<p>কেমোথেরাপি এমন একধরনের চিকিৎসাব্যবস্থা, যার মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই কেমোথেরাপি তরল বা স্যালাইনের সঙ্গে সরাসরি রক্তে প্রবেশ করানো হয়। আবার কিছু ক্ষেত্রে ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল হিসেবেও খেতে দেওয়া হয়। রক্তের সঙ্গে মিশে এই ওষুধগুলো শরীরের যেখানে যেখানে ক্যান্সার ছড়িয়েছে, সেই ক্যান্সার কোষগুলো ধ্বংস করার চেষ্টা করে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরা কেমোথেরাপি নিতে ভয় পায়। ফলে বিলম্বে চিকিৎসা নেয় বা অনেক সময় থেরাপি নেয় না। ক্যান্সার হলে এটা করা ঠিক না এবং সেই ভয়কে জয় করেই থেরাপি নিতে হয়।</p> <p> </p> <p><strong>পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া</strong></p> <p>কেমোথেরাপি চলাকালীন সাময়িক কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। যেমন—চুল পড়ে যাওয়া, রক্তকণিকা কমে যাওয়া, রক্তশূন্য হওয়া, ক্ষুধামান্দ্য ও বমি বমি ভাব, খাদ্যনালিতে প্রদাহ, আলসার, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, হাত ও পায়ের আঙুলগুলো ঝিমঝিম করা, চামড়া ও নখে পরিবর্তন, জ্বর, ইনফেকশন, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, শরীর ব্যথা, মাথা ব্যথা, বোধশক্তি কমে যাওয়া, অবসাদ, বিষণ্নতা ইত্যাদি।</p> <p>তবে এসব সমস্যা যে সব রোগীর ক্ষেত্রে হবে তা কিন্তু নয়। চিকিৎসা ও নিয়ম মেনে চললে অনেক কম সমস্যাও হতে পারে।</p> <p> </p> <p><strong>প্রতিকারে করণীয়</strong></p> <p>► প্রতিবার খাবার আগে বা টয়লেট ব্যবহার করার পর টয়লেটের জায়গা ও হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করা উচিত। এতে ইনফেকশন প্রতিরোধ করা যায়। যাদের সর্দি-কাশির মতো ইনফেকশন আছে, তাদের সংস্পর্শ না যাওয়া, শরীরের তাপমাত্রা নরমাল আছে কি না তা খেয়াল রাখা উচিত।</p> <p>► রক্তশূন্যতা দেখা দিলে আয়রনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ বা আয়রন ট্যাবলেট গ্রহণ করা উচিত। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শে রক্ত নেওয়া যেতে পারে।</p> <p>► প্লাটিলেট কমে যাওয়ার কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে রক্তক্ষরণ বেশি হয়। শরীরের যেকোনো জায়গায় সামান্য কাটাছেঁড়া হলেই এ জন্য ধারালো বস্তু, বিশেষ করে সুচ, চাকু, কাঁচি ইত্যাদির আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনে হাতে গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে। রক্তক্ষরণ বন্ধ না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।</p> <p>► দাঁত পরিষ্কার করার সময় শক্ত টুথব্রাশের পরিবর্তে নরম টুথব্রাশ ব্যবহার করতে হবে।</p> <p>► বমি ভাব দূর করার জন্য প্রয়োজনে ওষুধ নির্দেশনা অনুযায়ী গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে অল্প অল্প করে সারা দিন আহার করুন। বেশি করে পানি পান করুন। কেমোথেরাপি নেওয়ার সময় বমি বমি ভাব হলে কয়েক ঘণ্টা আগে আহার করা উচিত।</p> <p>► কোষ্ঠকাঠিন্য কমানোর জন্য প্রচুর পানি পান করুন। আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করুন ও প্রয়োজনে ল্যাকটুলোজ, ইসবগুল সেবন করতে পারেন।</p> <p>► ডায়রিয়া হলে প্রচুর পানি পান করতে হবে (২-৩ লিটার)। প্রয়োজনে ওরস্যালাইন খেতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শে।</p> <p>► কেমো চলাকালীন আঁশযুক্ত খাবার যেমন : শাকসবজি, ফলমূল, আটার রুটি এবং সিরিয়াল পরিত্যাগ করতে হবে।</p> <p>► ত্বকের পরিবর্তন লক্ষ করলে সানস্ক্রিন ক্রিম, অয়েন্টমেন্ট, লোশন ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। </p> <p>► কেমোথেরাপি দেওয়ার আগেই চুল ছেঁটে ফেলা ভালো। এতে চুল পড়ে যাওয়ার কষ্ট কম অনুভূত হবে। প্রয়োজনে টুপি বা স্কার্ফ ব্যবহার করুন।</p> <p>► প্রতিবার আহারের পর নরম টুথব্রাশ দিয়ে হালকা ব্রাশ করা ভালো। মুখে ঘা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।</p> <p>► বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।</p> <p>► পরিষ্কার আলো-বাতাস যায় এমন রুমে বসবাস করতে হবে। প্রয়োজনে মেডিটেশন করুন, ভালো বই পড়ুন, প্রার্থনা করুন—এতে মন শান্ত থাকবে।</p> <p>► পূর্ণ বিশ্রামে থাকুন এবং সাহস রাখুন। কাজকর্ম নয়।</p> <p>► কোনোভাবেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন না। মানসিক শক্তি নিয়ে ক্যান্সারকে জয় করুন।</p> <p style="text-align:right"><strong>লেখক : </strong>সহযোগী অধ্যাপক</p> <p style="text-align:right">সার্জিক্যাল অনকোলজি বিভাগ</p> <p style="text-align:right">বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল</p> <p style="text-align:right">বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)</p>