শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে গতকাল জ্বালানির জন্য দীর্ঘ সারিতে অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন এক চালক। ছবি : এএফপি
ঋণখেলাপি হয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কা অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের আশায় ফের ঋণ পাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। অব্যাহত চেষ্টার অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার থেকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে শ্রীলঙ্কা সরকার। এদিকে জ্বালানি বাঁচাতে গতকাল থেকেই দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দেশটির স্কুল ও জরুরি নয় এমন সব সরকারি সেবা খাত।
আইএমএফের শ্রীলঙ্কা সফরকারী দলটির সঙ্গে গতকাল বৈঠক করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী এবং একই সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা রনিল বিক্রমাসিংহে।
বিজ্ঞাপন
কলম্বোর সরকারপ্রধান বিক্রমাসিংহে আশা করছেন, আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ সহায়তা নিশ্চিত করা গেলে পরে অন্যান্য দেশের কাছ থেকে ঋণ সহায়তা মিলবে। বলা দরকার, নিজেদের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য শ্রীলঙ্কা সরকার জরুরি ভিত্তিতে কমপক্ষে ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা দরকার বলে জানিয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রার তীব্র সংকটে পড়ে প্রায় দেউলিয়া হয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কা গত ১৮ এপ্রিল থেকে আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। এরপর গত ৯ থেকে ২৪ মে দুই পক্ষের ভার্চুয়াল বৈঠকে শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দেওয়া সংক্রান্ত আলোচনায় বেশ অগ্রগতি হয়। এ ছাড়া চলতি মাসের শুরুতে ওয়াশিংটনভিত্তিক আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিভার সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক হয় বিক্রমাসিংহের। এসবের ভিত্তিতে আইএমএফের প্রতিনিধিদলটি বর্তমানে শ্রীলঙ্কা সফর করছে। এটাই আইএমএফের সঙ্গে কলম্বোর ব্যক্তি পর্যায়ের প্রথম বৈঠক।
আইএমএফ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘শ্রীলঙ্কার এমন কঠিন সময়ে আইএমএফ নিজেদের নীতি অনুসারে দেশটির প্রতি সহায়তার নিশ্চয়তা পুনর্ব্যক্ত করছে। ’
এদিকে অস্ট্রেলিয়া সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লেয়ার ও-নীলের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার সরকারপ্রধানের বৈঠক করার কথা। তবে দুই নেতা শুধু শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে নয়, মানবপাচার নিয়েও কথা বলবেন বলে জানায় ক্যানবেরা।
অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি অন্যান্য পদক্ষেপ কার্যকর করেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে শ্রীলঙ্কা। বিভিন্ন পদক্ষেপের অংশ হিসেবে গতকাল থেকে দুই সপ্তাহের জন্য স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে, বন্ধ রাখা হয়েছে জরুরি নয় এমন সব সরকারি সেবা খাত। পেট্রল ও ডিজেল খরচ করা যতটা সম্ভব কমানোর লক্ষ্যে সরকারের এমন পদক্ষেপ।
সমালোচকদের মতে, সরকারের বিভিন্ন ভুল পদক্ষেপ শ্রীলঙ্কার বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের জন্য দায়ী। এ সংকট এত তীব্র পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে সরকার খাবার, ওষুধ, জ্বালানির মতো মৌলিক পণ্য আমদানি করতে পারছে না। ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশমুক্ত হওয়ার পর শ্রীলঙ্কা এত বড় অর্থনৈতিক সংকটে আর পড়েনি।
জাতিসংঘ জানায়, দুই কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দেশ শ্রীলঙ্কা এতটাই সংকটে রয়েছে যে প্রতি পাঁচজনে চারজন খাওয়া কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। মারাত্মক খাদ্যসংকটের শিকার দেশটিতে গর্ভবতী নারীদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে খাদ্যের ব্যবস্থা করেছে জাতিসংঘ।
ভয়াবহ সংকটে পড়া জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে আসে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করার জন্য। বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নিলে হতাহতের ঘটনা ঘটতে শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন মাহিন্দা রাজাপক্ষে। বিদায় নেন মন্ত্রিসভার বেশির ভাগ সদস্য। নতুন প্রধানমন্ত্রী করা হয় বিক্রমাসিংহেকে। কিন্তু এতে বিক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। চলমান বিক্ষোভে শামিল হয় শিক্ষার্থীরা। তাদের বিক্ষোভ এখনো চলছে। গতকালও বিক্ষোভরত ২১ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সূত্র : এএফপি, টাইমস অব ইন্ডিয়া