<p>যুগ যুগ ধরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে এলাকার নারী উন্নয়নে অবিস্মরণীয় অবদান রেখে চলেছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড মহিলা কলেজ। অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও কলেজটির অধ্যক্ষ জরিনা আখতারের সঠিক দিক নির্দেশনা এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আন্তরিকতায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে নারী শিক্ষায় মডেল হয়ে ওঠেছে। যার স্বীকৃতি স্বরূপ সরকার এটি জাতীয়করণের প্রক্রিয়াও চূড়ান্ত করছে বলে জানা গেছে। এটি বাস্তবায়িত হলে সর্বক্ষেত্রে কলেজটি আরো এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।</p> <p>জানা যায়, সীতাকুণ্ড পৌরসদর মন্দির সড়ক সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত সীতাকুণ্ড মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৪ সালে। এর আগে বহুকাল একই ভবনে বালিকা বিদ্যালয় পরিচালিত হলেও ’৯৪ সালের পর এটি কলেজে উন্নীত হওয়ায় একাদশ, দ্বাদশ ও স্নাতক পাস কোর্স নিয়ে শুরু হয় নতুন যাত্রা। কলেজে রূপান্তরের পর এলাকার নারীদের ভরসা বেড়ে যায় আরো। কারণ, এর আগে সীতাকুণ্ডে নারীদের উচ্চ শিক্ষায় মানসম্পন্ন তেমন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। তাই কলেজে উন্নীত হওয়ার পর থেকে বহু দূর-দূরান্তের মেয়েরা এখানে অধ্যয়নের লক্ষ্যে আসতে থাকে। এভাবে বিগত প্রায় দুই যুগ সময়ে এই কলেজ থেকে সুশিক্ষিত হয়ে অগণিত শিক্ষার্থী দেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে দায়িত্ব পালন করছেন। যা অব্যাহত রয়েছে এখনো। ফলে সার্বিক বিবেচনা সরকার এ প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারিকরণের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে।</p> <p>সরেজমিনে দেখা যায়, পৌরসদরের মন্দির সড়ক ও থানার মধ্যবর্তী এলাকায় একই সীমানার মধ্যে সীতাকুণ্ড মহিলা কলেজ ও বালিকা বিদ্যালয় পরিচালিত হয়। ফলে সবসময় নারী শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত থাকে কলেজ ক্যাম্পাস। কথা হয় কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক ১ম বর্ষের ব্যবসায় শিক্ষার ছাত্রী সুহরাত রজনী আরিয়ানা, একই শ্রেণির সায়মা তাসমিয়া ও সুস্মিতা সিকদার অর্নির সাথে। তাঁরা সবাই প্রায় অভিন্নভাবেই এই কলেজের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রশংসা করেন। তাঁরা জানান, কলেজের প্রত্যেকটি শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে দারুণ আন্তরিকতার সাথে পাঠদান করেন। ফলে সবাই উপকৃত হচ্ছেন। তাছাড়া এই কলেজে রয়েছে বহুমুখী কর্মকাণ্ড। নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় এখানে। প্রতিটি জাতীয় দিবস ছাড়াও বছরের বিভিন্ন সময়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এর মধ্যে ঋতুভিত্তিক অনুষ্ঠান, যেমন বর্ষাবরণ, শীতকালীন পিঠা উৎসব অন্যতম। এছাড়া নানান অনুষ্ঠানে মেতে থাকেন কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এরপরও গার্লস গাইডের মাধ্যমে তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে কারাতে প্রশিক্ষণ ও নানান অনুষ্ঠান করা হয়। যা তারা উপভোগ করেন। প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় বনভোজন। এতে তাঁরা নতুন নতুন জায়গা ভ্রমণ করার সুযোগ পান। তবে কলেজে কোনো খেলার মাঠ নেই। যা খুবই জরুরি।