<p>তিন বছরেরও বেশি সময় আগে অভ্যুত্থান মধ্যে দিয়ে দেশের ক্ষমতা দখল করে মায়ানমারের সেনাবাহিনী। এরপর থেকে কয়েক হাজার লোককে গ্রেপ্তার করে তারা। বর্তমানে বিরোধীদের চুপ করানোর জন্য মায়ানমারের সামরিক শাসন হত্যা ও গ্রেপ্তার বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।</p> <p>অং সান সুচির নির্বাচিত বেসামরিক সরকারকে অপসারণ করে সামরিক বাহিনী ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্ষমতা দখল করে এবং দেশব্যাপী তখন প্রতিবাদ শুরু হয়। প্রতিবাদ আন্দোলন তখন থেকে একটি বিস্তৃত সশস্ত্র বিদ্রোহে পরিণত হয়েছে এবং একাধিক ফ্রন্টে লড়াই অব্যাহত রয়েছে। সামরিক বাহিনী তাদের সেনাসংখ্যা বাড়ানোর জন্য ফেব্রুয়ারিতে নতুন নিয়োগ চালু করে।  </p> <p>গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্কের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভ্যুত্থানের পর থেকে সামরিক বাহিনীর হাতে ৫ হাজার ৩৫০ বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। প্রতিবেদনটি আংশিকভাবে শত শত ভুক্তভোগী এবং প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে দূর থেকে সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল, কারণ তদন্তকারীদের দেশে প্রবেশাধিকার দেয়নি জান্তা সরকার। </p> <p>এই মৃত্যুর পর এপ্রিল ২০২৩ থেকে জুন ২০২৪ পর্যন্ত সর্বশেষ প্রতিবেদন করার সময়ের মধ্যে ২ হাজার ৪১৪ জন মারা গেছে। যে সংখ্যাটি আগের প্রতিবেদন সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিমান ও কামান হামলায় শতাধিক লোক নিহত হয়।</p> <p>জাতিসংঘের অধিকার অফিসের মিয়ানমার দলের প্রধান জেমস রোডেহেভার বলেছেন, ‘মায়ানমার মানবাধিকার অতল গভীরে।’</p> <p>জেনেভায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় রোডেহেভার উল্লেখ করেছেন, ‘মায়ানমারের সামরিক বাহিনী আইনী ব্যবস্থায় সঙ্কট তৈরি করেছে। দেশ শাসন করার তাদের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে থাকা প্রায় সব ধরনের ভিন্নমতকে অপরাধী করেছে।’ জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, অভ্যুত্থানের পর থেকে প্রায় ২৭ হাজার ৪০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং গ্রেপ্তারকৃতরা সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রয়েছে বলে  ধারণা করা হচ্ছে। </p> <p>প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ যাদের আটক করেছে তাদের মধ্যে এমন শিশুও রয়েছে, তাদের বাবা-মাকে খুঁজে না পাওয়ায় ‘রাজনৈতিক বিরোধিতার শাস্তি হিসেবে’ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।</p> <p>জাতিসংঘের অধিকার অফিসের মুখপাত্র লিজ থ্রোসেল একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, অভ্যুত্থানের পর থেকে ৮৮ জন শিশুসহ অন্তত এক হাজার ৮৫৩ জন জান্তা হেফাজতে মারা গেছে। তিনি বলেন, ‘এই ব্যক্তিদের মধ্যে অনেককে অপমানজনকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, আটকে রাখা বা পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা পেতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে, ফলে অনেকে মৃত্যুও হয়েছে।’ </p> <p>রোডেহেভার যোগ করেছেন,  ‘আমাদের করা সাক্ষাৎকারে বের হয়ে আসে,  আটক ব্যক্তিদের খাবার বা পানি ছাড়াই ছাদ থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া, শক্ত বা ধারালো জিনিসের ওপর হাঁটু গেড়ে বা হামাগুড়ি দিতে বাধ্য করা, এ ছাড়া আটক ব্যক্তিদের ভয় ও আতঙ্কের তৈরি করার জন্য করার জন্য সাপ বা পোকামাকড় বা অন্যান্য বন্য প্রাণীর সামনে তাদের রাখা হয়।’ অন্যরা লোহার খুঁটি, বাঁশের লাঠি, লাঠিসোটা, রাইফেলের বাট, চামড়ার ফালা, বৈদ্যুতিক তার ও মোটরসাইকেলের চেইন দিয়ে মারধরের বর্ণনাও দিয়েছেন। </p> <p>জাতিসংঘের প্রতিবেদনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। অভ্যুত্থান-পরবর্তী ধরপাকড় পর্যবেক্ষণকারী একটি মানবাধিকার গোষ্ঠী অ্যাসিসট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস-এর সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, অভ্যুত্থানের পর থেকে অন্তত পাঁচ হাজার ৬৬৫ জন বেসামরিক মৃত্যুর বিষয়টি যাচাই করেছে। এ ছাড়া আরো ২ হাজার ৫০০ মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তুর্কি মিয়ানমারে অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানোর সুপারিশ করেছে। </p> <p>সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর ২০১৭ সালের নৃশংস দমন-পীড়নের জন্য দেশটি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার জন্য তদন্তাধীন।</p> <p>সূত্র : আলজাজিরা</p>