<p>শুরুতে হুসাম সালাহ আবু আজওয়া তার মেয়েকে খেলতে দিতে বাধা দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষে তিনি হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন, যাতে তার মেয়ে গাজা শহরের বাড়ির কাছে তার গোলাপি স্কেটে ঘুরে বেড়াতে পারে। তবে দুই মিনিটের মধ্যে তিনি একটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। সেই বিস্ফোরণের আঘাতে তার ১০ বছর বয়সী মেয়ে তালা আবু আজওয়াকে হারিয়ে ফেলেন চিরতরে।  </p> <p>গাজায় চলমান যুদ্ধে সর্বশেষ শিশু নিহত হওয়ার ঘটনা এটি। ইতিমধ্যে ইসরায়েলিরা হাজার হাজার লোককে হত্যা করেছে। নিহতদের মধ্যে বেশির ভাগ শিশু ও নারী। </p> <p>গত মঙ্গলবার হামলার পর বাবা হুসাম বলেন, ‘তালা আমাকে অনুরোধ করে বলেছিল, বাবা দয়া করে আমাকে বাইরে যেতে দিন। আমি কষ্ট পেয়েছিলাম, কারণ সে বাইরে বাকি শিশুদের সঙ্গে খেলতে চেয়েছিল। তাই তাকে অনুমতি দিয়েছিলাম।’</p> <p>এরপর বিস্ফোরণের শব্দ শুনে বাইরে দৌড়ে গিয়ে হুসাম দেখেন হামলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের মধ্যে মেয়ে পড়ে আছে। তিনি বলেন, ‘আমি তার পায়ে থাকা গোলাপি রোলার স্কেট জুতা দেখে চিনতে পারি, শুধু  এটাই দেখা যাচ্ছিল।’</p> <p>এই হামলার বিশদ বিবরণ অস্পষ্ট, তবে ইসরায়েলি বিমান হামলা চালিয়েছিল একটি ভবনে। তালার একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, সাদা কাপড়ে ঢাকা শিশুটির দেহ কিন্তু কাপড়ের নিচ থেকে বের হয়ে এসেছে সাদা ও গোলাপি চাকাসহ রোলার স্কেট জুতা জোড়া। </p> <p><strong>‘আমরা যুদ্ধ চাই না, মা’</strong></p> <p>তালা আবু আজওয়া সব সময় বাড়ির ভেতরে থাকতে পছন্দ করত না বলে হুসাম বলেছিলেন। তিনি বলেন, ‘তালা সব সময় হাসি-খুশি থাকত এবং বাড়ি থেকে বের হতে পছন্দ করত।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘আজওয়ার অনেক স্বপ্ন ছিল। সে সব সময় আমার কাছে অনেক কিছু জানতে চাইত এবং আমি উত্তরও দিতাম। সে আমাকে বলেছিল, আমি একজোড়া স্কেট জুতা চাই। আমি আমার মেয়ের জন্য নিয়ে এসেছিলাম।’</p> <p>এখন তালা আবু আজওয়া চলে গেছে। তার বাবা-মা এবং ভাইরা তাদের দুর্ভাগ্য দেখে আশ্চর্য হয়ে গেছে। তালার মা বলেন, তালা বলত, ‘কেন আমরা বিশ্বের অন্যান্য শিশুদের মতো বাঁচতে পারি না? আমরা যুদ্ধ চাই না, মা।’</p> <p>যুদ্ধকালীন সময়ে স্থানচ্যুতি এবং স্কুল ধ্বংসের কারণে গাজা উপত্যকাজুড়ে শিশুদের বিনোদনের কোনো সুযোগ নেই। ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা দ্বারা পরিচালিত ৭০ শতাংশেরও বেশি স্কুল আছে। তবে সেগুলো ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে এজেন্সি প্রধান ফিলিপ লাজারিনি এই সপ্তাহে এক্স-এ জানিয়েছেন।</p> <p>এদিকে জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, মধ্য ও দক্ষিণ গাজার এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষ আগস্টে কোনো খাদ্য রেশন পায়নি। তিনি আরো বলেন,‘গাজার মানবিক পরিস্থিতি বিপর্যয়কর রয়ে গেছে।’</p> <p>গাজায় হামলা সত্ত্বেও পোলিও টিকা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল দ্বিতীয় ধাপে টিকা খাওয়ানো হয়। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় শিশুদের পোলিও টিকা দেওয়ার জন্য কিছু সময়ের জন্য ‘মানবিক কারণে যুদ্ধ বন্ধ’ রাখতে সম্মত হলেও হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল।</p> <p>গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ছিটমহলের দক্ষিণাঞ্চলে জরুরি পোলিও টিকাদান অভিযানের সঙ্গে যুক্ত মেডিক্যাল টিমের প্রবেশের সমন্বয় করতে অস্বীকার জানিয়েছে। </p> <p>সূত্র : আল-অ্যারাবিয়া</p>