প্রয়াত পিতাকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন উদ্ধব ঠাকরে। ২০১৫ সালের ফাইল ছবি : গেটি ইমেজেস/বিবিসি
চরম রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখে ভারতের মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী শিবসেনা নেতা উদ্ধব ঠাকরে বুধবার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। এর পেছনে ভূমিকা রেখেছে দলীয় নেতা তথা বিধায়কদের একাংশের বিদ্রোহের ঘটনা। দলের বেশির ভাগ আইনপ্রণেতাই সরে দাঁড়িয়েছেন উদ্ধবের পাশ থেকে। অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) ও কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর জোট বাঁধা নিয়ে।
বিজ্ঞাপন
বিদ্রোহীদের দাবি, উদ্ধব
ঠাকরে জোট বাঁধতে গিয়ে শিবসেনার মূল মতাদর্শ ‘হিন্দু জাতীয়তাবাদ’ থেকে সরে গিয়েছেন। ৩৯ আইন প্রণেতার এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছেন একনাথ শিন্ডে।
বিজেপির সঙ্গে শিবসেনার আবার জোট বাঁধার বিষয়টি অনেকটাই গোলমেলে। কারণ ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে জোটবদ্ধই ছিল দল দুটি। কিন্তু ২০১৯ সালে মুখ্যমন্ত্রীর পদকে কেন্দ্র করে ভাঙন ধরে বন্ধুত্বে।
সব মিলিয়ে শিবসেনা দল হিসেবে এখন বিপাকে। একদিকে মধ্যপন্থী দলের সঙ্গে জোট বাঁধার প্রসঙ্গ তুলে তাদের হিন্দু জাতীয়তাবাদ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। অন্যদিকে যার জন্য এত কিছু, সেই সরকার থেকেও বেরিয়ে যেতে হয়েছে দলটিকে।
এখন প্রশ্ন উঠছে শিবসেনার ভবিষ্যৎ নিয়ে। এর উত্তর হয়তো মিলতে পারে ইতিহাসের পাতায়।
শিবসেনা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৬ সালে উদ্ধব ঠাকরের বাবা বাল ঠাকরের হাতে। দলটির জন্য বিদ্রোহ নতুন কিছু নয়। এর আগেও ১৯৯১ সালে একবার ভাঙন ধরেছিল। সে সময় জ্যেষ্ঠ নেতা ছগন ভুজবল কিছু নেতা ও কর্মী নিয়ে দল ছেড়ে চলে যান। ২০০৫ সালেও একই ধরনের ঘটনা ঘটে। নেতা নারায়ণ রানের সঙ্গে মিলে বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতা দল ছাড়েন। পরিবারের ভেতরে থেকেও আঘাত এসেছিল। ২০০৬ সালে উদ্ধবের আত্মীয় রাজ অনেক নেতাকর্মী নিয়ে দলত্যাগ করেছিলেন। সে সবই সামলে নেওয়া গিয়েছিল শেষ পর্যন্ত।
কিন্তু এবারে বড় মাপের হোঁচট খেয়েছে শিবসেনা। বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের ধাক্কায় দলটির ভেতর হতাশা দেখা দিতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুহাস পালশিকারের মতে, দলের আন্তঃকোন্দল ‘শিবসেনার পতনের ঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছে। ’
শিবসেনাদের জন্য এখন নিজেদের ঘাঁটিতে উদ্দীপনা জোগানো কঠিন হবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ঠাকরেদের ব্যাপারে জানাশোনা ভালো, এমন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাংবাদিক বলেন, সেনা ‘মারাত্মক সমস্যার’ মধ্যে রয়েছে এবং এর প্রধানকে এখন ‘দল গোড়া থেকে ঢেলে সাজাতে হবে। ’
এখন একনাথ শিন্ডে মহারাষ্ট্রের নতুন মুখ্যমন্ত্রী হওয়ায় সমস্যা আরো বাড়তে পারে শিবসেনার জন্য। স্থানীয় কর্মীরা যদি বিদ্রোহীদের সমর্থন দেওয়া শুরু করে, তাহলে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে উঠবে উদ্ধব ঠাকরের জন্য।
বিদ্রোহের ঘটনা দলটির কাঠামো ও তৃণমূল পর্যায়ে কী পরিমাণ ক্ষতি করেছে তা এখনো অস্পষ্ট। সোলাপুর জেলার শিবসেনা প্রধান গুরুশান্ত ধাত্তাগাওঙ্কার বলেছেন, কিছু জেলা ও শহরে সেনা কর্মীরা বিদ্রোহীদের প্রতি আনুগত্য দেখানো শুরু করেছে।
গুরুশান্তের মতে, দল আগের প্রতিটি প্রতিবন্ধকতার পর বেশ শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এতে ভূমিকা রেখেছিল বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে দলের ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি। কিন্তু এখন যেহেতু বিজেপির সঙ্গে ওই জোট নেই, তাই এটি বড় চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে দলের জন্য।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক পালশিকার বলছেন, ঠাকরে পরিবার ছাড়া দল টিকবে না। অন্যদিকে, পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাল ঠাকরের আদর্শ অনুসারে দল পুনর্গঠনে উদ্ধব ও তার ছেলে আদিত্য ঠাকরের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিতে হবে। সূত্র : বিবিসি।