<p>বিদ্রোহী আরাকান আর্মির অব্যাহত হামলার মুখে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তার বিধি-নিষেধ বেড়েছে। স্থল ও জলপথে রাখাইন রাজ্য ছেড়ে বাইরে যাওয়ার ওপর আগামী ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। জান্তা নিয়ন্ত্রিত উপকূলীয় টাউনশিপগুলোর বাসিন্দাদের উপকূলের কাছাকাছি জড়ো হওয়ার ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে চরম বিরূপ প্রভাব পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকা ও স্বাস্থ্যসেবায়।</p> <p>কিয়াউকপিউ ও এর আশপাশের গ্রামগুলোতেও এ ধরনের বিধি-নিষেধ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে গ্রামের জেলেরা মাছ শিকারে যেতে পারছেন না।<br /> রাখাইন রাজ্যের সঙ্গে অন্য রাজ্যগুলোর যোগাযোগ বন্ধ থাকায় সেখানে খাদ্য ও নিত্যপণ্যের সংকটের খবর পাওয়া যাচ্ছে। আরাকান আর্মিকে ঠেকানোর অংশ হিসেবে জান্তা যুদ্ধবিমান থেকে হামলা করছে। আর এতে সাধারণ জনগণও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে রাখাইনের রাজধানী সিত্তুয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছে আরাকান আর্মি। রেডিও ফ্রি এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাখাইনে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ দুই মাস বাড়ানো হয়েছে। এতে জনগণের স্বাস্থ্য ও জীবিকায় বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে।</p> <p>কিয়াউকপিউ টাউনশিপে গত ১৯ ডিসেম্বর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। সেখানে সম্প্রতি আরাকান আর্মি ও জান্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। আরাকান আর্মি গত ৮ ও ২১ জানুয়ারি কিয়াউকপিউতে জান্তার নৌঘাঁটিতে হামলা চালায়। কিয়াউকপিউ উপকূলে চীনা অর্থায়নে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠছে। সংঘাতের কারণে সেখানে বন্দর ও রেলসংযোগ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। কিয়াউকপিউর বাসিন্দাদের অন্যত্র যেতে অন্তত পাঁচ দিন আগে অনুমতি নিতে হচ্ছে। এদিকে এই সপ্তাহে মিয়ানমারের অন্য অঞ্চল থেকে বিমানযোগে রাখাইনে আসা প্রায় ৫০০ যাত্রীকে আটক করেছে জান্তাবাহিনী। সন্দেহজনক গতিবিধি ও আরাকান আর্মির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তাদের আটক করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।</p> <p><strong>অনুপ্রবেশের চেষ্টা নস্যাৎ</strong></p> <p>এদিকে মিয়ানমারের রাখাইন ছেড়ে নাফ নদ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টাকালে রোহিঙ্গাদের একটি নৌকাকে ফিরিয়ে দিয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপসংলগ্ন নাফ নদের মাঝপথে নৌকাটিকে বাধা দেয় বিজিবি। তবে এ বিষয়ে টেকনাফের ২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।</p> <p>শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, ‘নাফ নদে ইঞ্জিনচালিত নৌকায়  টহলরত বিজিবির টহলদল নাফ নদের মাঝখানে নৌকাটিকে বাধা দেয়। কিছুক্ষণ পর নৌকাটি মিয়ানমারের দিকে ফিরে যায়। বেড়িবাঁধে দাঁড়িয়ে নৌকায় কিছু লোকজন দেখেছি। সম্ভবত তারা রোহিঙ্গা।’</p> <p>রাখাইন রাজ্যে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে শনিবার বিকেলে পাঁচজন রোহিঙ্গা নিয়ে একটি নৌকা শাহপরীর দ্বীপ জেটিতে ভেড়ে। নৌকাটিতে একজন গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গা নারী ছিলেন। তিনি রাখাইনে সশস্ত্র বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে চলা সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন। পরে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করেন। রোহিঙ্গাদের ওই নৌকাটিও প্রতিহত করে বিজিবি। নাফ নদে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে কয়েক দফায় রোহিঙ্গারা এ দেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। গতকালও টেকনাফ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইনে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। এ নিয়ে পাঁচ দিন সীমান্তে মর্টার শেল ও গোলাগুলি বন্ধ রয়েছে। এতে সীমান্তবর্তী এলাকার জনজীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।<br />  </p>