

'জ্যাকোব দ্য জুয়েলার', বিশ্বসেরা অলংকার নির্মাতার অন্দরে

আন্তর্জাতিক এলিট আর মহাতারকাদের সজ্জায় একটি মানুষই আছেন। তিনি জ্যাকোব আরাবো। কেনি ওয়েস্ট বা ফিফটি সেন্টের গানে তিনি 'জ্যাকোব দ্য জুয়েলার'। উজবেকিস্তানে জন্ম। মাত্র ১৪ বছর বয়সে নিউ ইয়র্কে চলে আসেন পরিবারের সঙ্গে। আবাস গড়েন কুইন্সের ফরেস্ট হিলস-এ। ১৬ বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দিয়ে জুয়েলার্স ট্রেড স্কুলে ভর্তি হন। ক্লাস কম্পিটিশনে একটি গয়নার বাক্স বানিয়েছিলেন। মিথ্যা বয়সের কথা বলে একটি চাকরি জোগাড় করেন। সপ্তাহে ১২৫ ডলার উপার্জন।

অলংকার ডিজাইনে তার দারুণ আগ্রহ ছিল। নিজেই গয়নার নকশা করে বাজারে বিক্রি করতেন। এখনো যেকোনো অলংকার তৈরির আগে মোম দিয়ে তার ডামি তৈরি করেন।

খুব দ্রুত তার আয় সপ্তাহে দেড় হাজার ডলারে পৌঁছলো। নিজ বাড়িতে ঘরের একটি কোণে গয়নার দোকার খুললেন। স্কুলের দুই-এজন বন্ধুকে নিলেন ছোটখাটো ব্যবসা পরিচালনার জন্যে।

এবার নিজেই এগোলেন। ম্যানহাটানের ফোরটি ফিফথ স্ট্রিটে একটি ফ্যাক্টরি দিলেন। নিজের নামে খুললেন প্রতিষ্ঠা 'জ্যাকোব অ্যান্ড কোং'।

নিজের কাজে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। তিনি বিশেষ কিছু বানাতে চাইতেন। হীরার প্রতি ঝোঁক ছিল। আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকায় গিয়ে হীরা বিষয়ে জ্ঞান বৃদ্ধি করেছিলেন।

খুব দ্রুত তার নামডাক ছড়িয়ে গেলো। সেলিব্রিটিরা আসতে থাকলেন তার শো-রুমে। একটা সময় দেখা গেলো, তার শো-রুমের দরজায় লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন মানুষ। ফ্যাশন জগতের মহরথীদের একজন তিনি। প্রায় ৭০টি গানে তাকে 'জ্যাকোব দ্য জুয়েলার' নামে ডাকা হয়েছে। ডলসি অ্যান্ড গাব্বানার মতো ব্র্যান্ডের পেছনে এই মানুষটিই ডিজাইনার হিসাবে কাজ করেন।

মাইকেল জ্যাকসন, ডেভিড বেকহ্যাম বা ম্যাডোনা, সবাই ঢুঁ মেরেছেন তার অলংকারের দোকানে। তারা প্রায়ই আইকনিক ডিজাইনের অলংকার চাইতেন নিজেদের জন্যে।

দোকানে আসা ভিআইপি ক্রেতাদের জন্যে দামি মদের সংগ্রহ রয়েছে তার।

আরাবোর বাবা মদের কারখানায় কাজ করতেন। ছেলে নিজের ব্র্যান্ডের ভদকা বাজারে এনেছেন। তবে তা স্বল্প পরিসরেই বিক্রি হয়। এর নাম 'বোকাজ'। আরাবোর বাবার বয়স এখন ৮৭।

২০০১ সালে স্ত্রী অ্যাঞ্জেলার জন্যে প্রথম ঘড়ির ডিজাইন করেন। মডেলটির নাম ছিল 'অ্যাঞ্জেল'। হীরকখচিত ঘড়িটা অনেকের নজর কাড়ে। পরে ওই ঘড়ির একটি সংস্করণ নাওমি ক্যাম্পবেলকে পরতে দেখা যায়।

