<p>ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন যে লক্ষ্যে আগাম নির্বাচন ডেকেছিলেন, সে লক্ষ্য অর্জনে তিনি অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছেন। এবার ব্রেক্সিটও কার্যকর হয়ে যাবে অনায়াসে। কিন্তু ব্রেক্সিট নিশ্চিত করাই জনসনের একমাত্র কাজ নয়। ব্রিটিশদের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মিলিয়ে দেওয়া এবং সেই সঙ্গে স্কটল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের জাতীয়তাবাদ সামাল দিয়ে যুক্তরাজ্য হিসেবে অস্তিত্ব নিশ্চিত করার গুরুদায়িত্বও এখন তাঁর কাঁধে।</p> <p>আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ব্রেক্সিট কার্যকরের অঙ্গীকার করে সংখ্যাগরিষ্ঠ জয়ের দেখা পেয়েছেন জনসন। সাড়ে ৬০০ আসনের ৩৬৫টি কনজারভেটিভদের ঝুলিতে গেছে। পার্লামেন্টে এবার কনজারভেটিভদের জোরালো অবস্থানের কারণে তাঁকে ব্রেক্সিটসংক্রান্ত বিল পাস করানোর ব্যাপারে আর বাধার মুখে পড়তে হবে না। সে ক্ষেত্রে তিনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ব্রিটেনের বিচ্ছেদ নিশ্চিত করতে পারবেন। এটা অবশ্য জটিল ব্রেক্সিটপ্রক্রিয়ার মাত্র একটি ধাপ।</p> <p>পরবর্তী ধাপ হলো অন্তর্বর্তী পর্যায়, যার মেয়াদ ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে তাঁকে ইইউ-ব্রিটেন বাণিজ্য, অর্থনীতি, নিরাপত্তাসহ সব ক্ষেত্রে সমঝোতা নিশ্চিত করতে হবে। এসব বিষয়ে চুক্তি হওয়ার পর তা ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এবং ইইউতে পাস করানোর ঝক্কিও আছে। সব বাধা পেরিয়ে জনসন ব্রেক্সিট-পরবর্তী অন্তর্বর্তী পর্যায় সফলভাবে পার করার কৃতিত্ব দেখাতে পারবেন কি না, সেটা একমাত্র প্রশ্ন নয়।</p> <p>গুরুত্বপূর্ণ আরেক প্রশ্ন হলো, ইউরোপীয় জোটে থাকতে আগ্রহী স্কটল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের জাতীয়তাবাদীদের এখন কিভাবে সামাল দেবেন প্রধানমন্ত্রী জনসন। কারণ উভয় অঞ্চলে এবারের নির্বাচনে বড় ধরনের সাফল্য পেয়েছে জাতীয়তাবাদীরা, যারা ইইউতে থাকার জন্য যুক্তরাজ্য থেকে আলাদা হয়ে যেতে প্রস্তুত।</p> <p>স্কটল্যান্ডের ৫৯টি আসনের ৪৮টিতে জয় পাওয়া স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির (এসএনপি) নেতা নিকোলা স্টারজিওন স্পষ্ট বলেছেন, ‘আমি মানছি, এ নির্বাচনের পর ইংল্যান্ডকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের করে নেওয়ার বাধ্যবাধকতা বরিস জনসনের রয়েছে, কিন্তু স্কটল্যান্ডকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের করে নেওয়ার বাধ্যবাধকতা তার নেই।’ স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোট করার কথা এরই মধ্যে তিনি পেড়ে ফেলেছেন। এ ব্যাপারে বড়দিনের আগেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।</p> <p>উত্তর আয়ারল্যান্ড ঘিরেও একই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ স্কটল্যান্ডের মতো সেখানেও জাতীয়তাবাদীরা এবারের নির্বাচনে এগিয়ে গেছে।</p> <p>ওই দুই অঞ্চলের জাতীয়তাবাদ সামাল দেওয়ার পাশাপাশি জনসনের আরো কিছু ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে মাথা ঘামাতে হবে। ঘরোয়া ইস্যুগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং শিশু-বৃদ্ধ-প্রতিবন্ধীদের বিশেষ সেবা যথাযথভাবে নিশ্চিত করা। ব্রিটেনের অভিবাসনব্যবস্থা কেমন হবে, সেটা নির্ধারণ নিয়েও সংকট রয়েছে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি ব্রিটেনের ভূমিকাও খুব দ্রুত নির্দিষ্ট করতে হবে জনসনকে। সূত্র : এএফপি, বিবিসি।</p> <p> </p>