<p>পৃথিবীর বুকে আরেকটি স্বাধীন রাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে। স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে দেশটিতে। পাপুয়া নিউ গিনি (পিএনজি) থেকে বিচ্ছিন্ন হতে স্বাধীনতার পক্ষে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বুগেনভিলে দ্বীপে। গণভোটের ফলাফলে বিশ্বের নবীন স্বাধীন রাষ্ট্রের পক্ষে সাধারণ জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন; যা দ্বীপটির স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বলে ধারণা করা হচ্ছে।</p> <p>বুধবার বুগেনভিলে গণভোট কমিশনের চেয়ারম্যান বার্টি আহারন নির্বাচনী ফল ঘোষণা করেছেন। এতে দেখা গেছে, এই দ্বীপের ১ লাখ ৮১ হাজার ৬৭ ভোটারের মধ্যে স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দিয়েছেন প্রায় ৯৮ শতাংশ ভোটার। অন্যদিকে, অধিক স্বায়ত্তশাসন নিয়ে পাপুয়া নিউ গিনির সঙ্গে থাকার পক্ষে ভোট দিয়েছেন মাত্র ৩ হাজার ৪৩ জন ভোটার।</p> <p>বুগেনভিলের স্বাধীনতার জন্য গণভোটের এই ফলাফল এখন পাপুয়া নিউ গিনির জাতীয় সংসদে পাস হতে হবে। তবে সংসদে গণভোটের এই ফলাফল পাস হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কিন্তু গণভোটের ফলাফল পাপুয়া নিউ গিনি কর্তৃপক্ষের ওপর বুগেনভিলেকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে চাপ সৃষ্টি করবে।</p> <p>ভোট স্বাধীনতার পক্ষে গেলেও সঙ্গে সঙ্গে সেটি কার্যকর হবে না। এটি আদতে চিহ্নিত হতে পারে বুগেনভিলের স্বাধীনতার পথে প্রথম ধাপ হিসেবে। </p> <p>তামা ও সোনার মতো প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ দ্বীপটি আলাদা হয়ে গেলে অন্যান্য প্রদেশও অধিকতর স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতা চাইতে পারে- এই ভয়েই প্রশান্ত পাপুয়া নিউ গিনি কর্তৃপক্ষ বুগেনভিলের স্বাধীনতার বিরোধিতা করছে বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের। দ্বীপপুঞ্জটির ভোটের দিকে আমেরিকা এবং চীন তাকিয়ে আছে বলে খবরে জানিয়েছে বিবিসি।</p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/Bougainville2.jpg" style="height:450px; width:650px" /></p> <p>সোলোমন দ্বীপপুঞ্জ ও কিরিবাতির পাশাপাশি সম্প্রতি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর বুগেনভিলের সঙ্গেও কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে মনোযোগী হয়েছে চীন। দ্বীপপুঞ্জটির স্বাধীনতার প্রশ্নে এই গণভোট আয়োজনে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও জাপানের পাশাপাশি আমেরিকাও টাকা ঢেলেছে বলে জানা যাচ্ছে।</p> <p>ঐতিহাসিক এই গণভোট বোগেইনভিলের বিদ্রোহী যোদ্ধা, পাপুয়া নিউ গিনির সরকারি বাহিনী ও বিদেশি যোদ্ধাদের সংঘাত সংঘর্ষের পর ২০০১ সালে স্বাক্ষরিত একটি শান্তি চুক্তির অংশ। এক দশকের বেশি সময় ধরে দেশটিতে ত্রিমুখী এই সংঘাতে দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ অর্থাৎ ২০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ১৯৯৮ সালে এই সংঘাতের অবসানের পর ২০০১ সালে ওই শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।</p> <p>বোগেইনভিলের বুকা দ্বীপে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে গণভোট কমিশনের চেয়ারম্যান বার্টি আহারন সব পক্ষকে নির্বাচনী ফলাফল মেনে স্বীকৃতি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সেখানকার বাসিন্দাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এই ভোট আপনার শান্তি, আপনার ইতিহাস এবং আপনার ভবিষ্যৎ। অস্ত্রের চেয়ে যে কলম শক্তিশালী সেটা এই ভোট দেখিয়েছে। গন্তব্যের উদ্দেশে চলমান যাত্রার একটি অংশ এই গণভোট।</p> <p>গত ২৩ নভেম্বর এবং ৭ ডিসেম্বর বুগেনভিলের স্বাধীনতা প্রশ্নে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় এই দ্বীপজুড়ে বুগেনভিলের পতাকা হাতে হাজারও মানুষ ভোটকেন্দ্রে যান এবং স্বাধীনতার পক্ষে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন।</p> <p>বুগেনভিলেতে সংঘাত শুরু হয় ১৯৮০ সালের শেষর দিকে। এই সময় দ্বীপের পানগুনা এলাকায় বিশালাকারের একটি তামার খনি ঘিরে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। এই খনি থেকে উত্তোলিত তামার বৃহৎ একটি অংশ রপ্তানি করে পাপুয়া নিউ গিনি। কিন্তু বুগেনভিলের অনেকেই মনে করেন এই রপ্তানি আয়ের কোনো সুবিধাই তারা পান না। সুবিধা না পেলেও খনির উত্তোলন কাজ তাদের প্রথাগত সংস্কৃতি ও নাগরিক জীবন-যাপনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।</p> <p>ওই সংঘাতের পর থেকে এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে খনিটি। অনেকেই মনে করেন, এই খনি বুগেনভিলের রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস হতে পারে। যে কারণে তারা দ্বীপটির স্বাধীনতা চান।</p> <p>১৮শ শতকে ফরাসি এক অনুসন্ধানকারী দ্বীপপুঞ্জটির খোঁজ পান। ১৯ শতকের শেষভাগে এটি পরিণত হয় জার্মান উপনিবেশে, নাম পায় জার্মান নিউগিনি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় অস্ট্রেলিয়া এর দখল নেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন কিছু সময় জাপানের হাতে থাকলেও ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত মূলত অস্ট্রেলীয়রাই ছিল ‘বুগেনভিলের’ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ। ঔপনিবেশিক শাসনে থাকার সময় এই দ্বীপপুঞ্জটি সব সময়ই সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। জার্মানরা তাদের শাসন শুরুর ২১ বছর পর ১৯০৫ সালে প্রথম বুগেনভিলে প্রশাসনিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে।</p> <p>সূত্র : আলজাজিরা</p>