেও তীব্র প্রদাহ সৃষ্টি হয়ে মাংসপেশি দুর্বল হতে পারে। সে ক্ষেত্রে যথাযথ অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।</p> <p>কিন্তু মাতৃত্বকালীন কার্ডিওমায়োপ্যাথির ক্ষেত্রে চিকিৎসা কী হবে? কেননা এখন পর্যন্ত এর কোনো সুনির্দিষ্ট কারণই জানা নেই। তাই উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসাই এখন পর্যন্ত ভরসা। সে ক্ষেত্রে যা করণীয় তা হলো—</p> <p>► রোগীকে শারীরিক বিশ্রাম নিতে হবে, যা খুব জরুরি।</p> <p>► রক্তচাপ কমে গেলে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে রক্তচাপ বাড়ানোর ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।</p> <p>► তরল বা লিকুইড গ্রহণ কমিয়ে নির্দিষ্ট করে দিতে হবে।</p> <p>► শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত পানি ডাইইউরেটিকসের মাধ্যমে বের করে দিতে হবে।</p> <p>► রক্তচাপ মোটামুটি বজায় থাকলে</p> <p> </p> <p>RAAS Blockers, MCR Blockers জাতীয় ওষুধ দিলে পাম্পিং ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া নতুন ওষুধ Ivabradine, ARNI ইত্যাদি প্রয়োগেও ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। Digoxin প্রয়োগে রোগীর উপসর্গভিত্তিক উন্নতি হতে পারে।</p> <p>► যাদের হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা খুব কম তাদের শিরায় রক্ত জমাট বাঁধতে পারে বা স্ট্রোক করতে পারে। তাদের ক্ষেত্রে রক্তজমাটবিরোধী ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে।</p> <p> </p> <p>স্থায়ী সমাধান কী?</p> <p>মাতৃত্বকালীন কার্ডিওমায়োপ্যাথির এক-তৃতীয়াংশ রোগী সম্পূর্ণ রোগমুক্ত হয়। সুতরাং তাদের প্রাথমিক সাপোর্টিভ চিকিৎসাটা নিশ্চিত করতে হবে। অন্য এক-তৃতীয়াংশ রোগী দীর্ঘস্থায়ী হার্ট ফেইলিওরে চলে যেতে পারে। তাদের অবস্থা ভালো হয়, খারাপ হয়—এভাবে চলতে থাকে। যথাযথ ওষুধ প্রয়োগই ভালো থাকার পূর্বশর্ত। বাকি এক-তৃতীয়াংশ রোগীর জন্য দুঃসংবাদ! তারা দ্রুত খারাপ হয়ে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হতে থাকে। চিকিৎসা দেওয়া সত্ত্বেও উপসর্গ শুরুর ছয় মাসের মধ্যে যথেষ্ট উন্নতি না হলে বুঝতে হবে, তারা এই গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। তখন বাঁচার একমাত্র উপায় হলো ব্যয়বহুল হার্ট প্রতিস্থাপন বা ট্রান্সপ্লান্ট করা। উন্নত বিশ্বে দুর্ঘটনাজনিত অকালমৃত্যুর পর ক্যাডাভারিক পদ্ধতিতে অন্যের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করা যায়। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো সে ব্যবস্থা চালু না থাকায় হার্ট প্রতিস্থাপনও সম্ভব নয়। তবে এখন পর্যন্ত এটাই ভালো চিকিৎসা।</p> <p> </p> <p>প্রতিরোধে করণীয়</p> <p>আগেই বলেছি, মাতৃত্বকালীন কার্ডিওমায়োপ্যাথি রোগীদের এক-তৃতীয়াংশ বাদ দিলে বাকিদের চিকিৎসা যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। তাই এই রোগের উপসর্গ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। গর্ভকালীন শেষ মাস বা প্রসব-পরবর্তী পাঁচ মাসের মধ্যে কোনো ধরনের শ্বাসকষ্ট হলে সবার আগে একটি ইকোকার্ডিওগ্রাম করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করতে হবে।</p> <p>আর হ্যাঁ, একবার যাঁদের কার্ডিওমায়োপ্যাথি হয়েছে তাঁরা আর কখনোই সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করতে পারবেন না। কারণ দ্বিতীয়বার এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা খুবই বেশি।</p>