দলে পরিবর্তন প্রয়োজন। এ পরিবর্তন আসতে হবে নেতাদের পদ থেকে শুরু করে কাজের পদ্ধতিতেও। ভারতের সবচেয়ে পুরনো ও বেশি দিন দেশ চালানো রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের ‘চিন্তন শিবির’-এর প্রথম দিন গতকাল শুক্রবারের মূল সুর ছিল এটিই।
ভোট তথা ক্ষমতার রাজনীতিতে পিছিয়ে পড়া কংগ্রেসের পরিচালনা কাঠামো এবং নেতৃত্বে বড় কোনো পরিবর্তন আসছে কি না, কিছুদিন ধরে তা ভারতের রাজনীতির অন্যতম আলোচ্য বিষয়।
বিজ্ঞাপন
চিন্তন শিবিরের প্রথম দিন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী দলে পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করার পাশাপাশি সরকারের সমালোচনা করেন। সোনিয়া গান্ধী ছাড়াও গান্ধী পরিবারের সদস্য কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও তাঁর বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীসহ সারা দেশ থেকে ৪০০ প্রতিনিধি এই বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। আগামীকাল রবিবার পর্যন্ত চলা আলোচনায় গৃহীত সিদ্ধান্ত পরবর্তী সময়ে কার্যকর করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী তাঁর বক্তব্যে দলীয় সংস্কারের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘সংগঠনে পরিবর্তন আনা সময়ের প্রয়োজন এবং আমাদের কাজের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। ... দলকে প্রয়োজনীয় কিছু রদবদলের মধ্য দিয়ে আরো সময়োপযোগী হয়ে উঠতে হবে। ’
কংগ্রেস সূত্র জানায়, এখন থেকে পাঁচ বছরের বেশি কেউ কোনো পদে থাকতে পারবেন না। দায়িত্বে থাকার পর তিন বছর ‘বিশ্রামে’ কাটিয়ে আবারও দায়িত্বের উপযুক্ত হবেন। এ ছাড়া সংগঠনে একটি সমীক্ষক দল থাকবে। তারা দৈনিক ভিত্তিতে দলের কর্মকাণ্ড এবং বিষয়ভিত্তিক অংশগ্রহণের বিষয়ে নেতৃত্বকে জানাতে থাকবে। প্রতিটি কমিটির অর্ধেক সদস্যের বয়স হবে ৫০ বছরের নিচে। সংগঠনের তৃণমূল পর্যায়ে জোর দেওয়া হবে।
বিজেপি শাসিত কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনাও করেন সোনিয়া। তিনি বলেন, বিজেপি সরকার ‘ন্যূনতম সরকার, সর্বোচ্চ শাসনের’ কথা বলছে। এর অর্থ হচ্ছে, দেশকে মেরুকরণের স্থায়ী অবস্থায় নিয়ে ক্রমাগত ভয় ও নিরাপত্তাহীনতায় থাকতে বাধ্য করা। এ ছাড়া আমাদের সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ ও সমনাগরিক সংখ্যালঘুদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে ভয়ংকরভাবে নিষ্ঠুরতা দেখানো ও নির্যাতন করা।
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব নেওয়া ও সবচেয়ে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকা দল কংগ্রেস সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চরম সংকটে পড়েছে। পর পর গত দুটি লোকসভা নির্বাচনে বড় ধরনের পরাজয়ের শিকার হয় তারা। মূলত গান্ধী পরিবারের নিয়ন্ত্রণে থাকা দলটিতে বিভিন্ন সময় সংস্কারের দাবি উঠেছে। অতি সম্প্রতি দলের ভেতরে-বাইরে এ দাবি খুবই জোরালো হয়ে ওঠে। এই প্রেক্ষাপটে শীর্ষস্তর থেকে বলা হয়, এবারের চিন্তন শিবিরে আলোচনার পর কংগ্রেস দলের ভাগ্য ফেরাতে সাংগঠনিক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবে। সূত্র : এনডিটিভি ও আনন্দবাজার পত্রিকা