<p>প্রশান্ত মহাসাগরে ‘এল নিনো’ নামে পরিচিত প্রাকৃতিক আবহাওয়া প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এরই মধ্যে উষ্ণ হতে থাকা পৃথিবীর তাপমাত্রা আরো বাড়বে। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বদলে যাবে পৃথিবীর স্বাভাবিক পরিবেশ।</p> <p><img alt="l" height="230" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/Untitled-2 (5).gif" style="float:left" width="213" />উষ্ণতম বছর হতে পারে ২০২৪ গত বৃহস্পতিবার মার্কিন বিজ্ঞানীরা এমন তথ্য জানিয়ে বলেছেন, এল নিনোর প্রভাবে ২০২৪ সাল বিশ্বের এ যাবৎকালের উষ্ণতম বছর হয়ে উঠতে পারে। এর জেরে বিশ্ব দেড় ডিগ্রি উষ্ণতা বৃদ্ধির মাইলফলক পেরিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বলা হয়ে থাকে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ন্ত্রণে গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রির মধ্যে সীমিত রাখতেই হবে।</p> <p>বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এল নিনোর প্রভাবে অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়ার কিছু অংশে আবহাওয়া অধিকতর শুষ্ক থাকবে। ভারতীয় এলাকায় মৌসুমি বায়ু দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।</p> <p>সাগর থেকে আসা মৌসুমি বায়ুই বর্ষার বৃষ্টিপাত বয়ে আনে। এ ছাড়া সামনের শীতে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে আবহাওয়া অধিকতর আর্দ্র থাকতে পারে। এল নিনো আফ্রিকার খরা পরিস্থিতিকে তীব্র করে তুলতে পারে। পরবর্তী বসন্ত পর্যন্ত এমন পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে। এতে জানমালের বড় ধরনের মূল্য দিতে হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।</p> <p>১৯৯৭-৯৮ সালে শক্তিশালী এল নিনোর প্রভাবে সারা বিশ্বে পাঁচ লাখ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল। প্রাণহানি ঘটেছিল ২৩ হাজার। কয়েক মাসের পর্যবেক্ষণে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন যে এল নিনো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসের প্রধান অ্যাডাম স্কাইফ বলেন, ‘আমরা কয়েক মাস ধরে এল নিনোর লক্ষণের বিষয়ে যে পূর্বাভাস দিয়ে আসছি, তা এখন দেখা যাচ্ছে। তবে তীব্রতার মধ্য দিয়ে বছরের শেষ নাগাদ এর চূড়ান্ত অবস্থা দেখতে পাব।’</p> <p>অ্যাডাম স্কাইফ বলেন, ‘আগামী বছর বৈশ্বিক তাপমাত্রা যে রেকর্ড গড়বে তা এক রকম নিশ্চিত। তবে এর তীব্রতা নির্ভর করে বছরের শেষ নাগাদ এল নিনো কতটা বড় আকার ধারণ করে তার ওপর।’ বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, ২০১৬ সালের পর ২০২৪ সাল হতে পারে বিশ্বের নতুন উষ্ণতম বছর।</p> <p><strong>উষ্ণতম বছর হতে পারে ২০২৪ ভারতের সম্ভাব্য পরিস্থিতি </strong></p> <p><img alt="l" height="522" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/Untitled-4 (6).gif" style="float:left" width="398" />ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর পূর্বাভাস দিয়েছে, এল নিনোর প্রভাবে এ বছর ভারতে মৌসুমি বায়ু দুর্বল থাকবে। সেখানে মৌসুমি বৃষ্টির ১৬-১৭ শতাংশ হয়ে থাকে জুনে। এটি বর্ষাকালীন শস্যের জন্য বেশ উপকারী। এবার এই মৌসুমি বৃষ্টি বিলম্বিত হতে পারে। একই সঙ্গে ভারতের বেশির ভাগ অঞ্চলে অধিকতর শুষ্কতা বিরাজ করতে পারে। বিশেষ করে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম বৃষ্টি হতে পারে। এতে শস্যহানি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।</p> <p>ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রধান মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র অবশ্য বলেছেন, পাঁচটি ডায়নামিক্যাল ওয়েদার মডেল পর্যালোচনা করে তাঁরা দেখেছেন যে পরবর্তী চার মাসে স্বাভাবিক মৌসুমি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে এল নিনোর প্রভাব পড়ার মতো কিছু দেখা যায়নি।</p> <p><strong>এল নিনো ও লা নিনা  </strong></p> <p>এল নিনো স্প্যানিশ শব্দ, যার অর্থ ‘ছোট বালক’। এল নিনো বলতে প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণ স্রোতকে বোঝানো হয়। এই স্রোতের প্রভাবেই উষ্ণ হয় দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূল। এ সময় দক্ষিণ গোলার্ধে পূবালী বায়ুপ্রবাহ বদলে যায়। প্রতি দুই থেকে সাত বছর পর পর এল নিনো পরিস্থিতি তৈরি হয়। এতে বিপুল পরিমাণ তাপ উপকূলীয় এলাকার মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড়ে। এর স্থায়িত্ব হয় এক থেকে দেড় বছর। এল নিনোর বিরূপ প্রভাবে স্বাভাবিক বায়ুপ্রবাহ কমে যায়। বাতাসহীন গুমোট পরিস্থিতি বিরাজ করে। কখনো বা বাতাস উল্টো দিকে বইতে থাকে। এল নিনোর বিপরীত আবহাওয়া পরিস্থিতি হলো ‘লা নিনা’ যার অর্থ ছোট মেয়ে। এর প্রভাবে পূবালী বাতাসের গতি বেড়ে যায়। ভারি বৃষ্টি এবং বন্যা হয়ে থাকে। </p> <p>সূত্র : বিবিসি, টাইমস অব ইন্ডিয়া ও মিন্ট</p> <p><br />  </p>