করোনাভাইরাসের টিকা সংক্রান্ত কূটনীতির অংশ হিসেবে ভারত প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রগুলোতে বিনা পয়সায় টিকা পাঠানোর যে কর্মসূচিতে হাত দিয়েছে, তার আওতায় গতকাল বুধবার ভুটান ও মালদ্বীপে বেশ কয়েক লাখ ডোজ কোভিশিল্ড পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ, নেপাল, মিয়ানমার ও সেশেলসে টিকা 'উপহার' পাঠানো হবে এর পরের ধাপেই, ঢাকাতে সেই কনসাইনমেন্ট নামার কথা রয়েছে।
ভারত সরকার এই উদ্যোগের নাম দিয়েছে 'ভ্যাক্সিন মৈত্রী', তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন এর মাধ্যমে অন্তত দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে চীনের তৈরি টিকা সিনোভ্যাক বা সিনোফার্মকে টেক্কা দেওয়াও ভারতের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য।
বুধবার সকালে ভুটানের পারো বিমানবন্দরে গিয়ে নামে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি এএন-থার্টি টু বিমান, যা বহন করে নিয়ে যায় দেড় লাখ ডোজ 'মেইড-ইন-ইন্ডিয়া' করোনা টিকা।
বিমানবন্দরেই এক অনুষ্ঠানে থিম্পুতে ভারতের রাষ্ট্রদূত রুচিরা কাম্বোজ সেই উপহারের বাক্স তুলে দেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিংয়ের হাতে।
এর কিছুক্ষণ পরেই মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে অবতরণ করে ভারতীয় এয়ারলাইন স্পাইসজেটের একটি বিমান, যা সে দেশের নাগরিকদের জন্য বয়ে নিয়ে যায় এক লাখ ডোজ টিকা।
ঠিক দুসপ্তাহ আগে শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছিলেন, "করোনা আসলে বন্ধু দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার আরো দিগন্ত খুলে দিয়েছে, আর 'নেইবারহুড ফার্স্ট' নীতির অংশ হিসেবে ভারত এখানেও প্রতিবেশীদেরই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।"
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে উদ্ধৃত করে তিনি কলম্বোতে আরও বলেন, টিকার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে ভারত তাদের একটা কর্তব্য হিসেবেই দেখছে।
গতকাল বুধবার প্রথম ব্যাচে ঢাকাতেও টিকা উপহার পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল ভারতের, কিন্তু কিছু পদ্ধতিগত জটিলতায় তাতে ২৪ ঘণ্টার মতো দেরি হচ্ছে।
বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ ডোজ
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই আপাতত সবচেয়ে বেশি পরিমাণে উপহার পাচ্ছে, যার পরিমাণ হবে অন্তত ২০ লাখ ডোজ।
বাংলাদেশ, নেপাল, মিয়ানমার ও সেশেলসে 'ভ্যাক্সিন মৈত্রী'র উপহার যাচ্ছে দ্বিতীয় ব্যাচেই।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে যে, বাংলাদেশে যে টিকা এখন পাঠানো হচ্ছে তার পুরোটাই হবে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত কোভিশিল্ড যা তৈরি করেছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট।
এ ছাড়া ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও মরিশাস থেকে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র মিললেই ওই তিনটি দেশেও টিকা উপহার পাঠানো হবে।
ভারতে অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূত ব্যারি ও'ফ্যারেল গত মাসেই বলেছিলেন, "পৃথিবীর বহু দেশই হয়তো কোভিড টিকা উদ্ভাবনের চেষ্টা করছে, তবে দুনিয়ার সব দেশের কোটি কোটি মানুষের টিকার প্রয়োজন মেটানোর মতো ম্যানুফ্যাকচারিং ক্যাপাসিটি বা উৎপাদন ক্ষমতা আছে একটি দেশেরই, আর সেটি হল ভারত।"
"আমি তো বলব এই খাতে ভারতের যে সামর্থ্য আছে, তাতে এখন তাদের ঝলমল করার সময়", বলেন অস্ট্রেলিয়ার হাই কমিশনার।
দিল্লিতে সিনিয়র কূটনৈতিক বিশ্লেষক জ্যোতি মালহোত্রা জানান, "ভারত এদেশের বিভিন্ন নির্মাতা সংস্থার কাছ থেকে প্রায় এক কোটি ডোজ টিকা কেনার পরিকল্পনা করেছে - আর পাকিস্তান ছাড়া এই অঞ্চলের সব দেশকে তা উপহার দিতে যাচ্ছে।"
"পাকিস্তান বাদ, কারণ প্রায় দুবছর হতে চলল ভারতের সঙ্গে সরকারি স্তরে তাদের প্রায় কোনও সম্পর্ক নেই।"
"কিন্তু বাকি সব দেশে নিজস্ব টিকা পাঠিয়ে চীনের তৈরি সিনোভ্যাক বা সিনোফার্মকে পেছনে ফেলাও ভারতের লক্ষ্য, কারণ চীনও কিন্তু তাদের ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেটগুলোকে সারা দুনিয়ায় প্রভাব বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে।"
এদিকে বাংলাদেশ-সহ গ্রহীতা দেশগুলোতে এই টিকা উপহার পাঠানোর আগে সে সব দেশের ইমিউনাইজেশন ম্যানেজার, কোল্ড চেইন কর্মকর্তা-সহ সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের কর্মীদের আজ ও কাল, এই দুদিন ধরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলেও ভারত জানিয়েছে। বিবিসি বাংলা।
মন্তব্য