<p>২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্ক এবং সিরিয়ায় আঘাত হানা বিধ্বংসী এবং শক্তিশালী ভূমিকম্পের এক বছর পেরিয়ে গেল আজ। শক্তিশালী এই ভূমিকম্পে দুই দেশে নিহত হয়েছে ৬০ হাজারের বেশি মানুষ। এই অঞ্চলে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পটি ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালিয়েছিল সেদিন। কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছিল এবং রাস্তা-ঘাট, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যাওয়া ছাড়াও লক্ষাধিক জীবন উল্টে গেছে এই ভূমিকম্পে।</p> <p>আজ এক বছর পার হলেও সিরিয়ানদের দুর্দশা রয়েই গেছে, পরিবর্তন হয়নি কিছুই। হাজার হাজার মানুষ তাদের আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িতে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে। দেশের ভয়াবহ অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, সিরিয়ানরা আর্থিকভাবে পুনরুদ্ধার এবং পুনর্নির্মাণ করতে পারছে না। ভূমিকম্প যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার সঙ্কটকে আরো জটিল করে তুলেছে। ২০১১ সালে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল সিরিয়ায়। সেই যুদ্ধে ৫ লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল। সিরিয়ার অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ায় মৌলিক পণ্যের দাম আকাশচুম্বী। মুদ্রারও অবমূল্যায়ন হচ্ছে, মুদ্রাস্ফীতি আছে এবং মানুষ খুব কমই খাবার টেবিলে খাবার নিয়ে বসতে পারে। এর ওপর শক্তিশালী ভূমিকম্পের ধাক্কা। </p> <p>সেই কালো দিনের স্মৃতি এখনও সব সিরিয়ানদের মধ্যে বেঁচে আছে। আজও সিরিয়াবাসী ভূমিকম্পের ভয়ে থাকে। আতঙ্কে অনেকে বোতলে পানি ভরে পর্যবেক্ষণ করে, যদি কাঁপতে থাকে বুঝতে হবে ভূমিকম্প শুরু হয়েছে। ভূমিকম্পে বিশাল অংশের অবকাঠামো ধ্বংস গেছে এবং ইতিমধ্যেই ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতিতে থাকা দেশটিকে বীভৎস চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ফেলে দিয়েছে। ফলে অনেক পরিবার ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। </p> <p>প্রায় ১৬ মিলিয়ন মানুষের মানবিক সাহায্যের প্রয়োজন। সিরিয়ায় ২০২৩ সালের ভূমিকম্পে আনুমানিক ৩.৭ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে, অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আরো ১.৫ বিলিয়ন ডলার। ৫০ শতাংশ হাসপাতালগুলো সঠিকভাবে কাজ করছে না বা বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া দেশের ৭০ শতাংশ পানি সরবরাহ ব্যবস্থা কাজ করছে না। দেশটির কৃষি ব্যবস্থাও ক্ষতির মুখে পড়েছে। ভারী যন্ত্রপাতির অভাব পুনর্নির্মাণের কাজেও অসুবিধা সৃষ্টি করেছে। </p> <p>এদিকে তুরস্কও ভূমিকম্পের পর পুনর্গঠনের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। সিরিয়ার প্রতিবেশী তুরষ্কে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারীর ভূমিকম্পটি ভোর ৪ টার কিছু পরে সেখানে আঘাত হানে এবং ৮৫ সেকেন্ড স্থায়ী হয়। এ ছাড়াও ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৫৭০টিরও বেশি আফটারশক কেঁপে ওঠে দেশটি।</p> <p>তুরস্কের পরিবেশ ও নগরায়ন মন্ত্রী মেহমেত ওজাসেকির প্রকাশিত সর্বশেষ সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, প্রায় ৬ লাখ ৮০ হাজার বাড়ি ভেঙে পড়েছে বা বসবাস যোগ্য নয়। লাখ লাখ মানুষ আশ্রয়ের জন্য মরিয়া হয়ে রয়েছে। দেশটিতে ভূমিকম্পে প্রায় ৫১ হাজার মানুষ মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং  হাজার হাজার মানুষ এখনও নিখোঁজ। ভূমিকম্পে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বের পুরো শহরগুলো ধসে পড়ে। শহর ও এর আশেপাশের প্রদেশে ২০ হাজারের বেশি লোক মারা গেছে। এখনও শত শত ক্যাম্পে বসবাস করছে মানুষ। পরিবারগুলো পানি এবং বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারে, যা সরকার বিনামূল্যে দিয়ে থাকে। যারা বেঁচে আছেন তারা কংক্রিটের ভবনে প্রবেশ করতে ভয় পায়। কারণ ভূমিকম্পে অনেকে ধ্বংসাবশেষের নিচে আটকা পড়েছিল।</p> <p>স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী মালিক মুস্তাফা কাসাব এএফপিকে বলেছেন, ‘তিনি মনে করেন আগের স্বাভাবিক ব্যবসায় ফিরে আসতে কমপক্ষে এক বা দুই প্রজন্ম সময় লাগবে। মানুষ এখনও ভূমিকম্পের সেই মানসিক আঘাত কাটিয়ে উঠতে পারেনি এবং আর্থিকভাবেও তারা স্বচ্ছল নয়।’ </p> <p>সূত্র: আল-অ্যারাবিয়া</p>