<p>সামরিক উত্তেজনার মধ্য দিয়ে নতুন বছর শুরু করেছে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম কোনো বিদেশি নেতাকে প্রকাশ্যে সামরিক হামলার মাধ্যমে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এমন কর্মকাণ্ডের জবাব দিতে গিয়ে ইরানের ‘ভুলে’ ১৭৬ জন বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। এসব ঘটন-অঘটনের মধ্য দিয়ে যেভাবে দুই শত্রু এগোচ্ছে, তাতে শিগগির সংকট নিরসনের কোনো আশা দেখছেন না পর্যবেক্ষকরা।</p> <p>ইরাকের রাজধানী বাগদাদে সম্প্রতি ইরানের জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার মধ্য দিয়ে দ্বন্দ্ব চরম পর্যায়ে নিয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, কমপক্ষে চারটি মার্কিন দূতাবাসে হামলার পরিকল্পনা করছিল ইরান এবং তা ঠেকাতেই সোলাইমানি হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।</p> <p>অন্যদিকে ইরান ওই হত্যাকাণ্ডের জবাব দিতে গিয়ে ‘ভুলক্রমে’ যাত্রীবাহী বিমানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ১৭৬ জনের প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।</p> <p>পাল্টাপাল্টি হামলায় এভাবে প্রাণহানি ঘটাতে থাকা ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে সংকটের পথ ছেড়ে বের হবে, সে প্রশ্নের উত্তর আপাতত মিলছে না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এরই মধ্যে ইরানের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) শীর্ষক ইরানের পরমাণু চুক্তি থেকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে আগেই বের করে নিয়েছিলেন। তিনি ইউরোপ ও রাশিয়ার প্রতিও ওই চুক্তি ত্যাগের আহবান  জানিয়েছেন। তাঁর কথায় বা কাজে ইরান-বিরোধিতা থেকে পিছু হটার কোনো লক্ষণ নেই।</p> <p>এদিকে গত বুধবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতা বাড়াতে আমি আজ ন্যাটোকে অনুরোধ জানাব। আমেরিকা জ্বালানি খাতে স্বাবলম্বী হয়েছে। আমরা স্বাবলম্বী এবং মধ্যপ্রাচ্যের তেলের কোনো প্রয়োজন আমাদের নেই।’ এর মধ্য দিয়ে তিনি কী বার্তা দিতে চেয়েছেন, সে সম্পর্কে বিশ্লেষকদের অভিমত, বার্তাটি সম্ভবত সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) মতো উপসাগরীয় মিত্রদের উদ্দেশে দিয়েছেন ট্রাম্প। সেটা আমলে নিয়েই উপসাগরীয় এসব দেশ ইরান-বিরোধিতা থেকে পিছু হটতে শুরু করেছে এবং ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে শুরু করেছে। বলা দরকার, এত দিন পর্যন্ত মার্কিন সামরিক ছত্রচ্ছায়ায় নিজেদের সুরক্ষিত ভেবে এসেছে উপসাগরীয় দেশগুলো।</p> <p>মার্কিন রাষ্ট্রনেতার নানা ইঙ্গিতের মধ্যে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ চান না তাঁরা। বরং আলোচনার টেবিলে বসে সংকট থেকে উত্তরণের ভালো রাস্তা খুঁজে বের করতে চান। এর মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তাঁরা ইরানকে মোকাবেলা করবেন এবং ইরানকে দমন করবেন।</p> <p>যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের নানামুখী কথাবার্তার মধ্যে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন উপস্থিতির অবসান চান তিনি। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিও তাঁর পক্ষে দৃঢ় অবস্থান ঘোষণা করেছেন। অথচ মধ্যপন্থার রুহানি একসময় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিত্রতা প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিয়েছিলেন।</p> <p>যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সাবেক বিশ্লেষক ও বর্তমানে ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য এলিসা স্লটকিন মনে করেন, কোন পক্ষ কী বলছে, কী চাচ্ছে, সেসবে কিছু আসে যায় না। কে কী করছে, সেটার ওপর নির্ভর করছে ভবিষ্যৎ। তিনি আরো বলেন, ‘ইচ্ছা করে যুদ্ধ বাধানো হয় না। বেশির ভাগ যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় পাল্টপাল্টি হামলা থেকে। সেখান থেকে আর পিছু হটার সুযোগ থাকে না।’ ইরান-যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে বিশ্ব এখন বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে আছে এবং দুপক্ষের যেকোনো তুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে—এমন আশঙ্কা করছেন তিনি। সূত্র : সিএনএন।</p>