<p>ইসরায়েল রবিবার খান ইউনিস শহরসহ গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চল থেকে তার সব সেনা প্রত্যাহার করেছে। কয়েক মাস ধরে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে তাদের ভয়াবহ লড়াইয়ের পর এলাকাটি ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে অবরুদ্ধ অঞ্চলের বাকি অংশে একটি ‘বিশেষ বাহিনী’ কাজ চালিয়ে যাবে বলে সামরিক বাহিনী জানিয়েছে। সেনা ও ইসরায়েলি গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে এএফপি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। </p> <p>সেনাবাহিনী এএফপিকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘৯৮তম কমান্ডো ডিভিশন খান ইউনিসে তাদের মিশন শেষ করেছে। তারা সুস্থ হতে এবং ভবিষ্যতের অভিযানের জন্য প্রস্তুত হতে গাজা উপত্যকা ত্যাগ করেছে। ১৬২তম ডিভিশন এবং নাহাল ব্রিগেডের নেতৃত্বে একটি বিশেষ বাহিনী গাজা উপত্যকায় কাজ করে চলেছে এবং আইডিএফের (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) কর্মের স্বাধীনতা ও সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দাভিত্তিক অভিযান পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবে।’</p> <p>এদিকে আলজাজিরার সাংবাদিক ইমরান খান বলেছেন, সেনা প্রত্যাহারের ইসরায়েলের দাবি একটি ‘নতুন কৌশল’ হতে পারে। পূর্ব জেরুজালেম থেকে প্রতিবেদন করার সময় তিনি বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছে, এই নতুন কৌশলটি কার্যকর করার জন্য তাদের সেই সংখ্যক সেনার প্রয়োজন নেই। কিন্তু আপনি যদি ইসরায়েলি সামরিক বিশ্লেষকদের কথা শোনেন, তাহলে আপনি বিষয়গুলোকে একটু ভিন্নভাবে দেখতে পাবেন। আমরা যা শুনছি তা হলো রাফাহতে স্থল আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হতে একটি বাহিনীকে পুনরায় মোতায়েন করা হতে পারে।’</p> <p>আলজাজিরা বলেছে, ইসরায়েলি ঘোষণাটি এমন সময় এলো, যখন গাজার বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ ছয় মাস অতিক্রম করল। যে যুদ্ধ একটি মারাত্মক ইতিহাস তৈরি করেছে, যাকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত ‘গণহত্যার বিশ্বাসযোগ্য ঘটনা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।</p> <p>এ ছাড়া ইসরায়েলি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ওমর দোস্তরি বলেছেন, সেনা প্রত্যাহার সম্পূর্ণরূপে কৌশলগত এবং এর মানে এই নয় যে যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে। তাঁর মতে, মার্কিন মিত্রদের প্রবল চাপের মধ্যে গাজার দক্ষিণাঞ্চল থেকে স্থল সেনা প্রত্যাহার হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তির আলোচনায় ইসরায়েলকে সহায়তা করবে। তবে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, মিসরীয় সীমান্তের সুদূর দক্ষিণের শহর রাফাহ থেকে বাস্তুচ্যুত লোকদের সরিয়ে নেওয়ার পর কমান্ডোরা বেঁচে থাকা হামাস যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ফিরে আসবেন।</p> <p>জেরুজালেম ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড সিকিউরিটির এ বিশেষজ্ঞ এএফপিকে বলেছেন, ‘আমি ভবিষ্যদ্বাণী করছি, বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার পর রাফাহ থেকে বাকি হামাস ব্রিগেডদের ধ্বংস করার জন্য একটি (স্থল) পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ তাঁর অনুমান, হামাসের একটি ব্রিগেড রাফাহতে রয়ে গেছে এবং একটি ব্যাটালিয়ন ও তাঁর অর্ধেক যোদ্ধা গাজা উপত্যকার মধ্যাঞ্চল, ‘প্রধানত নুসিরাতে’ রয়েছে।</p> <p>দোস্তরি আরো ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, একবার গাজা যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে, ইসরায়েলি স্থল সেনারা লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করবে।</p> <p><strong>হামাসের পর হিজবুল্লাহ</strong><br /> এ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘ইসরায়েলের সামরিক যুক্তি উত্তরে অভিযান শুরুর আগে হামাসের সামরিক শক্তিকে নির্মূল করার নির্দেশ দেয়।’</p> <p>একজন সেনা কর্মকর্তা বামপন্থী দৈনিক হারেৎজকে বলেছেন, খান ইউনিসে ‘আমাদের থাকার দরকার নেই। ৯৮তম ডিভিশন হামাসের খান ইউনিস ব্রিগেডকে ভেঙে দিয়েছে এবং এর হাজার হাজার সদস্যকে হত্যা করেছে। আমরা সেখানে যা যা করতে পারি তা করেছি’।</p> <p>হারেৎজ ওই কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলেছে, খান ইউনিস থেকে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা এখন রাফাহ থেকে তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে সক্ষম হতে পারে। তবে সেনাবাহিনী ‘কর্ম প্রক্রিয়ার প্রয়োজন অনুযায়ী সেখানে কাজ চালিয়ে যাবে’ বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন।</p> <p>এদিকে দক্ষিণ থেকে প্রত্যাহার করা সত্ত্বেও টাইমস অব ইসরায়েল বলেছে, সেনাবাহিনীর নাহাল ব্রিগেড কেন্দ্রীয় ‘নেটজারিম করিডর’ ধরে রাখতে থাকবে, যা কার্যকরভাবে গাজা উপত্যকাকে দুই ভাগ করে।</p> <p>এক সময়কার ঘনবসতিপূর্ণ খান ইউনিসে কয়েক মাস ধরে ভয়ানক লড়াইয় হয়েছে, নিরলস বোমাবর্ষণ শহরের অনেক অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। আন্তর্জাতিক ক্ষোভ সত্ত্বেও ইসরায়েলি সরকার রাফাহ শহর ও এর আশপাশে একটি স্থল আক্রমণ চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যেখানে গাজার ১৫ লাখেরও বেশি বাসিন্দা আশ্রয় চেয়েছে।</p> <p>৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর গাজায় যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। ইসরায়েলের সরকারি পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে এএফপির তথ্য অনুযায়ী, সেই হামলায় এক হাজার ১৬০ জন ইসরায়েলি ও বিদেশি নিহত হয়েছিল, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক। অন্যদিকে গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক অভিযানে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৩ হাজার ১৭৫ জন নিহত হয়েছে।</p>