<p>লেবাননে বৈরুতের বাসিন্দাদের সব আশাই যেন উবে গেছে গত মঙ্গলবারের বিস্ফোরণে। কারণ ওই বিস্ফোরণ ধসিয়ে দিয়েছে পুরো বৈরুতকে। ৩ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্পের মতো শক্তিশালী কম্পন সৃষ্টি করা ওই বিস্ফোরণের ধাক্কা টের পাওয়া গেছে ২৪০ কিলোমিটার দূরে সাইপ্রাসেও।</p> <p>রাজধানী বৈরুতের স্রেফ একটি অংশের চিত্র থেকেই বোঝা যায় ওই শহরের চরম বিপর্যয়কর পরিস্থিতি। এই যেমন—শহরটির ঐতিহাসিক মার মিখাইল এলাকার সাজানো-গোছানো দোকান ছিল আলিয়াস বুক। বিস্ফোরণস্থল অর্থাৎ বন্দর থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে ওই দোকানের অবস্থান। অন্দরসজ্জার প্রতিটি দিক বলে দিত দোকান মালিকের যত্ন-আত্তি আর রুচির কথা।</p> <p>আলিয়াস বুকের মালিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত মঙ্গলবারের বিস্ফোরণ এতটাই প্রবল ছিল যে কাচের দরজা মুহূর্তের মধ্যে গুঁড়ো হয়ে বুলেটের মতো ছুটে চারপাশে ছড়িয়ে পরে। দেয়ালজুড়ে সাজানো বইয়ের ভেতর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে কাচের টুকরা। উল্টে যায় দোকানের সব চেয়ার-টেবিল। দেয়ালের কোনো কোনো জায়গার টাইলস পর্যন্ত উঠে এসেছে। বন্দরের এক কিলোমিটারের মধ্যে থাকা সব ভবনই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আর খোদ বিস্ফোরণস্থলে তৈরি হয়েছে ৪০০ ফুট চওড়া এক গর্ত।</p> <p>খোলা জায়গায় যা ঘটেছে, সেটাও শহরবাসীর কল্পনার বাইরে। ঘটনাস্থল থেকে বেশ দূরে থাকা লোকজনও বিস্ফোরণের তীব্রতায় নিজ নিজ জায়গা থেকে ছিটকে পড়েছে। ঘটনাস্থলের নিকটতম সড়কের গাড়িগুলো উল্টে গেছে। খানিকটা দূরের গাড়িগুলোর কাচ ভেঙে পড়েছে। না বললেই নয়, ওই বিস্ফোরণ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে বন্দর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত। এমনকি ১২ কিলোমিটার দূরের ভবনগুলোও কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।</p> <p>বন্দর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরের ভবনগুলোও বেহাল। কোনো কোনো ভবনের কংক্রিট খানিকটা করে ধসে পড়েছে এবং দেখা গেছে, ওই কংক্রিট রাস্তার পাশে রাখা গাড়ির ওপর পড়ায় গাড়ি দুমড়ে-মুচড়ে গেছে।</p> <p>গৃহযুদ্ধ, সর্বস্তরে আকণ্ঠ দুর্নীতি, অর্থনীতির নিম্নমুখী গতি, রাজনীতিকদের অব্যাহত স্বার্থান্বেষণে এমনিতেই ভীষণ ক্ষুব্ধ লেবাননের মানুষ। এর সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছে করোনাভাইরাস মহামারি। মহামারি নিয়ন্ত্রণে জারি করা লকডাউন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে বসেছে। এর ওপর সরকারপক্ষের অবহেলায় ঘটল এমন ভয়াবহ এক বিস্ফোরণ। তছনছ হয়ে গেছে পুরো রাজধানী। ক্ষতির পরিমাণ দেড় হাজার কোটি ডলার হতে পারে বলে ধারণা করছেন শহরের মেয়র।</p> <p>বৈরুতের এক দোকান মালিক নায়লা সাবা বলেন, ‘আমি একেবারে শেষ হয়ে গেছি। আমার চোখে আর পানিও নেই।’ ৪২ বছর বয়সী নায়লা দোকানের ২০ কর্মীর আটজনকে আগেই বিদায় দিতে বাধ্য হয়েছেন। বাকি যাঁরা আছেন, তাঁদেরও আর আগের মতো পুরো সময় কাজ করতে হচ্ছিল না। এই যখন অবস্থা, তখন দোকানটিই ধ্বংস হয়ে গেল। সূত্র : আলজাজিরা, সিএনএন।</p>