<p style="text-align: justify;">রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও কিম জং উন একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। তাদের দুই দেশের বিরুদ্ধে যেকোনো আগ্রাসনে পরস্পরকে সহায়তার অঙ্গীকার করেছেন তারা। উত্তর কোরিয়া সফরে এসে এই অঙ্গীকার করেন পুতিন। ২০০০ সালের পর প্রথমবারের মতো পিয়ংইয়ং সফরে আসেন পুতিন।</p> <p style="text-align: justify;">এদিকে কিম বলেছেন, এটি তাদের সম্পর্ককে সহযোগিতার একটি নতুন মাত্রা দিয়েছে। পুতিন ও কিমের চুক্তি পশ্চিমাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো, দুই নেতাই অনুভব করেছেন যে তাদের পরস্পরকে প্রয়োজন। পুতিনের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য গোলাবারুদ দরকার আর নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা উত্তর কোরিয়ার দরকার অর্থ।</p> <p style="text-align: justify;">রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া<span lang="DA" style="font-size:12.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">―</span></span>দুই দেশের এই নতুন করে যে বন্ধনের সূত্রপাত তা কৌশলগত কারণেও খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ চীনের জন্য যাতে উসকানি না হয় সে আশঙ্কা নিয়ে সতর্ক থাকতে হয়েছে দেশ দুটিকে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় থাকা উভয় দেশের জন্য বাণিজ্য ও প্রভাবের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো বেইজিং।</p> <p style="text-align: justify;">যদিও পুতিন প্রগাঢ় বন্ধুত্বের জন্য কিমের প্রশংসা করেছেন; কিন্তু তিনি অবশ্যই জানেন তারও একটি সীমা আছে। আর সেই সীমাটি হলো চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।</p> <p style="text-align: justify;">এরই মধ্যে কিছু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, শি তার দুই সহযোগী দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সখ্যে খুব একটা সন্তুষ্ট নন। জানা যায়, গত মে মাসে প্রেসিডেন্ট শির সঙ্গে বৈঠকের পর পুতিনকে পিয়ংইয়ং সফরে যেতে নিষেধ করেছিল বেইজিং।</p> <p style="text-align: justify;">মস্কোকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়ে এবং ইউক্রেন যুদ্ধে সহায়তা হয় এমন কিছু বিক্রি না করতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের চাপের মধ্যে আছেন শি। তিনি এসব সতর্কতা পুরোপুরি উপেক্ষাও করতে পারেন না। এটা শুধু এ জন্য নয় যে বিশ্বকে চীনা বাজারের প্রয়োজন। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রাখার জন্য বেইজিংয়ের বিদেশি পর্যটক ও বিনিয়োগও দরকার।</p> <p style="text-align: justify;">দেশটি এখন ইউরোপের একাংশ, থাইল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার জন্য ভিসামুক্ত ভ্রমণ সুবিধা দিচ্ছে। দেশটির পাণ্ডা আবারও বিদেশের চিড়িয়াখানায় ছাড়া হচ্ছে।</p> <p style="text-align: justify;">বৈশ্বিক পর্যায়ে আরো বড় ভূমিকা রাখতে চান শি। যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করতে চান তিনি। তা ছাড়া নতুন করে পশ্চিমা চাপ আর চাইবেন না শি। একই সঙ্গে তিনি মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখবেন।</p> <p style="text-align: justify;">এদিকে ইউক্রেনে যুদ্ধের নিন্দা করেননি শি। কিন্তু রাশিয়াকে উল্লেখযোগ্য সামরিক সহায়তাও দিতে পারেননি তিনি।</p> <p style="text-align: justify;">সম্ভবত পারমাণবিক অস্ত্র এগিয়ে নিতে কিমের চেষ্টাকে একটি রাজনৈতিক সুরক্ষা দিচ্ছে চীন। কারণ বারবার জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব ঠেকিয়ে দিচ্ছে দেশটি। তবে শি সাহসী কিম জং উনের ভক্ত নন।</p> <p style="text-align: justify;">বেইজিংয়ে অননুমোদন হয়তো উত্তর কোরিয়ায় রুশ সামরিক প্রযুক্তির বিক্রি বাড়িয়ে দিতে পারে। সেটাও যুক্তরাষ্ট্রের বড় উদ্বেগের কারণ হতে পারে।</p> <p style="text-align: justify;">এনকে নিউজের পরিচালক আন্দ্রেই ল্যাংকভ বলেছেন, ‘আমি মনে করি না, রাশিয়া উত্তর কোরিয়াকে বিশাল পরিমাণে কোনো সামরিক প্রযুক্তি দেবে।’ সেটি করলে রাশিয়ার জন্য ভবিষ্যতে সমস্যা দেখা দিতে পারে।</p> <p style="text-align: justify;">যদিও উত্তর কোরিয়ার গোলাবারুদ পুতিনের যুদ্ধচেষ্টাকে সহায়তা করবে, তবে এর জন্য ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির বিনিময় তার জন্য ভালো চুক্তি হবে না।</p> <p style="text-align: justify;">এ ছাড়া পুতিন হয়তো উপলব্ধি করবেন যে চীনকে বিরক্ত করার জন্য এটা যথেষ্ট কিছু হবে না। দেশটি রাশিয়া থেকে তেল ও গ্যাস কিনছে, যখন বিশ্বে এখন তারা অনেকটাই বিচ্ছিন্ন।</p> <p style="text-align: justify;">পিয়ংইয়ংয়ের চীনকে দরকার আরো বেশি। এটি একমাত্র দেশ যেখানে কিম সফর করেছেন। উত্তর কোরিয়ার এক-চতুর্থাংশ থেকে অর্ধেক পর্যন্ত তেল আসে রাশিয়া থেকে; কিন্তু ৮০ ভাগ ব্যবসাই চীনের সঙ্গে। পুতিন ও কিম নিজেদের সহযোগী হিসেবে দেখালেও চীনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।</p> <p style="text-align: justify;">রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা সত্ত্বেও এটি একটি যুদ্ধকালীন অংশীদারত্ব। এটি আরো অগ্রসর হতে পারে। কিন্তু এখন সেটা অনেকটাই লেনদেনভিত্তিক।</p> <p style="text-align: justify;">দুই দেশের মধ্যে সমন্বিত কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি সত্ত্বেও পিয়ংইয়ং গোলাবারুদ সরবরাহ অব্যাহত রাখবে<span lang="DA" style="font-size:12.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">―</span></span>এমন নিশ্চয়তা নেই।</p> <p style="text-align: justify;">বিশ্লেষকরাও মনে করেন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া ভিন্ন ধরনের অপারেটিং সিস্টেমে কাজ করে। উত্তর কোরিয়ার মান নিয়েও প্রশ্ন আছে।</p> <p style="text-align: justify;">আরো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো দেশ দুটি কয়েক দশক ধরে তাদের সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দেয়নি।</p> <p style="text-align: justify;">যখন পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো ছিল তখন পুতিন দুইবার পিয়ংইয়ংয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন। তা ছাড়া উত্তর কোরিয়া যাতে পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করে সে জন্য যুক্তরাষ্ট্র, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সঙ্গে সুর মিলিয়েছিলেন তিনি।</p> <p style="text-align: justify;">২০১৮ সালের কূটনৈতিকভাবে প্রবল চাপের মুখোমুখি হয়েছিলেন তখন একবার ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন কিম। তারপর কিমের চওড়া হাসি, আলিঙ্গন ও হাত মেলানো ছিল দক্ষিণ কোরিয়া প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। তারা তিনবার পরস্পরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। এ ছাড়া কথিত ‘প্রেমপত্র’ বিনিময় করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে। পরে তাদের মধ্যে বৈঠকও হয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">অন্যদিকে শি ছিলেন তার জন্য প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক নেতা। যার সঙ্গে তিনি বৈঠক করেছিলেন। তারা তিনবার বৈঠক করেছেন। সুতরাং বন্ধু তালিকায় পুতিন নতুন।</p> <p style="text-align: justify;">উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদপত্রে রাশিয়ার নেতা যে কলাম লিখেছেন সেখানে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে নিজেদের স্বার্থের কথা বলেছেন। তবে সেখানে শির বিষয়টি আসেনি। যাকে তিনি ঘনিষ্ঠ ভাই হিসেবে সম্বোধন করেছিলেন। এমনকি তার পরিবার চীনা ভাষা শিখছে বলেও বলেছিলেন।</p> <p style="text-align: justify;">নিশ্চয়ই প্রেসিডেন্ট শিকে ঘণ্টা ধরে অপেক্ষমাণ রাখার সাহস দেখাবেন না পুতিন। যেমনটি পিয়ংইয়ংয়ে হয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">তারা দুজনই চীনের সাহায্যপ্রার্থী ও চীনকে ছাড়া তাদের শাসন সংকটে পড়বে। ফলে উভয় দেশের দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় বিষয়ে চীনের ভূমিকা থাকবেই।</p>