রবিবার । ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯। ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪২৬। ১৭ রবিউস সানি
সংকেত মাত্র ১০ টাকার একটি নোট। আর তাতেই দেশজুড়ে চলে কোটি কোটি টাকার কালো টাকার ব্যবসা! ১০ টাকার নোটের নম্বর জানিয়ে দেওয়া হয় যার কাছে টাকা পৌঁছাবে। যে টাকা নেবে সেও ফিরতি ১০ টাকার নোটের নম্বর এ প্রান্তে জানিয়ে রাখে। এবার যে লোকটি ব্যাগে করে টাকা নিয়ে যাবে, সে প্রথমে গিয়েই ১০ টাকার নোটটি গ্রহীতার হাতে দেবে। সে মিলিয়ে নেবে যে নম্বর বলা হয়েছিল সেই নম্বরের নোট এসেছে কিনা। নিজেও সেই বলে রাখা নম্বরের ১০ টাকা ব্যাগ নিয়ে আসা লোকটির হাতে দেবে। তার পরেই টাকার থলি হস্তান্তর হবে।
এভাবেই কালো টাকা যাতায়াত কলকাতাজুড়ে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তেও সংকেত বলতে ওই ১০ টাকাই। এছাড়াও আরো কিছু কিছু সংকেত থাকে, যেমন টাকাকে বলা হয় ‘সামান’। যে টাকার থলি নিয়ে ছুটবে তাকেও দুই পক্ষ থেকেই মোটা টাকা কমিশন দেওয়া হয়। যদি ধরা পড়ে যায়, ঘুরপথে তাকে ছাড়িয়ে আনার দায়িত্ব ওই দুই পক্ষেরই থাকে। কালো টাকার জগতে এ এক আশ্চর্য ‘সততা’!
গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট, শুল্ক গোয়েন্দা দপ্তর- এরা সবাই সারাদিনই এদের খোঁজে থাকে। ধরাও পড়ে, কিন্তু কালো টাকার লেনদেনের বৃত্ত কমে না। বড়বাজারসহ কলকাতার বিভিন্ন ব্যবসায়ী কেন্দ্রের বড় ব্যবসায়ীরা ‘লক্ষ্মী’ লেনদেন এভাবেই করে। ব্যাংকের অজস্র পাসবই থাকলেও সেখানে ব্যবসা সবসময়ই খারাপ চলে। মাঝখান থেকে লাভের টাকা ঘরে উঠে আসে। এই টাকা যে নিয়ে যাবে, সে নিজেও জানে না থার্মোকলের বাক্সে কিংবা চটের থলিতে, চামড়ার ব্যাগে কী বস্তু পাঠানো হচ্ছে। তাকে বলে দেওয়া হয় সাবধানে নিয়ে যেও, পড়ে গেলে ভেঙে যাবে! হাওলার ব্যবসায়ীরা রসিকতা করে তাদের মহলে একটা কথা বলে। তা হলো, ১০ টাকা দিয়ে কোটি টাকা নিই!
লোকসভা নির্বাচনের সময় বহু কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছিল কলকাতা থেকে। গত চার মাসে কখনো ৬০ লাখ, ৩০ লাখ, ৫০ লাখ উদ্ধার হয়েছে। মঙ্গলবার বড়বাজার থেকে উদ্ধার হয়েছে ১ কোটি টাকা। সঞ্জিতকুমার সিং নামে পাটনার এক বাসিন্দা বড়বাজার থানা এলাকার ত্রিকোণ পার্কের কাছে পৌঁছান। হাওড়া থেকে ট্যাক্সি নিয়ে তিনি এসেছিলেন। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ তার ব্যাগ তল্লাশি করতেই ৫০০ ও ২০০০ টাকার নতুন নোটে ১ কোটি টাকা উদ্ধার হয়। টাকা কার, কোথায় যাচ্ছে তার উত্তর জানা নেই। কেন না, ওই ব্যাগে যে টাকা রয়েছে ধরা পড়ার পর সে নিজেও জানল। পুলিশকে জানিয়েছে, ওই ব্যাগে দামি কাপড় ঠাসা আছে, এমনই সে জানত!
কালো টাকার এই দাপটে ছোট ব্যবসায়ীদের বাজার সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে। কালো টাকার নগদে কেনা-বেচায় একদিকে ব্যাংক অন্ধকারে, অন্যদিকে আয়কর দপ্তরও অন্ধকারে। মাঝখান থেকে একেবারে বিনিময় প্রথার মতো টাকা ঘুরে যাচ্ছে বাজারে। ১০ হাজার টাকার জিনিস বিক্রি হচ্ছে ১৫ হাজারে। লাভের সেই ৫ হাজার টাকা ঘুরে যাচ্ছে আরেক ব্যবসায়ীর হাতে। ওই টাকা সে খাটাচ্ছে বাজারে। পরে সুদসহ শোধও দিচ্ছে নগদেই। তাহলে টাকারও ঘোরাফেরার এ এক অদৃশ্য বড় বাজার!
গোয়েন্দারা সারাদিনই সোর্স মারফত খবর নিচ্ছেন কত পেটি কোন ঘর থেকে বের হলো। অপরাধ জগতের ভাষায় কোটি টাকাকে বলা হয় ‘এক খোকা’। খোকাকে যারা কোলেপিঠে করে এমাথা ওমাথা পৌঁছে দেয় তারাও বড় খেলোয়াড়।
সূত্র: আজকাল
মন্তব্য