<p>গাজায় নির্বিচার হামলার জেরে প্রচণ্ড আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়েছে ইসরায়েল। দেশটিতে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা এবং গাজায় সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য জবাবদিহি করার দাবি জানিয়ে গতকাল শুক্রবার প্রস্তাব পাস করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল। এর  আগের দিন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনালাপে দেশটির প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ পর্যন্ত কঠোরতম হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ইসরায়েল দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বৃদ্ধি করা ও বেসামরিক প্রাণহানি এড়াতে দৃশ্যমান, সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ না নিলে হামাসবিরোধী লড়াইয়ের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান বদলাতে পারে।</p> <p>কঠিন চাপে পড়ে নেতানিয়াহু এরই মধ্যে ত্রাণের জন্য ক্রসিং খুলে দেওয়াসহ যুদ্ধের কিছু নীতিগত পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন।<br /> জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে ইসরায়েলকে যুদ্ধাপরাধের জন্য জবাবদিহি করা ও অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় বাংলাদেশসহ ২৮টি দেশ, ভোটদানে বিরত ছিল ১৩টি দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিসহ ছয়টি দেশ এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। প্রস্তাবটি পাসের পর কয়েকটি দেশের প্রতিনিধি করতালি দিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেন। ইসরায়েল অবশ্য প্রস্তাবটিকে ‘বিকৃত বয়ান’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।</p> <p>আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক না হলেও জাতিসংঘের শীর্ষ মানবাধিকার সংস্থার এ ভোটের তাৎপর্য রয়েছে। ‘হ্যাঁ’ ভোট জয়যুক্ত হবে ধরে নেওয়া হলেও এর পক্ষে এত ভোট পড়া লক্ষণীয় ব্যাপার। গত বছরের ৭ অক্টোবরের হামলার পর ইউরোপ থেকে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের প্রতি জোরালো সমর্থন জানিয়ে আসছিল ইউরোপ। এ ভোট বলছে, সে সমর্থনে ভাটা পড়েছে।</p> <p>এটি ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়িয়ে দেবে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সাম্প্রতিক হামলায় আন্তর্জাতিক ত্রাণ সরবরাহ সংগঠন ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের সাত বিদেশি সদস্যের মৃত্যু দেশটিকে তোপের মুখে ফেলেছে। পর্যবেক্ষকদের ভাষ্য, সর্বশেষ এ হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় মিত্রসহ আন্তর্জাতিক মহল ইসরায়েলের গাজা অভিযানের বিষয়ে অসন্তুষ্টির চরমে পৌঁছেছে।<br /> <strong> <br /> নীতি পরিবর্তনের হুমকি বাইডেনের</strong></p> <p>মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গাজায় বেসামরিক নাগরিক ও ত্রাণকর্মীদের সুরক্ষায় দৃঢ়, সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ইসরায়েল বিষয়ে মার্কিন নীতি পরিবর্তনের হুমকি দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার এক ফোনালাপে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে তিনি এই হুমকি দেন।</p> <p>বাইডেনের সঙ্গে  ফোনালাপের কয়েক ঘণ্টা পরই গতকাল গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের জন্য দুটি পথ খোলার অনুমোদন দিয়েছে ইসরায়েল। গাজায় ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের ত্রাণকর্মীদের ওপর ইসরায়েলের প্রাণঘাতী হামলার পর বাইডেনের দল ডেমোক্র্যাট পার্টির সদস্যরা ইসরায়েলকে দেওয়া মার্কিন সহায়তায় শর্ত আরোপ করার জন্য ফের আহবান জানান। বাইডেন ও নেতানিয়াহু প্রায় আধঘণ্টা ধরে কথা বলেন। এ সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেন, ‘ত্রাণ সহায়তা ও বেসামরিক প্রাণহানি এড়ানোর মতো বিষয়ে ইসরায়েলের পদক্ষেপ পর্যালোচনার ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রের গাজা নীতি<br /> নির্ধারিত হবে।’ ইসরায়েলকে সব সময় সমর্থন দিয়ে আসা জো বাইডেন দেশটিতে দেওয়া মার্কিন সহায়তা আটকে রাখা অথবা অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ রাখার জন্য চাপের মুখে রয়েছেন। এই প্রথমবারের মতো তিনি ইসরায়েলকে দেওয়া সহায়তায় সম্ভাব্য শর্ত আরোপের হুমকি দিলেন। তাঁর এই হুমকি প্রায় ছয় মাস ধরে চলা গাজা যুদ্ধের গতি পরিবর্তন করে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।<br />  <br /> <strong>নতুন ক্রসিং খোলার ঘোষণা ইসরায়েলের</strong></p> <p>হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমবারের মতো ইসরায়েল ও উত্তর গাজার মধ্যে চলাচলের ইরেজ ক্রসিং অস্থায়ীভাবে আবারও খোলা হবে। গাজার অদূরে অবস্থিত ইসরায়েলের আশদোদ বন্দর হয়ে মানবিক সহায়তা পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া জর্দান থেকে আরো সাহায্য কেরেম শালোম ক্রসিং দিয়ে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। বাইডেন ফোনে হুমকি দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই সীমান্ত খুলে দেওয়ার ইসরায়েলি ঘোষণা আসে। তবে ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত দেয়নি ওয়াশিংটন। হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা বিবিসির এসংক্রান্ত প্রশ্নে ধোঁয়াশায় ঢাকা জবাব দিয়েছেন।</p> <p><strong>ইসরায়েলকে যুদ্ধ বন্ধের আহবান ট্রাম্পের</strong></p> <p>ইসরায়েলের কট্টর মিত্র সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও ‘মানুষ হত্যা বন্ধে’ ইসরায়েলের উচিত গাজা যুদ্ধের ইতি টানা। ইসরায়েল ‘গণযোগাযোগ যুদ্ধে হেরে যাচ্ছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল যা শুরু করেছে তা শেষ করতে হবে।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্প এর আগে ইসরায়েলকে ‘যথাযথভাবে সমর্থন না করায়’ বাইডেনের সমালোচনা করেছিলেন। তবে চলতি গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলকে সমর্থন করে আসায় বাইডেনের প্রতি আরব আমেরিকান জনগোষ্ঠী, নিজের দলের নেতাকর্মীদের একাংশসহ অনেক মার্কিন নাগরিক ক্ষুব্ধ। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় এ নিয়ে বাইডেন তথা ডেমোক্র্যাট শিবির উদ্বিগ্ন।</p> <p>সূত্র : এএফপি, আলজাজিরা, রয়টার্স, বিবিসি    </p>