<p>ইসরায়েল অধিকৃত গোলান মালভূমিতে ফুটবল খেলার মাঠে রকেট হামলায় শিশুসহ ১২ জন নিহতের জেরে লেবাননে হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের বিমানবাহিনী এই হামলার খবর নিশ্চিত করেছে।</p> <p>মাজদাল শামসের দ্রুজ শহরে শনিবারের হামলার জন্য ইসরায়েল লেবাননের সামরিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে দায়ী করে আসছে। তবে হিজবুল্লাহ স্পষ্টভাবে ওই হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। রবিবার সকালে ইসরায়েলের বাহিনী আইডিএফ জানায়, তারা ‘লেবানিজ ভূখণ্ডের ভেতরে’ হিজবুল্লাহর সাতটি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেছে কি না তা স্পষ্ট নয়।</p> <p>এদিকে ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে ক্রমেই ঘনীভূত হতে থাকা এই উত্তেজনা দুই পক্ষের মধ্যে পূর্ণ মাত্রায় যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দুই পক্ষ কিছু দিন পর পর একে অপরের ওপর হামলা চালিয়ে আসছে। গোলান মালভূমির ওই ফুটবল মাঠে শনিবারের হামলাটি ছিল যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তে এ যাবতকালের সবচেয়ে মারাত্মক প্রাণহানির ঘটনা।</p> <p>ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অবিলম্বে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছেন, এই গোষ্ঠীকে এর ‘চরম মূল্য দিতে হবে’। এর কয়েক ঘণ্টা পরই ইসরায়েলি বিমানবাহিনী জানায়, তারা হিজবুল্লাহর বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুসহ ‘অস্ত্রের ভাণ্ডার ও বিভিন্ন অবকাঠামোতে রাতভর হামলা চালিয়েছে।’</p> <p>জাতিসংঘের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বড় ধরণের সংঘাতের ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে সব পক্ষের উচিত ছিল ‘সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণ করা’। কেননা এই সংঘাত বাধলে পুরো অঞ্চল অকল্পনীয় বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।</p> <p>হিজবুল্লাহর মুখপাত্র মোহাম্মাদ আফিফ হামলার দায় অস্বীকার করেছেন এবং এই গোষ্ঠীটি জাতিসংঘকে বলেছে, ওই বিস্ফোরণটি একটি ইসরায়েলি ইন্টারসেপ্টর রকেটের কারণে হয়েছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিহতদের সবার বয়স ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে, যদিও ইসরায়েলি গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, কেউ কেউ এর চেয়েও কম বয়সী ছিল।</p> <p>যাচাইকৃত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, একটি ফুটবল মাঠে লোকজন ভিড় করে আছে এবং স্ট্রেচারগুলোতে হতাহতদের তুলে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অপেক্ষমাণ অ্যাম্বুল্যান্সের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।</p> <p>গোলান মালভূমির চারটি গ্রামের মধ্যে মাজদাল শামস একটি, যেখানে আরবি-ভাষী দ্রুজ ধর্মীয় ও জাতিগত গোষ্ঠীর প্রায় ২৫ হাজার সদস্য বসবাস করে।</p> <p>এই হামলার খবর প্রকাশের আগে হিজবুল্লাহ আরো চারটি হামলার দায় স্বীকার করেছিল। এর মধ্যে একটি হামলা হয়েছিল ইসরায়েল ও লেবাননের সীমান্তে অবস্থিত মাউন্ট হারমনের ঢালের কাছাকাছি একটি সামরিক ঘাঁটিতে। এটি ফুটবল পিচ থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার বা দুই মাইল দূরে ছিল।</p> <p>আইডিএফ মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি, যিনি হামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন, তিনি হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলেন, ‘তারা মিথ্যা কথা বলছে ও ঘটনার দায় অস্বীকার করছে।’ তিনি আরো জানান, যে রকেটটি দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে সেটি ইরানের তৈরি ফালাক-১ মডেলের রকেট, যেটা শুধু হিজবুল্লাহর কাছেই আছে।</p> <p>ইসরায়েল প্রতিশোধ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে জানিয়ে হ্যাগারি বলেছিলেন, ‘আমাদের গোয়েন্দা তথ্যে কোনো ভুল নেই। নিরীহ শিশুদের হত্যার জন্য হিজবুল্লাহ দায়ী।’ </p> <p>ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ নিয়মিত একে অপরের উপর হামলা চালিয়ে আসছে এবং দুই পক্ষেই হতাহতের ঘটনা ঘটছে। তবে গত বছরের অক্টোবর থেকে দুই পক্ষই এমন পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকছে যা কি না দক্ষিণ লেবাননের সীমান্ত এলাকায় যুদ্ধ বাধিয়ে দিতে পারে।</p> <p>এদিকে হামলার খবর জানার পর যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাড়াতাড়ি দেশে ফিরছেন। ইসরায়েলের দ্রুজ সম্প্রদায়ের নেতা শেখ মোয়াফাক তারিফ এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই ভয়াবহ গণহত্যা সব সীমা অতিক্রম করেছে। তিনি বলেন, ‘একটি সঠিক রাষ্ট্র তার নাগরিক ও বাসিন্দাদের ক্রমাগত ক্ষতির মুখে ঠেলে দিতে পারে না। ৯ মাস ধরে উত্তরাঞ্চলীয় সম্প্রদায়গুলোয় এটাই চলমান বাস্তবতা।’</p> <p>এ ছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ ইসরায়েলের চ্যানেল টুয়েলভ নিউজকে বলেছেন, ‘আমরা সর্বাত্মক যুদ্ধের সম্মুখীন হচ্ছি।’</p> <p>ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগ এই ঘটনাকে ‘ভয়ানক ও মর্মান্তিক বিপর্যয়’ বলে অভিহিত করে বলেছেন, ‘ইসরায়েল দৃঢ়ভাবে তার নাগরিক ও তার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে।’</p> <p>লেবাননের সরকারও এর জবাবে এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা সব বেসামরিক নাগরিকের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও আগ্রাসনের নিন্দা করে এবং সব পক্ষকে তারা অবিলম্বে লড়াই বন্ধ করার আহ্বান জানায়। বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, ‘বেসামরিক নাগরিকদের টার্গেট করা আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন ও মানবতার নীতির পরিপন্থী।’</p> <p>হামলার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ। জাতিসংঘের দূত টর ওয়েনেসল্যান্ড এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। এক্সে পোস্ট করেন, ‘মধ্যপ্রাচ্য সহিংসতার দ্বারপ্রান্তে; বিশ্ব ও এই অঞ্চল আরেকটি প্রকাশ্য সংঘাত সহ্য করতে পারবে না।’</p> <p><strong>দ্রুজ সম্প্রদায়</strong><br /> দ্রুজ সম্প্রদায়ের অধিকাংশ মানুষ উত্তর ইসরায়েল, লেবানন, জর্দান ও সিরিয়ায় বাস করে। ইসরায়েলে তাদের সম্পূর্ণ নাগরিকত্বের অধিকার রয়েছে এবং ইসরায়েলের জনসংখ্যার প্রায় ১.৫ শতাংশ মানুষ দ্রুজ সম্প্রদায়ের। সিরিয়া থেকে গোলান মালভূমিকে দখল করার সময় ১৯৮১ সালে সেখানকার দ্রুজ সম্প্রদায়ের মানুষকে ইসরায়েলি নাগরিকত্ব গ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু সবাই তা গ্রহণ করেনি। গোলান মালভূমির দ্রুজ সম্প্রদায়ের মানুষ ইসরায়েলে পড়ালেখা ও কাজ করতে পারে, তবে ভোট দিতে পারে শুধু নাগরিকত্বধারীরা। সেনাবাহিনীতে চাকরি করার জন্য পুরুষ ইসরায়েলি দ্রুজ প্রয়োজন। তারা আইডিএফের সবচেয়ে বড় অইহুদি গোষ্ঠী। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ইসরায়েলের গোলান মালভূমি দখল করাকে স্বীকৃতি দেয় না।</p> <p>সূত্র : বিবিসি</p>