বিক্ষোভকারীদের হঠাতে সেনাসদস্যদের তৎপরতা। ছবি: বিবিসি
শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের এমপিদের ভোটে প্রেসিডেন্ট পদে রনিল বিক্রমাসিংহে নির্বাচিত হওয়ার পরদিনই দেশটিতে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন দীনেশ গুণাবর্ধনে।
শুক্রবার রনিল বিক্রমাসিংহে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন। এরপর শপথ নেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগ ও শপথ অনুষ্ঠান আয়োজনের আগেই প্রেসিডেন্ট বিক্রমাসিংহে বিক্ষোভ দমনে কোনো সতর্কতাবাণী ছাড়াই পুলিশ বাহিনীকে দিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হন।
বিজ্ঞাপন
খুব ভোরে প্রেসিডেন্টের সচিবালয়সংলগ্ন এলাকায় জমায়েত হয়ে থাকা বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পরই বিক্ষোভকারীদের একাংশ থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছিল, রনিল বিক্রমাসিংহে রাজাপক্ষেদের চেয়েও ধূর্ত। তিনি বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যেতে পারেন। বিক্ষোভকারীদের ওই আশঙ্কা সত্যি হতে কয়েক ঘণ্টার বেশি সময় লাগেনি। ভোরের আলো ফোটার আগেই প্রেসিডেন্টের নির্দেশে এক দল পুলিশ লাঠি হাতে বিক্ষোভকারীদের ওপর
ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং সব ব্যারিকেড তুলে দেয়। বিক্ষোভকারীদের হটাতে সামরিক বাহিনী ও পুলিশের বিশেষ টাস্কফোর্সের কমান্ডোরা লাঠিচার্জ করেছেন। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বিক্রমাসিংহের এমন পদক্ষেপ দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়িয়ে দেবে।
বিক্ষোভকারীদের প্রেসিডেন্টের সচিবালয়ের সামনে থেকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে শ্রীলঙ্কা পুলিশের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। ওই বিবৃতিতে বিক্ষোভকারীদের অবস্থানকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়ে ৯ জনকে গ্রপ্তোরের খবর দেওয়া হয়। পুলিশের লাঠির আঘাতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে এএফপি। প্রেসিডেন্টের ভবনের বাইরে থেকেও বিক্ষোভকারীদের ব্যারিকেড ও তাঁবু সরিয়ে দেয় কয়েক শ সেনা। ওই সময় বাসভবনের ভেতরে রয়ে যাওয়া অবশষ্টি বিক্ষোভকারীদের লাঠিপেটা করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
ওই ঘটনার পর কলম্বোতে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের প্রধান জুলি চুং জানান, তাঁরা পুলিশি অভিযানের ব্যাপারে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। টুইটারে তিনি বলেন, ‘আমরা কর্তৃপক্ষকে শানি্ত বজায় রেখে আহতদের চিকিৎসা দিতে আহ্বান জানাচ্ছি। ' ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গুণাবর্ধনে নিয়োগ পাওয়ার আগেই এ অভিযানের ঘটনা ঘটে।
এখনো রাজধানীতে রয়ে যাওয়া বিক্ষোভকারীরা বিক্রমাসিংহের পদত্যাগ দাবি করছে। তাদের অভিযোগ, দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তারী রাজাপক্ষে পরিবারকে সুরক্ষা দিচ্ছেন বিক্রমাসিংহে।
প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়া গুণাবর্ধনে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজপক্ষে পরিবারের মিত্র। রনিল বিক্রমাসিংহেরও স্কুলের সহপাঠী তিনি। ৭৩ বছর বয়সী গুণাবর্ধনে নিজেও বিশষ্টি রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। রাজনৈতিক মতাদর্শে পার্থক্য থাকা পুরনো
সহপাঠী প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের গুণাবর্ধনে বলেন, ‘আমাদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, কিন্তু দেশের প্রধান সমস্যাকে সামাল দিতে জোট বাধার মতো যথষ্টে বন্ধুত্বও রয়েছে। ’
রনিল বিক্রমাসিংহের উপস্থিতিতেই শুক্রবার শপথ নেন শাসকদল পোডুজানা পেরামুনার (এসএলপিপি) সাবেক এই মন্ত্রী। এ সময় আইন প্রণেতা ও কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সেখানে ইউনিফরম পরা সামরিক কর্মকর্তাদের উপস্থিতি দেখা গেছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ জুলাই শ্রীলঙ্কার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন রনিল বিক্রমাসিংহে। গত ২০ জুলাই অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও জয়ী হন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন প্রধানমন্ত্রী পেল শ্রীলঙ্কা।
গুণাবর্ধনে ছাড়াও মন্ত্রিসভার জন্য আরো ১৭ জন মন্ত্রী শপথ নিয়েছেন শুক্রবার। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা আলি সাবরি। তাঁকে এবার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী গুণাবর্ধনেকে বাড়তি হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনপ্রশাসন, প্রাদেশিক কাউন্সিল ও স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রেসিডেন্ট বিক্রমাসিংহের হাতেই থাকছে। সূত্র : এএফপি, পিটিআই, রয়টার্স