<p>দেশের একমাত্র একাডেমিক জাদুঘর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি মানব ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব, প্রাচীন শিল্পকলার নিদর্শন সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রদর্শন এবং সংস্কৃতি বিষয়ে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমে শিক্ষার্থী ও গবেষকদের সহায়তা করে আসছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রকাশনায় রয়েছে এ জাদুঘরের বিশাল পরিচিতি। তবে বর্তমানে জাদুঘরের চারটি গ্যালারিতে প্রদর্শিত বিভিন্ন সংগ্রহের নাম, প্রাপ্তিস্থান ও সময় উল্লেখ নেই। যার ফলে দর্শনার্থী, শিক্ষার্থী ও পর্যটকরা এ নিদর্শন সংগ্রহের সঠিক ইতিহাস জানতে পারছেন না।</p> <p>জানা যায়, জাদুঘরটি ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠা হয়। এটি চট্টগ্রামের একমাত্র শিল্প জাদুঘর এবং দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একমাত্র জাদুঘর হিসেবে পরিচিত। জাদুঘরটির বর্তমান স্থায়ী সংগ্রহ সংখ্যা শতাধিক। যেখানে রয়েছে প্রাগৈতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক ভাস্কর্য, লোকশিল্প, ইসলামিক এবং সমসাময়িক শিল্পের বিভিন্ন সংগ্রহ এবং বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পকলার নিদর্শন। পাশাপাশি রয়েছে কাঠের জীবাশ্ম, ময়নামতি, মহাস্থান ও পাহাড়পুর প্রত্নক্ষেত্র হতে উত্খননকৃত বিভিন্ন শিল্পবস্তু, প্রাচীন ও মধ্যযুগের মুদ্রা, শিলালিপি, পাণ্ডুলিপি, ভাস্কর্য, টেরাকোটা, অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র, পোশাক-পরিচ্ছদ, ধাতু শিল্পকর্ম, চীনামাটির বাসন-কোসন এবং গাত্রালঙ্কারসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র লোকশিল্প।</p> <p>সরেজমিনে দেখা যায়, জাদুঘরে প্রাগাৈতিহাসিক ও প্রত্নতত্ত্ব গ্যালারি, ভাস্কর্য, ইসলামিক শিল্পকলা, লোকশিল্প ও সমকালীন শিল্প নামের গ্যালারি রয়েছে। এ গ্যালারিগুলোর মধ্যে শুধু ভাস্কর্য গ্যালারির সংগ্রহগুলোর প্রাপ্তিস্থান ও পরিচিতি দেওয়া আছে। আর অন্যসব গ্যালারির অধিকাংশ সংগ্রহের পরিচিতি ও প্রাপ্তিস্থান উল্লেখ নেই। যার ফলে দর্শনার্থীরা এসব সংগ্রহের সঠিক পরিচয় জানতে পারছে না। এছাড়া সমকালীন গ্যালারি অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকার অভিযোগ রয়েছে।</p> <p>জাদুঘরে ঘুরতে আসা প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রথম বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, লোকশিল্প গ্যালারির কোনো সংগ্রহের প্রাপ্তিস্থান ও পরিচিতি কিছুই দেওয়া নেই। তাই এ সংগ্রহগুলোর সঠিক পরিচয় ও ইতিহাস জানতে পারছি না। এ গ্যালারি ছাড়াও অন্য গ্যালারির সংগ্রহশালারও একই অবস্থা।</p> <p>এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরের ডিসপ্লে অফিসার জিয়াউদ্দিন মোহাম্মদ তৈয়ব হোসেন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সব গ্যালারির সংগ্রহগুলোর প্রাপ্তিস্থান ও পরিচিতি না থাকার মূল কারণ এ বিষয়ের গবেষক নেই। কারণ যাঁরা এগুলো সংগ্রহ করেছেন সবার নাম ও সময় তাঁরাও জানেন না। এগুলোর ইতিহাস না জেনেশুনে হঠাৎ করে নাম-প্রাপ্তিস্থান দেওয়া সম্ভব না। তাই ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এগিয়ে আসলে ধীরে ধীরে সংগ্রহগুলোর প্রাপ্তিস্থান ও পরিচিতি দেওয়া সহজ হবে।’</p> <p>চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরের পরিচালক প্রফেসর ভূঁইয়া ইকবাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কিছুদিন হলো আমি দায়িত্ব পেয়েছি। ইতোমধ্যে ভাস্কর্য গ্যালারি সংগ্রহগুলোর প্রাপ্তিস্থান ও পরিচিতি সম্পন্ন হয়েছে। আশাকরি ধীরে ধীরে এ বিষয়ে পারদর্শী গবেষকদের মাধ্যমে সব গ্যালারির সংগ্রহগুলো চিহ্নিত করে প্রাপ্তিস্থান ও পরিচিতি দেওয়া হবে।’</p> <p>সমকালীন গ্যালারি বন্ধ থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লোকবল সংকটের কারণে মাঝে মাঝে এ গ্যালারি বন্ধ থাকে। লোকবল নিয়োগের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কাছে আবেদন করা হয়েছে। তবে নিচতলার একজন পিয়ন আছেন, তাঁকে বলেছি এখানে সময় দিতে হবে না। সমকালীন গ্যালারিতে যেন সময় দেয়। কারণ গ্যালারি বন্ধ থাকলে প্রদর্শনও সম্ভব না। এছাড়া ছবিগুলোও নষ্ট হয়ে যাবে।’</p> <p> </p>