</p> <p>কলেজের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাবের সাংস্কৃতিক সম্পাদক সাংবাদিক শেখ সালাউদ্দিন বলেন, ‘মহিলা কলেজের প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানের সাথে আমি কোনো না কোনোভাবে জড়িত। তাই সেখানে প্রায়ই যাতায়াত আমার। তাই কলেজটির সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা আছে আমার। এ ধারণা থেকে বলতে পারি এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকারা শিক্ষার্থীদের নিজের সন্তানের মত স্নেহ করেন। তারা যথাসময়ে শ্রেণি কক্ষে গিয়ে পাঠদান করেন। মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করলে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অনেক ভালো ফলাফল করবে এটাই স্বাভাবিক। আর কলেজের অধ্যক্ষ জরিনা আখতারের মতো এত নিবেদিত একজন অধ্যক্ষ আজকাল খুঁজেও পাওয়া মুষ্কিল। তিনি যেভাবে সঠিক দিক নির্দেশনায় কলেজটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে’</p> <p>প্রতিবছর হাজার হাজার নারী শিক্ষার্থী এখান থেকে সুশিক্ষিত হচ্ছে। সংস্কৃতি চর্চাতেও এই কলেজটি সমান অবদান রাখছে। ফলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যাপক বিনোদনের সুযোগও লাভ করে থাকে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সীতাকুণ্ড মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ জরিনা আখতার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কলেজের প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই আমি এটির অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে আসছি। শিক্ষার্থীরা যেন ভালো ফলাফল করে এটাই আমার একমাত্র চাওয়া। এ জন্য যা যা করণীয় সবই করছি আমরা। প্রতিটি শিক্ষক-শিক্ষিকা আন্তরিকতার সাথেই এখানে কাজ করেন। আর পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বিনোদনের জন্য নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করি আমরা। আমাদের ঋতুভিত্তিক অনুষ্ঠান বর্ষাবরণ ও শীতকালীন পিঠা উৎসবসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানগুলো খুবই উপভোগ করেন সবাই।’</p> <p>প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই কলেজের বহু শিক্ষার্থী সুশিক্ষিত হয়ে স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে অবদান রাখছেন বলে জানান তিনি। অধ্যক্ষ জরিনা আখতার আরো বলেন, ‘তবে কলেজটি নারী শিক্ষায় ব্যাপক অবদান রাখলেও আমাদের বেশি কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। আমাদের শ্রেণিকক্ষ মোটে ১৫টি। যার মধ্যে দুটি মাল্টিমিডিয়া কক্ষ। এছাড়া ৪টি বিজ্ঞানাগার, একটি কম্পিউটার ল্যাব, একটি লাইব্রেরি আছে। কিন্তু নেই একটি খেলার মাঠ। এজন্য বড় ধরনের কোনো খেলাধুলার আয়োজন করা যায় না।</p> <p>জেএসসি, এসএসসি ও ইন্টারের পরীক্ষা কেন্দ্র পড়ে এখানে। শ্রেণি কক্ষ কম থাকায় এ সময় অনেক ক্লাস বন্ধ থাকে। যা পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটায়। ফলে একটি পরীক্ষার কেন্দ্রও যদি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হতো সেসময় পাঠদান অব্যহত রাখা যেত। তাহলে শিক্ষার্থীরা আরো উপকৃত হত।’</p> <p>তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের জন্য আরো কয়েকটি শৌচাগার দরকার। তবে সরকারিকরণ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই এ সমস্যা আর থাকবে না এমনই মনে করছেন তিনি।</p> <p>কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিনিধি বিজয় স্মরণী ডিগ্রি কলেজের প্রিন্সিপাল মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘নারী শিক্ষায় সীতাকুণ্ড মহিলা কলেজের অবদান বলার অপেক্ষা রাখে না। এটি নারী শিক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। তবে কলেজটির কিছু অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে।’</p> <p>নতুন ও প্রয়োজনীয় ভবন নির্মিত হলে প্রতিষ্ঠানটি আরো গতিশীল হবে বলে মনে করেন তিনি।</p>