<p>দেহের একটি অংশ কাঁধ যা তিনটি হাড়, চারটি জোড়া এবং ৩০টি মাংসপেশির সমন্বয়ে তৈরি। এর মধ্যে চারটি পেশি এবং চারটি জোড়ার মধ্যে একটি জোড়া (গ্লেনো-হিউমেরাল জয়েন্ট) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাঁধের জোড়া গঠনগতভাবে খুবই অস্থিতিশীল হলেও অন্যান্য জোড়া থেকে বেশি নড়াচড়া হয় বলে অতিসহজেই এখানে জয়েন্ট ডিসপ্লেসমেন্ট হয় বা জোড়া ছুটে যেতে পারে। কোনো জোড়া একাধিকবার ছুটে গেলে তাকে রিকারেন্ট (বারবার) ডিসপ্লেসমেন্ট বা রিকারেন্ট সাবল্যাক্সশন বলে।</p> <p>একবার জোড়া ডিসপ্লেসমেন্ট হলে পরবর্তী সময়ে জোড়া ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে ৮৬.৬ ভাগ এবং প্রথম আঘাতের দুই বছরের মধ্যে এটা হতে পারে। আঘাতের কারণে কাঁধের জোড়া ছুটে যায় ৬০ ভাগ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে (৯৫ ভাগ) ঘটে সামনের দিকে। পেছনের দিকে ৪ ভাগ এবং নিচের দিকে ১ ভাগ হয়। জন্মগতভাবে জোড়ার লিগামেন্ট ও ক্যাপসুল ঢিলা থাকলে সব দিকে ডিসপ্লেসমেন্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।</p> <p> </p> <p><strong>যাদের</strong> <strong>বেশি</strong> <strong>হয়</strong></p> <p>ক্রিকেট, ভলিবল, বাস্কেটবল খেলোয়াড়দের কাঁধের জোড়া ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি। মৃগী রোগীর খিঁচুনির কারণে এবং ইলেকট্রিক শকের কারণেও পেছনের দিকে জোড়া ছুটে যায়। এ ছাড়া স্ট্রোক এবং পেশি দুর্বলতা রোগের জন্য বেশি দুর্বল হলে জোড়া ছুটে যায়। কখনো কখনো ঘুমের মধ্যে, সাঁতার দেওয়া এবং খেলার সময় বাহুর একটা নির্দিষ্ট নড়াচড়ার জন্য কাঁধের জোড়া ছুটে যেতে পারে। ওপরে থাকা কোনো বস্তু ধরতে হাত বাড়ালে বা বাসের হ্যান্ডেল ধরে বাসে উঠতে চেষ্টা করলেও জোড়া ছুটে যেতে পারে।</p> <p> </p> <p><strong>উপসর্গ</strong></p> <p>♦ জয়েন্টের জায়গায় ফাঁকা এবং জোড়া ছুটে যাওয়ার জায়গায় ফোলা দেখা যায়।</p> <p>♦ হাতে তীব্র ব্যথা হয় বা অবশ অবশ ভাব হয়। তবে বারবার জোড়া স্থানচ্যুতি হলে কাঁধ ও হাতে কম ব্যথা অনুভব হয়।</p> <p>♦ বারবার হাত ছুটে গেলে হাড় ভাঙা ছাড়াও পেশি, জোড়ার আবরণ, লিগামেন্ট ও স্নায়ু ছিঁড়ে যেতে পারে। ফলে হাত দুর্বল হয় এবং সামনে, পিছনে বা ওপরে হাত  তুলতে অসুবিধা হয়।</p> <p>♦ দীর্ঘদিন ধরে হাড় ও তরুণাস্থির ক্ষয়ের ফলে জোড়ায় অস্টিওআর্থ্রাইটিস হয়ে জোড়া নষ্ট হয় এবং স্থায়ীভাবে জমে যায়।</p> <p>♦ বয়স্কদের জোড়ার পেশি ছিঁড়ে যায় এবং হাত ওপরে তুলতে পারে না। স্ক্যাপুলার অনিয়মিত মুভমেন্ট হয়, পেশি শুকিয়ে যায় এবং পিঠে ব্যথা হয়।</p> <p> </p> <p><strong>পরীক্ষা</strong></p> <p>কাঁধের জোড়া ছুটে যাওয়া চিকিৎসার আগে এক্স-রে, আর্থোগ্রাফি, আলট্রাসনোগ্রাফি বা এমআরআইয়ের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করতে হয়। এক্স-রের বিভিন্ন ভিউ, রোগীর অসুবিধা এবং রোগীকে শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে অতি সহজেই সমস্যাটা নিরূপণ করা যায়।</p> <p>চিকিৎসা ও করণীয়</p> <p>প্রথমবার জোড়া ছুটে গেলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে; জোড়াকে পূর্বের অবস্থায় বসাতে হবে। বাহুর যে নড়াচড়ায় কাঁধের জোড়া ছুটে যায়, সে ধরনের নড়াচড়া না করা এবং পেশি শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম করতে হবে।</p> <p>বারবার জোড়া ছুটে যাওয়ার কনজারভেটিভ চিকিৎসা খুবই সীমিত এবং সার্জিক্যাল চিকিৎসাই প্রধান। বাহুর যে মুভমেন্টে কাঁধের জোড়া ছুটে যায়, সে ধরনের মুভমেন্ট না করা এবং পেশি শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়ামের সাহায্যে কিছু সময়ের জন্য সুস্থ থাকা যায়। বিভিন্ন পদ্ধতির অপারেশন করা যায়, তবে প্রতিটিরই সুবিধা ও অসুবিধা আছে। এর মধ্যে ‘ল্যাটারজেট’ পদ্ধতিতে অপারেশন করা হলে জোড়ার স্থিতিশীলতা বেশি হয়।</p> <p>তবে জোড়ার চিকিৎসায় সফল ও কার্যকর সমাধান এনেছে বিস্ময়কর আর্থ্রোস্কোপিক সার্জারি। অর্থোপেডিক চিকিৎসায় এটি বর্তমানে সর্বশেষ ও সর্বাধুনিক পদ্ধতি। ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে ক্যামেরাযুক্ত আর্থ্রোস্কোপ জোড়ায় প্রবেশ করিয়ে এবং যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত বাইরে মনিটর দেখে ল্যাবরাম, ক্যাপসুল ও লিগামেন্ট রিপেয়ার করা হয়। এ পদ্ধতিতে রোগী তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।</p> <p> </p> <p><strong>সতর্কতা</strong></p> <p>প্রথম ডিসপ্লেসমেন্টের পর পরিচর্যা ভালোভাবে না হলে কিন্তু জোড়া বারবার ছুটে যেতে পারে। জোড়া ডিসপ্লেসমেন্ট হলে তখন কাঁধে ব্যথা হয়। তবে বারবার জয়েন্ট ডিসপ্লেসমেন্ট হলে কাঁধে কম ব্যথা অনুভব হয়। জোড়া ছুটে যাওয়ার পর বাহু একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে থাকে এবং নাড়ানো যায় না।</p> <p> </p> <p>লেখক : কনসালট্যান্ট</p> <p>হাড়, জোড়া, ট্রমা এবং আর্থ্রোস্কোপিক সার্জারি, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল</p> <p> ও পুনর্বাসন  প্রতিষ্ঠান (নিটোর)।</p>