<p>বাংলাদেশে কভিড-১৯ রোগীদের কী ধরনের উপসর্গ পাওয়া যাচ্ছে? এর কোনো চিকিৎসা নেই কিন্তু কিভাবে তারা সেরে উঠছে?</p> <p>প্রথম দিকে শনাক্ত হওয়া তিনজনেরই কভিড- ১৯ এর কিছু সাধারণ লক্ষণ ছিল। একজনের জ্বর ছিল। একজনের জ্বর ছিল না, তবে শুকনো কাশি ছিল। আর একজনের জ্বর ও কাশি উভয়ই ছিল। </p> <p>প্রথমে তাদের বাড়িতে গিয়ে উপসর্গ দেখে সন্দেহ হলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হলে আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অন্যদের মধ্যে যাতে এই রোগটি ছড়াতে না পারে, এ জন্য অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে তাদের আইসোলেশনে রাখা হয়। অন্য সময় হলে হয়তো তাদের বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া যেত।</p> <p>করোনা আক্রান্তদের নির্ধারিত কোনো চিকিৎসা না থাকলেও উপসর্গ দেখে জ্বরের জন্য জ্বরের ওষুধ, কাশির জন্য কাশির ওষুধ দেওয়া হয়। এতেই তাঁরা সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে ভর্তি করার সঙ্গে সঙ্গে আমরা যে কাজটি করি তা হলো, তাঁদের সংস্পর্শে যত লোক এসেছে তাদের সবাইকে পরীক্ষার আওতায় আনি।</p> <p> </p> <p>হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার আসলে কী?</p> <p>কফ এটিকেট বা কাশির শিষ্টাচার হলো মুখ ঢেকে হাঁচি-কাশি দেওয়া। পৃথিবীর সব মানুষেরই এটুকু মেনে চলা, এতটুকু ভদ্র হওয়া উচিত। কেননা কেউ যদি মুখ ঢেকে হাঁচি-কাশি দেয়, তবে ভাইরাস অন্য স্থানে ছড়াবে না। ধরুন, কোনো রুমে ৪০ জন মানুষের একটা মিটিং চলছে। সেখানে আমার হয়তো করোনার হালকা উপসর্গ আছে এবং আমি হয়তো অনবরত হাত দিয়ে নাক মুছেই যাচ্ছি। এরপর ওই রুম থেকে দরজার হাতল খুলে আমি বেরিয়ে গেলাম।</p> <p>কিন্তু বাকি ৩৯ জন যাঁরা ওই দরজা খুলে বাইরে যাবেন তাঁদের সবাইকে কিন্তু আমি এই ভাইরাসটি দিয়ে দিলাম। তাঁদের মধ্যে ৩০-৩৫ জনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকার কারণে হয়তো কোনো সমস্যা হলো না। কিন্তু ৫-১০ জনের ভেতর যে আমি রোগটি দিয়ে দিলাম এর দায় কিন্তু আমার।</p> <p>তাই সম্ভব হলে নাক-মুখ ঢেকে টিস্যু বা রুমাল ব্যবহার করে হাঁচি-কাশি দিন; অন্যথায় বাহু ভাঁজ করে হাঁচি-কাশি ঠেকান।</p> <p> </p> <p>কী ধরনের সাবান বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা উচিত?</p> <p>ইবোলা, নিপাহ, মার্স, এইচআইভি, কভিড-১৯ যা-ই বলুন না কেন, এর সবগুলোই ইনভেলপ ভাইরাস। এসব ভাইরাসের ইনভেলপটি ধ্বংস করে দিলে এর আর কোনো কার্যকারিতা থাকে না। এসব ভাইরাস প্রতিরোধের সহজ উপায় হলো, দুই হাত ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে নেওয়া। সব ধরনের সাবান, হ্যান্ডওয়াশ বা ডিটারজেন্ট (দু-একটি গ্লিসারিনসম্পন্ন ছাড়া) দিয়ে এই ইনভেলপ ভাইরাসের ইনভেলপ নষ্ট হয়; সংক্রমণের ক্ষমতা থাকে না। সাবান না থাকলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে দেখে নিতে হবে হ্যান্ড স্যানিটাইজারে ৭০ ভাগ অ্যালকোহল বা ইথানল আছে কি না। কিছু সাবান দেখা যায় যেগুলো সহজে গলে না, সেগুলো দিয়ে ভাইরাস ধ্বংস হবে কি না তাতে আমি অবশ্য নিশ্চিত নই। আমি সব সময়ই বলি, সাবান যত পচা হয়, ভাইরাস তত দ্রুত মারা যায়।</p> <p> </p> <p>মাছ, পশু-পাখি বা মাংস একই বাজারে বিক্রি করায় কোনো ঝুঁকি রয়েছে কি?</p> <p>বর্তমানে প্রায় ৭৫ ভাগ জরুরি রোগ (ইনফেকশাস ডিজিজ) ‘জুনোটিক’, যা আসে পশু থেকে মানুষে। তাই জীবিত হোক আর মৃত হোক সব ধরনের প্রাণীর সরাসরি সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা উচিত। সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়াতে মাছ, পশু-পাখি পৃথক স্থানে বিক্রি করা ভালো। আর মাংস ৬০-৭০ ডিগ্রির উচ্চ তাপমাত্রায় ৩০ মিনিটের মতো সিদ্ধ করে খাওয়া উচিত।</p> <p> </p> <p>এ ধরনের ভাইরাসে সৃষ্ট মহামারি কত দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে?</p> <p>মোট সাত ধরনের করোনাভাইরাস এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সার্স (এখন আর দেখা যায় না), মার্স (চলমান) ও নতুন যোগ হওয়া কভিড-১৯ এই তিনটি আমাদের জন্য বেশ বিপজ্জনক। এ ধরনের মহামারি সাধারণত ছয় থেকে ৯ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এরপর আস্তে আস্তে এর প্রকোপ বা আক্রমণের প্রভাব কমে যায়।</p>
