<h3 style="color:#aaa;font-style:italic;">একজিমার মতো ত্বকের অসুখে আক্রান্ত হয় বহু মানুষ। পরিবেশগত কারণ ছাড়াও যাঁরা মানসিক চাপে বেশি থাকেন, তাঁদেরও একজিমা হয়। এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্মরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক <strong>ডা. মো. শহিদুল্লা সিকদার</strong></h3> <p> </p> <p>সাধারণভাবে ত্বকের ওপরের স্তরের এপিডার্মিসের যেকোনো প্রদাহই একজিমা নামে পরিচিত। যেখানে ত্বক লালচে হয়ে যায়, চুলকায়, ছোট ছোট দানা ও ফোসকার মতো ওঠে, দাগ পড়ে যায়, পানির মতো বের হয়।</p> <p>একজিমা ত্বকের প্রদাহজনিত রোগ, যা একটি নির্দিষ্ট স্থানে প্রথমে দেখা দেয়। ত্বক লালচে রং ধারণ করে, তারপর একটু ফুলে ওঠে। পরে ছোট ছোট দানা ও ফোসকা বেরোয়। ফোসকা ফেটে গিয়ে রস ঝরতে থাকে বা সেখানে জীবাণু সংক্রমণের কারণে পুঁজ দেখা দেয়। কখনো আবার ছোট গুটিগুলো মিশে গিয়ে ত্বক পুরু ও শক্ত করে ফেলে। একে বলে লাইকেনিফিকেশন, যা দীর্ঘস্থায়ী হলে চামড়া পুরু ও শক্ত হয়ে ওঠে এবং বায়ুতে আর্দ্রতা কম থাকলে ওই ত্বক ফেটে যায়, বড় বড় খোসা হিসেবে উঠে আসে। তখন তীব্র চুলকানির অনুভূতি মনে হয়, চুলকাতে চুলকাতে চামড়া ছিঁড়ে রক্ত বের হতে থাকে। এ ধরনের উপসর্গই একজিমা।</p> <p> </p> <p><strong>কারণ</strong></p> <p>একজিমার কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে মনে করা হয়, বংশগত, শরীরের ভেতর বিক্রিয়াজনিত, একজিমা তৈরি করে এমন কোনো পদার্থ শরীরের সংস্পর্শে আসা, থাইরয়েডজনিত অসুখ ইত্যাদি কারণ একজিমার জন্য দায়ী। </p> <p> </p> <p><strong>চিকিৎসা</strong></p> <p>একজিমার চিকিৎসা কঠিন কিছু নয়। পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেটের দানা ঈষৎ গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে রোজ এক থেকে দুবার ক্ষতস্থান ধৌত করলেও উপকার মেলে। এ ছাড়া স্টেরয়েড মিক্সড অ্যান্টিবায়োটিক মলম বা ক্রিম একজিমায় রোজ দুবার লাগাতে হবে সাত থেকে ১৪ দিন। ক্ষেত্রবিশেষে আরো বেশিদিনও প্রয়োজন হতে পারে। কখনো কখনো একজিমার সঙ্গে ফাঙ্গাল ইনফেকশন থাকলে অ্যান্টিফাঙ্গাল মলমের সঙ্গে ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে মুখে সেবনযোগ্য ওষুধ হিসেবে ফেক্সোফেনাডিন ট্যাবলেট ১২০ মিলিগ্রাম রোজ দুইবার করে কয়েক সপ্তাহ খাওয়া যেতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে এ ডোজ অনেক কম, যা নির্ভর করে শিশুর বয়স ও ওজনের ওপর। যদি যথেষ্ট পরিমাণে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন থাকে, তাহলে মুখে অ্যান্টিবায়োটিক ক্যাপসুল বা ট্যাবলেট খেতে হতে পারে সপ্তাহখানেক। কখনো কখনো একজিমার সঙ্গে ভিটামিনের অভাব থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভিটামিন ট্যাবলেট বিশেষ করে ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্স একটি করে দিনে দুইবার ১৫ দিন থেকে এক মাস সেবন করা যেতে পারে।</p> <p> </p> <p><strong>করণীয়</strong></p> <p>একজিমা হলে আক্রান্ত জায়গাটুকু শুধু পরিষ্কার ফুটানো ঠাণ্ডা পানি কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শমতো লোশন দিয়ে ধোয়া ভালো। নিমপাতার পানি বা ডেটল পানি দিয়ে কখনোই পরিষ্কার করা উচিত নয়। নিমপাতা বা অন্য গাছগাছড়া, অ্যান্টিসেপটিক, সাবান ইত্যাদি লাগালে একজিমা আরো বেড়ে যেতে পারে। খুব কম ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করা যেতে পারে। ওষুধ বা নিমযুক্ত সাবান পরিহার করে চলা ভালো। আর বেশি মাত্রায় ক্ষারীয় সাবান, সরিষার তেল, কাদামাটি, গাছপালা, চন্দন, নোংরা পানি, আনাজপত্র—বিশেষত পেঁপে, রসুন, পেঁয়াজ ইত্যাদির সংস্পর্শে আসা একজিমা রোগীর উচিত নয়।</p> <p>আবার বরিক এসিডের মলমও একজিমার ওষুধ নয়। এতে অনেক রোগীর ত্বকে অ্যালার্জি সৃষ্টি হয়, যাতে একজিমা আরো বেড়ে যেতে পারে। মোট কথা, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো মলমই লাগানো উচিত নয়। একজিমা রোগীর সমুদ্রে গোসল না করাই ভালো। কেননা নোনা পানি এবং বালুর প্রভাবে একজিমা অনেক সময় বেড়ে যায়।</p>