জ্যাকোবের ডিজাইনকৃত কয়েকটি অসাধারণ ঘড়ি দেখুন। এগুলোর দাম ২ লাখ ডলার থেকে ১০ লাখ ডলার পর্যন্ত। পৃথিবীর ২০টি দেখে জ্যাকোব অ্যান্ড কোং-এর ঘড়ি কিনতে পাওয়া যায়।

তবে কেবল অলংকারেই সীমাবদ্ধ নন তিনি। ঘড়ির প্রকৌশলেও বিস্ময়কর অগ্রগতি সাধন করেন। এ ঘড়ির উদাহরণ দ্য কুয়েনটিন। দাম শুরু ২ লাখ ৫৮ হাজার ডলার থেকে। ভার্টিক্যাল টার্বুলিন এবং পুরো ৩১ দিনের শক্তি সঞ্চয় করে রাখতে সক্ষম এই ঘড়ি।

বিলিয়নিয়ার ওয়াচ নামে ২৬০ ক্যারেট হীরা দিয়ে একটি ঘড়ি বানান আরাবো। ঘড়িটির দাম ১৮ মিলিয়ন ডলার।

অ্যাস্ট্রোনমিয়া ক্লারিটি তার আরেক বিস্ময়কর সৃষ্টি। ত্রিপল এক্সিস টার্বুলিনের সঙ্গে রয়েছে গিয়ার সিস্টেম। এতে আছে ২৮৮-ফ্যাসেট জ্যাকোব কাট হোয়াইট ডায়মন্ড। এর খুচরা মূল্য ৬ লাখ ডলার।

অদ্ভুতরকমের হালকা ঘড়ি এটি। এ ঘড়ির কাঁটার নড়াচড়া যেন শিল্প। নীল রংয়ের রত্নের গ্লোবটি দৃষ্টিনন্দন।

হীরার সংগ্রহ অসাধারণ! গোলাপী এবং হলুদ হীরাগুলো এক একটি দাম কয়েক মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। হলুদ হীরাটি ৭৫ ক্যারেটের।

এই ঘড়িটি এক অনন্য সাধারণ সৃষ্টি। নাম এপিক এসএফ ২৪। এ ঘড়িতে ২৪টি ভিন্ন সময় দেখা যায়।

যখন আরাবো তার শো-রুম ফিফটি সেভেনথ স্ট্রিটে আনলেন, তখন কে জানতো যে এলাকাটি ধনীদের আগমনে মুখরিত হব। একমাত্র তার দোকানে ক্রেতাদের যে লাইন থাকে তাকে অনানুষ্ঠিকভাবে বলা হয় 'বিলিওনিয়ার্স রো'। নিজের বাড়ি কিনেছেন তিনি। অ্যাঞ্জেলা আছেন তার সঙ্গে। অ্যাপার্টমেন্টের পেছনে ১৬.৬৭ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছেন।

এলাকার ধনীদের ভবনের ৫৪ তলায় বসত গড়েছেন। সাড়ে তিন হাজার বর্গ ফুটের অ্যাপর্টমেন্টটি এখনো প্রায় খালি।

গাড়ির প্রতি নেশা রয়েছে তার। মোট ৮টি গাড়ি কিনেছেন। এর মধ্যে একটি লিমিটেড এডিশন মর্গান এবং একটি ক্লাসিক লন্ডন ট্যাক্সি রয়েছে যার ভেতরটা বেন্টলের মতো। আরো আছে একটি ফেরারি ৪৫৮।

ডিনারের জন্যে তিনি রকফেলার প্লাজার একটি গ্রিক রেস্টুরেন্ট লিমানিতে যান। কোণার একটি টেবিলে বসেন। একটু পর আসে অ্যাঞ্জেলা। পরে দুজনে মজা করে টাটকা সাসিমি আর অলিভ ওয়েলে ভেজানো গরম ব্রেড উপভোগ করেন। সূত্র : বিজনেস ইনসাইডার