ব্রাজিলের রিও ডিও জেনিরোর বস্তিগুলো মাদকের করালগ্রাসে নিমজ্জিত। সেখানে অস্ত্র হাতে পাহারা দেয় যুবকরা, কিন্তু একটু সামনে এগোলেই দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। সেখানে রয়েছে লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় শহুরে সবজিবাগান। মাদক সন্ত্রাস ছেড়ে অনেকেই এখন এই বাগানে কাজ করছে।
বিজ্ঞাপন
২০১৩ সালের শেষ দিকে ‘ক্রাকোলান্দিয়া’ নামে পরিচিত মাদককবলিত এলাকায় প্রথম চারা রোপণ করা হয়। মাদক কারবারি ও আসক্তদের সেই স্বর্গরাজ্যেই ধীরে ধীরে পরিধি বাড়ে সবজিবাগানের, বাড়ে পরিচিতি।
বর্তমানে এই বাগানে যে পরিমাণ সবজি উত্পাদিত হয়, তা দিয়ে প্রায় ৮০০ পরিবারের চাহিদা মেটানো হয়। সবজিগুলোর বিশেষত্ব হচ্ছে, এগুলো কীটনাশকমুক্ত এবং দরিদ্রদের ক্রয়সীমার মধ্যে।
বাগানের এক ব্যবস্থাপক জুলিও সিজার বারোস বলেন, ‘বিষাক্ত খাবার খেয়ে কেন গরিব মানুষ ভুগবে? অর্গানিক খাবার শুধু ধনীদের নাগালে থাকবে? এটা বন্ধ করাই আমার লক্ষ্য। ’
রিওর ৫৬টি সবজিবাগানের মধ্যে একটি হচ্ছে মানগুইনস বাগান, যেটি নগর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মিলে ২০০৬ সালে শুরু করেছিলেন বারোস। মিলান আরবান ফুড পলিসি প্যাক্ট এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছে। নগরাঞ্চলে নিরাপদ খাদ্য উত্পাদনের জন্য বিশ্বের দুই শর বেশি দেশ মিলান আরবান ফুড পলিসি প্যাক্ট শীর্ষক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
মানগুইনস বাগান চারটি ফুটবল মাঠের সমান এবং প্রতি মাসে এখানে আড়াই টন ইউকা, গাজর, পেঁয়াজ, বাঁধাকপি এবং অন্য সবজি উত্পাদিত হয়। এর মধ্যে অর্ধেক বিক্রি করা হয় এবং বাকি অর্ধেক এতিমখানায় দান করা হয়।
সবজিবাগানের ২৫ কর্মীর মধ্যে দিওনে এনেদিনা দা সিলভা (৭৩) একজন। তিনি আগে একটি হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করতেন। বাগানের আগাছা পরিষ্কার করতে করতে তিনি বলেন, ‘আমার জীবনযাত্রা, খাদ্য সব কিছু পাল্টে দিয়েছে এই বাগান। ’
দ্য সিলভা ছাড়া বাগানের বাকি কর্মীরা মাদক ও বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ছিল। তাদের মধ্যে ৪০ বছর বয়সী এক ব্যক্তি নিজের অতীত পরিচয় প্রকাশ না করে বলেন, ‘এটা আমার জন্য চিকিত্সা। রোদ-বৃষ্টি যা-ই হোক, আমি এখানে প্রতিদিন আসি। আমি কোথাও যাচ্ছি না। ’ নিজের কাজ নিয়ে এখন গর্বিত এই ব্যক্তি বলেন, ‘এই কাজের কারণে আমার ১১ বছর বয়সী মেয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে পারে। ’ সূত্র : এএফপি